গণবাণী ডট কম:
একযুগের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বাংলাদেশে অন্যতম বড় দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ৪১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করলো। এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সময় বা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে দলটির নেতারা বলছেন। সারাদেশে দলটির নেতা-কর্মিদের একটা বড় অংশ নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। বিএনপি অভ্যন্তরীণ কোন্দলও অনেক সময় সামনে এসেছে। দলের নেতারা মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মিদের সক্রিয় করে দল পুনর্গঠনের উদ্যোগের কথা বলে আসছেন। কিন্তু সেই উদ্যোগে তেমন কোন অগ্রগতি বা সাফল্য দেখছেন না বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মিদের অনেকে। বিবিসির প্রতিবেদন।
এদিকে পহেলা সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবাষিকীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নেতারা হতাশা কাটিয়ে সাংগঠনিক ভিত্তি শক্তিশালী করার বিষয়ে জোর দেয়ার কথা বলেছেন।
মাঠ পর্যায়ে হতাশা থাকছেই।
সেই ২০১৪ সালে ৫ই জানুযারির নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে দলটি ব্যর্থ হয়েছিল। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর বিএনপির কৌশল নিয়ে দলের ভিতরে অনেক প্রশ্ন ওঠে। সেই নির্বাচনের সংসদকে অবৈধ বলে অভিহিত করার পরও বিএনপি তাতে যোগ দিয়েছে। এসব কৌশলের কারণে মাঠ পর্যায়ে দলের নেতা-কর্মিদের একটা বড় অংশ হতাশা থেকে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন বলে তাদের অনেকে বলেছেন।
বিএনপির নেতৃত্বের প্রতি মাঠ পর্যায়ের ক্ষোভ
দলটির শীর্ষ নেত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় সাজা নিয়ে জেলে রয়েছেন দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে। তাঁকে মুক্ত করতে বিএনপি কোন আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। দলটির নেতা-কর্মিদের অনেকের মাঝে এনিয়েই তাদের নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ রয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে নির্বাসনে রয়েছেন। দেশে তাঁর বিরুদ্ধে সাজা হয়ে রয়েছে।
জিয়া পরিবারের বাইরে দেশে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে যে সদস্যরা রয়েছেন, তারা তারেক রহমানের সাথে আলোচনা করেই সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কিন্তু স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কেউ দলের ভেতরে প্রশ্ন ওঠা বা সমালোচনার ভয়ে নিজে থেকে কোন উদ্যোগ নিয়ে নেন না বলে তাদের মাঝে অভিযোগ রয়েছে।
“সঠিক নেতৃত্ব যদি কর্মিরা পেতো,তাহলে দল দ্রুত এগিয়ে যেতো। যারা নিবেদিত, যারা নির্যাতিত, যারা ত্যাগী- এমন নেতৃত্ব যদি আমরা দিতে পারতাম, তাহলে দল এবং বাংলাদেশের মানুষও এর সুফল পেতো। এটা করতে পারলে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় লাগবে না।”
বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করার সময় পার হয়ে গেছে। মাঠের নেতা কর্মিদের সক্রিয় করতে দল পুনর্গঠনের উদ্যোগেও তেমন কোন অগ্রগতি হচ্ছে না বলে নেতা কর্মিরা মনে করছেন। সারাদেশে বিএনপি ৭৫টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির মধ্যে মাত্র ২৩ জেলায় আহবায়ক কমিটি করা গেছে। বাকি জেলাগুলোতে অনেক বছর আগে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া কমিটিই রয়েছে। তবে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য হচ্ছে, তাঁর ভাষায় কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগের এই শাসনের মাঝে সাধ্য অনুযায়ী তারা এগুনোর চেষ্টা করছেন।
“সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রকে সরকার ব্যবহার করছে। সেটাকে মোকাবেলা করে বিএনপি কিন্তু এখনও পর্যন্ত টিকে আছে। একটা এমন পরিস্থিতি যে, আজকে দেশের অনেক জায়গায় আমাদের দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কর্মসূচি পালনে সরকার এবং পুলিশ বাধা দিয়েছে।”
“বিভিন্ন জায়গায় দলের কাউন্সিল করার জন্যও মিলনায়তন পর্যন্ত আমাদের দেয়া হচ্ছে না। আমরা এরই মাঝে দল পুনর্গঠন করছি।” মি: আলমগীর বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন যে, অনেক নির্যাতনের পরও তাদের দলের উল্লেখযোগ্য কেউ দল ত্যাগ করে যাননি। তবে বিএনপির যে বড় জনসমর্থন রয়েছে, সেটাকে দলটির সব পর্যায়ের নেতা কর্মিরাই এখনও তাদের টিকে থাকার ভরসার জায়গা হিসেবে দেখেন।
বিএনপি নেতাদের অনেকে মনে করেন, তাদের জনসমর্থন রয়েছে ঠিকই। কিন্তু বাংলাদেশের অতীতে অনেক সময় যে ধরণের সহিংস আন্দোলন হয়েছে, এখন তেমন কর্মকান্ডে মানুষের সমর্থন পাওয়া যাবে না। এছাড়া সরকারের কঠোর অবস্থানের সামনে বিএনপি সেভাবে দাঁড়াতেও পারবে না।
সেজন্য দলটি সে ধরণের কোন কর্মসূচির ডাক দিয়ে ব্যর্থতার দায় নিতে চায় না বলে মনে হয়েছে।
বিএনপি নেতারা এখন আন্দোলনের ইস্যু নিয়েও চিন্তিত। তাদের অনেকে বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির একক দাবি নিয়ে আন্দোলনে মানুষকে সম্পৃক্ত করা সহজ নয়। সেজন্য তারা এখন মানবাধিকার এবং দুর্নীতির বিষয়সহ সামাজিক অনেক ইস্যুকে সামনে আনতে চাইছেন। এসব ইস্যুতে অনেক সময় কোন কর্মসূচি নেয়ার ক্ষেত্রে দলের ব্যানার ব্যবহার না করার চিন্তাও দলটিতে রয়েছে।
অবশ্য বিএনপির নেতারা বলছেন, দল কৌশল যাই নিক না কেন, নেতা-কর্মিরা সক্রিয় না হলে কোন ফল আসবে না বলে তারা মনে করেন।
আন্দোলন আরো বেগবান হবে: মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে আমাদের আন্দোলন চলছে এবং তা আরো বেগবান হবে।’ ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রবিবার দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে এ কথা বলেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে একটি মিথ্যা বানোয়াট মামলায় অন্যায়ভাবে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে আটকে রাখা হয়েছে। সারাদেশে নেতাকর্মীদেরও হয়রানি করা হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘সারাদেশে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনেও বাধা দেওয়া হচ্ছে। আজ মানুষের মত প্রকাশ করার অধিকার নেই। সরকার বিরোধী রাজনীতি ও ভিন্ন মতকে সরকার নিশ্চিহ্ন করতে চায়। ভিন্ন মতকে দমনের জন্য যা যা করা দরকার সবই এ সরকার করে চলেছে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।