গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানাধীন সারদাগঞ্জ এলাকায় ছেলেদের মারধরে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর বাড়ীতে নিয়ে আসলে সোমবার রাতে এক অসহায় বৃদ্ধ পিতার মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে মঙ্গলবার সকালে ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ দুই ছেলেকে গ্রেফতার করেছে।
নিহত পিতার নাম ওসমান গনি (৭০)। তিনি গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানাধীন সারদাগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ওসমান গনির দুই সংসারের ছেলে মেয়েদের মধ্যে শরিফুল মাদকাসক্ত। সে বিভিন্ন সময়ে টাকার জন্য পরিবারের সদস্যদের জালাতন করতো। টাকা না দিলে ঘরের জিনিসপত্র বিক্রি করে দিত। শনিবার এরকমভাবে ঘরে কিছু জিনিস বিক্রি করা নিয়ে দুই সংসারের দুই ভাই শরিফুল ও মাহবুবের মধ্যে ঝগড়া লাগে। বৃদ্ধ পিতা ছেলেদের ঝগড়া থামাকে গেলে তারা ওসমান গনিকে মারধর করে। স্থানীয়রা আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার হাসপাতালে ভর্তি করেন। সোমবার তাকে বাড়ীতে নিয়ে আসলে রাতে তিনি মারা যান।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) আবু তোরাব মো: সামসুর রহমান জানান, ওসমান গনির দুই স্ত্রী। প্রথম সংসারে ৪ ছেলে মেয়ে এবং দ্বিতীয় সংসারে দুই ছেলে। দ্বিতীয় সংসারের এক ছেলে শরিফুল ইসলাম মাদকাসক্ত। মাদক সেবনের জন্য শরিফুল ইসলাম প্রায়ই তার বড় ভাই সফিকুল ও তার পিতাসহ পরিবারের সদস্যদের কাছে টাকা চাইতো। তিনি বিভিন্ন সময়ে মাদক কেনার টাকার জন্য বাড়ীতে অশান্তি করতো। মাঝে মধ্যে ঘর থেকে ফ্রিজ, আইপিএস, টিভিসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র পরিবারের সদস্যদের অজান্তে বিক্রি করে দিতেন।
তিনি আরো জানান, গত শনিবার (১৮ জুন) শরিফুল ইসলাম তার বাবার কাছে টাকা চাইলে তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করেন। এ কারণে সে বাড়ীর কিছু জিনিসপত্র বিক্রি করে দেয়। পরে ওইদিন রাত পৌনে ১১টার দিকে সারদাগঞ্জ রাইস মিলের পাশে হাবিব মার্কেটের সামনে শরিফুল ইসলাম বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিল। এ সময়ে প্রথম সংসারের ছেলে মাহবুব গিয়ে শরিফুলের কাছে ঘরের জিনিসপত্র কেন বিক্রি করে দিয়েছে জানতে চায়। এনিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও ঝগড়া সৃষ্টি হয়। এসময় বৃদ্ধ ওসমান গনি ছেলেদের ঝগড়া থামাতে গেলে দুই ছেলে লাঠি দিয়ে তাদের পিতাকে এলোপাথারীভাবে মারপিট করে। পরে আশপাশের লোকজনের তাকে উদ্ধার করে গাজীপুরের কাশিমপুর এলাকায় শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসা নেয়ার পরে সোমবার (১৯ জুন) তাকে বাড়িতে নিয়ে আসে। সোমবার রাত ২টার দিকে ওসমান গনির মৃত্যু হয়।
তিনি আরো জানান, নিহতের স্বজনেরা ঘটনাটি চাপা দিতে চেষ্টা করে। পরে মঙ্গলবার (২০ জুন) খবর পেয়ে কাশিমপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ও মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
নিহতের বড় ছেলে শফিকুল ইসলাম জানান, ছোট ভাই শরিফুল স্থানীয় মাদক সেবীদের সঙ্গে মিশে সে নিজেও মাদকে আসক্ত হয়ে যায়। এখন টাকা পয়সার জন্য চুরি করে ঘরের জিনিসপত্র বিক্রি করে দিচ্ছে। প্রতিবাদ করলেই সে এবং তার বাড়ির লোকজনদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর করে। তার বাবাকে শরিফুল ও মাহবুব দুই জনে মিলে মারধর করে। আমি পরিবার নিয়ে শহরের বসবাস করি। বাবাকে গত সোমবার দিবাগত রাতে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। বাড়িতে নিয়ে আসার পর রাত আনুমানিক ২ টার দিকে তার মৃত্যুর সংবাদ পাই।
জিএমপির কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ রাফিউল করিম বলেন, পিতাকে মারধর করার স্বজনরা বিষয়টি গোপন করে। পিতার মৃত্যুর পর বিষয়টি জানতে পেরে আমরা মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছি। এ বিষয়ে নিহতের বড় ছেলে সফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় দুই ছেলে শরিফুল ও মাহবুবকে গ্রেফতার করা হয়েছে।