আনিসুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক, কাপাসিয়া (গাজীপুর):
গাজীপুর জেলা পরিষদ নির্বাচন আজ সোমবার সকাল ৯টা থেকে একযোগে সকল কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ চলছে। এজন্য আগেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা।
কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেল কেন্দ্রের বাইরে উৎসবের আমেজ। বিভিন্ন পদের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকগণ সুশৃংখলভাবে কেন্দ্রের বাইরে ভোটর আসলে তাদের সাথে কুশল বিনিময় করছেন। নিজেদের পক্ষে ভোট দেয়ার জন্য শেষ মুহুর্তে অনুরোধ জানাচ্ছেন। কোন কোন কেন্দ্রে এবারই প্রথম ইভিএম এ ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে। বিগত কোন নির্বাচনেই ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হয়নি।
সোমবার সকালে সরেজমিনে কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা গেল, কেন্দ্রের বাইরে উৎসাহী মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি। প্রধান ফটকে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের সরব অবস্থান। কেউ প্রবেশ করতে চাইলে তার পরিচয় নিশ্চিত হয়ে ভিতরে যাবার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। ভোটার এবং নির্বাচন কমিশনের অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া যাতে কেউ ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য তারা তৎপর। ফলে কেন্দ্রের ভিতরে অত্যন্ত সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ।
এই কেন্দ্রে ১৪৬ জন ভোটার রয়েছেন। তাঁরা সকলেই জনগণের ভোটে নির্বাচিত জন প্রতিনিধি। আজ তাঁদের ভোটে নির্বাচিত হবে তাঁদের প্রতিনিধি। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে।
কেন্দ্রে প্রবেশ করতেই দেখা পাওয়া গেল গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) হুমায়ুন কবির, কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোরশেদ খান, দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম নাসিম, কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ অন্যান্য দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ উপস্থিত রয়েছেন। তাঁরা কেন্দ্রের শান্তি শৃংখলা রক্ষায় কাজ করছেন। কেন্দ্রের দুটি বুথের একটিতে পুরুষ ভোটার, অন্যটিতে নারী ভোটারগণ ভোট দিচ্ছেন। ভোট কক্ষের ভিতরে একসাথে একজন ভোটার প্রবেশ করছেন, পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর বুথে গিয়ে ভোট দিচ্ছেন।
এ কেন্দ্র পরিদর্শণে এসেছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচনে সহকারি রিটার্ণিং অফিসার কাজী মো: ইস্তাফিজুল হক আকন্দ। তিনি জানালেন এখানে আসার আগে তিনি সদর উপজেলার নির্বচানী কেন্দ্র পরিদর্শণ করেছেন। সেখানেও খুব সুন্দর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে। কেন্দ্র পরিদর্শনকালে তিনি ইভিএম এর কিভাবে ভোট হচ্ছে তাও দেখালেন। নারী ভোট কক্ষের ভিতরে দেখা গেল একজন নারী ভোটার কক্ষে প্রবেশ করে নিজের পরিচয় দিলেন। পরে ইভিএম এ তিনি তার আঙ্গুলের ছাপ দিলেন। টেবিলে রক্ষিত কম্পিউটার স্ক্রিণে তার ছবিসহ পরিচয় ভেসে উঠল। এসময় সকল প্রার্থীর এজেন্টগণ ভোটারকে শনাক্ত করলেন। তারপর ঐ ভোটার একা ভোট কক্ষের এক কোনায় স্থাপিত গোপন বুথের ভিতর ভোট দিতে প্রবেশ করলেন। এসময় স্ক্রিণে ভেসে উঠল ভোট দেয়ার জন প্রস্তুত হচ্ছে, অপেক্ষা করুন। তারপর লেখা দেখা গেল ভোট দেয়া হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর লেখা ভেসে ওঠল ভোট প্রদান সম্পন্ন হয়েছে। স্ক্রিণে আরো দেখা গেল এখানের মোট ভোটার সংখ্যা এবং প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা।
এই কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আমানত হোসেন খান। প্রথম ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট প্রদান করে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ইভিএম একটি সুন্দর পদ্ধতি। আমি আমার জীবনের প্রথম জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ভোট দিয়েছি। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দেয়া কাগজের ব্যালটের চেয়ে অনেক সুন্দর ও সহজ। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন হয়েছে, এটা তার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। এই ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হওয়াতে খুব সহজে ভোটাররা তাদের ভোট প্রয়োগ করতে পারছেন।
কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান রওশন আরা সরকার বলেন, আমি এই প্রথম ইভিএম এ ভোট দিয়েছি। অনেক সহজে ইভিএম এ ভোট দিয়ে আমার অনেক ভালো লেগেছে।
গাজীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচনে সহকারি রিটার্ণিং অফিসার কাজী মো: ইস্তাফিজুল হক আকন্দ জানান, গাজীপুর জেলা পরিষদে ১জন চেয়ারম্যান, ৫জন সদস্য ও ২জন সংরক্ষিত নারী সদস্য নির্বাচিত হবেন। এবার গাজীপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনজন, সাধারণ সদস্য পদে ২০জন এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে এক নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী না থাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হানিফকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে,গাজীপুর জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে তিন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত মোতাহার হোসেন মোল্লা (মোটরসাইকেল), এসএম মোকছেদ আলম (আনারস) এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: সামসুদ্দিন খন্দকার (চশমা) প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।
সহকারি রিটার্ণিং অফিসার কাজী মো: ইস্তাফিজুল হক আকন্দ জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড সদস্য, পৌরসভার মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলররা হলেন জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটার। গাজীপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনের মোট ভোটার ৬৩৬জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৮৪ এবং মহিলা ভোটার ১৫২টি। ভোট কেন্দ্র ৫টি। ভোটারদের মধ্যে গাজীপুর সদরের ১৩২জন, কালিয়াকৈর উপজেলায় ১৩১জন, শ্রীপুরে ১২০জন, কাপাসিয়ায় ১৪৬জন এবং কালীগঞ্জে ১০৭জন করে ভোটার রয়েছেন। সবগুলো কেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহণ চলছে। তা চলবে দুপুর দুটো পর্যন্ত। তাঁদের ভোটে একজন চেয়ারম্যান, ৫ জন সদস্য ও ২জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচিত হবেন।
এবার নির্বাচনের সবগুলো কেন্দ্রেই ইভিএম এ ভোট গ্রহণ হচ্ছে। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ট্রাইকিং ফোর্স, ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।