গণবাণী ডট কম:
বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার বা প্রকোপ কমে আসায় বিপদ কেটে যাচ্ছে বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারি হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৮৩ জন ডেঙ্গু রোগী দেশটির বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সপ্তাহ খানেক আগের তুলনায় এই সংখ্যা অনেক কম বলে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন।
তবে তারা বলেছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবস্থাগুলো অব্যাহত রাখা না হলে আবার এর প্রকোপ বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। বাংলাদেশে এখন থেকে সারা বছরই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করাসহ ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবস্থাগুলো বহাল রাখতে হবে বলে তারা মনে করেন।
দেশে এবার গত অগাস্ট মাসে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল।এডিস মশাবাহিত এই রোগের প্রকোপ এমন অবস্থায় গিয়েছিল যে, সরকারি হিসাবেই অগাস্টের প্রথম দুই সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি।এখন সেপ্টেম্বরের শুরুতে সেই হার অনেক কম দেখা যাচ্ছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলছিলেন, এখন ডেঙ্গু নিয়ে বিপদ কেটে যাচ্ছে বলে তারা মনে করছেন। ”যদি আমরা অগাস্ট মাসের কেসের সংখ্যা দেখি, দ্বিতীয় সপ্তাহে এটা সবচেয়ে বেশি ছিল এবং এরপর থেকেই এটা নামতে শুরু করেছে। এটা কিন্তু বেশ ধারাবাহিকভাবেই নামছে। সে কারণে আমরা আশঙ্কা করছি না যে, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আবার বৃদ্ধি পাবে।” বলছিলেন অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা।
তবে আগের বছরগুলো পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে সেপ্টেম্বর মাসেই দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি ছিল। আর এবার সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু প্রকোপ কমছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক কবিরুল বাশার মনে করেন, এবার ডেঙ্গুর প্রকোপটা আগেই বেড়ে গিয়েছিল। সেই প্রেক্ষাপটে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করাসহ প্রতিরোধমূলক বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকোপটা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, এখন আক্রান্তের সংখ্যা কমে এলেও সেই সংখ্যাটাও আগের বছরগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। ”আসলে প্রতিটা রোগের একটি বছরে বা সিজনে একটা পিক সময় থাকে। সেই পিকটা আমরা ঈদের আগে পার করেছি। এখন সেটা নীচের দিকে যাবে। এই যে কমছে, সেই কমাটাও যদি দেখেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় রোগীর সংখ্যায় কিন্তু সেটা বেশি।” বলছেন অধ্যাপক কবিরুল বাশার।
অগাস্টের মাঝামাঝি থেকে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হওয়া ৭৮৩ জন নতুন রোগীর মধ্যে ৪৩৯জন ঢাকার বাইরের। বরিশাল, কুষ্টিয়ার একটি গ্রাম এবং মেহেরপুর জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। এই জায়গাগুলোতে রোগতত্ত্ব বিভাগের বিশেষজ্ঞ দল কারণ অনুসন্ধানের জন্য জরিপ চালিয়েছে।
অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, ঢাকার বাইরে স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়াচ্ছে কিনা বা কোন ধরণের এডিস মশা তা ছড়াচ্ছে, জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে সেই ফলাফল পাওয়া যাবে। সেই বিশ্লেষণের কাজ এখন চলছে।এতে আরও কিছুটা সময় প্রয়োজন বলে তিনি জানিয়েছেন। অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা বলছিলেন, ”আমরা ওখানে বোর্ড সার্ভে করেছি এবং লার্ভার নমুনাও সংগ্রহ করেছি। এখন সেগুলোর বিচার বিশ্লেষণ চলছে যে, এই লার্ভাগুলো এডিস মশার কিনা? আর যদি এডিস মশার হয়ে থাকে, সেটা কোন ধরণের এডিস মশা? এই বিশ্লেষণ এখন চলছে, পুরোপুরি ফলাফল তৈরি হয়নি।”
বাংলাদেশে এখনও ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
সরকারি হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা ৫৭ জন বলা হচ্ছে। যদিও বেসরকারিভাবে এই সংখ্যা অনেক বেশি বলা হচ্ছে। সারাদেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭২৭৪৫ জন। অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরার বক্তব্য হচ্ছে, দ্বিতীয় বা তৃতীয় দফায় আক্রান্তদের মধ্য থেকেই মৃত্যুর সংখ্যা বেশি পাওয়া গেছে মৃত্যু রিভিউ কমিটির বিশ্লেষণে। খবর : বিবিসি।