গণবাণী ডট কম:
চাঁদের মাটিতে ভারতের চন্দ্রযান ২ এর সফল অবতরণ দেখতে মধ্যরাতে বেঙ্গালুরুতে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)‘র সদর দপ্তরে হাজির ছিলেন স্বয়ং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে চন্দ্রযান ২। সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, শনিবার চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণের কয়েক সেকেন্ড আগেই এটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে ভারতের চন্দ্রযান ২ এর অভিযান ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইসরো জানায়, গত ২২ জুলাই সকালে শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন স্পেস রিসার্চ সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল চন্দ্রযান-২। উৎক্ষেপণের পর পৃথিবীর কক্ষপথ ভেদ করে চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করতে চন্দ্রযান-২-এর সময় লেগেছে পাঁচ দিন। পার হতে হয়েছে প্রায় ৩.৮৪ লাখ কিলোমিটার পথ। এ চন্দ্রযানের তিনটি ভাগ। অরবিটার বা কৃত্রিম উপগ্রহ, যা চাঁদের কক্ষপথে ঘুরবে। ল্যান্ডার, যেটি চন্দ্রযানকে চাঁদের মাটিতে নামাবে এবং নামবে। স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ ছেড়ে আলাদা হওয়া থেকে চাঁদে অবতরণ, এ সময়টিকে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ‘ভয়ংকর ১৫ মিনিট’। ভারতীয় সময় শনিবার রাত ১.৩০ থেকে ২.৩০ এর মধ্যবর্তী সময়ে হবার কথা ছিল ‘টাচ ডাউন‘। কিন্তু সে সময়ের আগেই মূল অরবিট থেকে আলাদা হয়ে যায় ল্যান্ডার বিক্রম। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিজের গতিবেগ কমাতে ব্যর্থ হয় চন্দ্রযান ২। পৃষ্ঠ থেকে ২ দশমিক ১ কিলোমিটার দূরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বিক্রম। । যেখানে ৭ কি: মি: গতিবেগ থাকার প্রয়োজন ছিল সেখানে ঘণ্টায় প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার গতিবেগে চাঁদের ভূপৃষ্ঠে আছড়ে পড়ে চন্দ্রযানের ল্যান্ডার। ফলে সফট ল্যান্ডিং হয়নি বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
ইতিপূর্বে যে তিনটি দেশ চাঁদে গিয়েছে তারা সকলেই চাঁদের উত্তরাংশে নাহলে নিরক্ষীয় অঞ্চলে অবতরণ করেছে। সমস্ত অভিযান চাঁদের উত্তর মেরু এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলে হয়েছে। ভারতই প্রথম চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখতে চেয়েছিল। আমেরিকার পরে চীন থেকে পাঠানো এক মহাকাশ যান চাঁদের উত্তরের অংশে অবতরণ করেছিল। পরে অবতরণ করে রাশিয়ার লুনা মিশন। চন্দ্রযান ২ সফল হলে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের পর চাঁদে পৌঁছানো দেশ হিসেবে ভারত চতুর্থ স্থানে উঠে আসতো। সংগত কারণেই প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করা প্রথম দেশের স্বীকৃতি পাওয়ার আশায় ছিল ভারত। স্থানীয় সময় রাত ১টা ৫৫ মিনিটে চলে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। কিন্তু ভারতের মিশন সফল হওয়ার কোনও বার্তা আসেনি। তখনো কন্ট্রোল রুমে বসে লাইভ দেখছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাকে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানান ইসরোর বিজ্ঞানীরা।
চাঁদে অবতরণ ব্যর্থ হওয়ার পর মোদি বিজ্ঞানীদের বলেন, এখনও সাফল্য অধরা থাকলেও আপনারা যা করেছেন সেটাই বা কম কী? আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। হাল ছাড়বেন না। আপনাদের পরিশ্রমেই ফের আনন্দে মাতবে দেশবাসী। আমি আপনাদের অভিন্দন জানাই। আপনারা সবাই দেশ, বিজ্ঞান ও মানুষের জন্য দারুণ কাজ করেছেন। সবরকমভাবে আমি আপনাদের সঙ্গে রয়েছি, সাহসের সঙ্গে এগিয়ে চলুন।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো-র প্রধান কে শিবান বলেন, বিক্রম ল্যান্ডার ছিল পরিকল্পিত। ২ দশমিক ১ কিলোমিটার পর্যন্ত এটি স্বাভাবিক লাগছিল। পরে পৃষ্ঠের সঙ্গে ল্যান্ডারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যাবতীয় তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। চন্দ্রযান-২ কে ইসরো-র সবচেয়ে জটিল অভিযান বলে মন্তব্য করেন কে শিবান।
পরিকল্পনা মাফিক যদি সবকিছু এগিয়ে যেতো, তাহলে সকাল ৫.৩০ থেকে ৬.৩০ এর মধ্যে বেরিয়ে পড়তো এই চন্দ্রযান। চাঁদের মাটিতে আদৌ পানি আছে কী না, চাঁদ ভবিষ্যতে বিপুল খনিজের উত্স হতে পারবে কী না—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কাজ করার কথা ছিল চন্দ্রযান-২ এর। ।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ভারতই প্রথম সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে এ নভোযান পাঠিয়েছে। এর আগে চন্দ্রযান-১ অভিযান চালিয়েছিল ইসরো। সে অভিযানের মেয়াদ ছিল ৪ মাস। আর চন্দ্রযান-২-এর অভিযানের মেয়াদ হচ্ছে ১ বছর। চন্দ্রযান-১ দক্ষিণ মেরুতে যাওয়ার সময়ই ধ্বংস হয়েছিল।
সূত্র: এনডিটিভি, জি নিউজ, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।