গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগরীর বোর্ড বাজার এলাকায় অবস্থিত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) এর প্রধন ফটক আটকে দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন একদল বিদেশি শিক্ষার্থী। প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় সোমবার সকালে প্রতিষ্ঠানটির অনাবাসিক দেশীয় শিক্ষার্থী ও নতুন সেসনে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাকেরা ভেতরে প্রবেশ করতে ভোগান্তিতে পড়েন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কয়েকটি দাবি নিয়ে কতিপয় বিদেশী শিক্ষার্থী গেল রোববার রাত ১টার পর থেকে অবস্থিত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) এর প্রধন ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে আইইউটি‘র ভিসি প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলামসহ সিনিয়র শিক্ষকগণ তাদের সাথে আলোচনার চেষ্টা করলেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আগ্রহ দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে রাখে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই বিদেশি শিক্ষার্থীরা মূল ফটকটি বন্ধ করে রেখেছেন। তাঁরা কাউকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছেন না। তারা মূল ফটকে প্ল্যাকার্ড হাতে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা এবং নতুন সেসনে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বাইরে তাদের লাগেজসহ অপেক্ষা করছেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ভেতরে ঢুকতে না পেরে দুর্ভোগে পড়েন।
আন্দোলনরত বিদেশি শিক্ষার্থীরা বলছেন, আভ্যন্তরিন পরীক্ষায় অকৃতকা্র্যা হলে পুনরায় ফি দিয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। এছাড়াও তারা আরো কিছু দাবী জানিয়ে আসলেও কর্তৃপক্ষ তা না মানায় আন্দোলন করছে। এসময় তারা নিজ নিজ দেশের ভাষায় শ্লোগান দিচ্ছিল।
সকাল ১০টার পর কিছু সময়ের জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রধন ফটক ছেড়ে চলে গেলে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা তালা ভেঙ্গে গেট খুলে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ অন্যরা পায়ে হেটে ভিতরে প্রবেশ করেন। এসময় আনসার সদস্যরা লাইন ধরে দাড়িয়ে প্রধান ফটকের একাংশে নিরাপদ পথ তৈরী করে দেয়। পরে নতুন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ ভিতরে প্রবেশ করেন। তবে, কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পিএস নাহিদুল ইসলাম জানান, বিদেশি শিক্ষার্থীরা ৩০ শতাংশ চাকরির নিশ্চয়তা, হোস্টেল কক্ষে এসি, ওয়াশিং মেশিন লাগানো ও অভ্যন্তরীণ একটি পরীক্ষা বাতিলসহ নানা দাবি করছেন। এসব বিষয় নিয়ে ভিসি মহোদয় আলোচনার চেষ্টা করছেন। আশা করা যায় দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। তিনি আরো জানান, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) পরিচালিত হয় ইসলামিক দেশগুলোর সংগঠন অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) সহযোগিতায়। এ প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিকভাবে অনেক সুনাম রয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, এখানে ওআইসি ভূক্ত ২৩ দেশের আড়াই হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ণ করছে। তাদের মধ্যে ৫০/৬০ জন শিক্ষার্থী কিছু অযৌক্তিক দাবী নিয়ে ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট করছে।
এদিকে, সোমবার বিকালে আইইউটি‘র রেজিস্ট্রার ড. এমওয়েবেসা উমা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, ৭ আগস্ট রাত ১টা থেকে বিদেশী ছাত্রদের একটি ছোট দল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। তাদের বাধার কারণে, কোন অনুষদ সদস্য, স্টাফ সদস্য এবং শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাসে যোগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেনি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক/অফিসিয়াল কাজ বিগ্নিত হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, সোমবার ছিল নতুন শিক্ষাবর্ষ (২০২২-২০২৩) এর প্রথম দিন। নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য একটি স্মরণীয় দিন। সোমবার তাদের প্রথমবারের মতো তাদের ক্লাসে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল। এই শুভ দিনে তাদের অভিভাবকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়।
এতে আরো বলা হয়েছে, কিছু বিদেশী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছিল। গত আগস্ট ভাইস চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, রেজিস্ট্রার, অনুষদের ডিন, চেয়ারম্যান, ছাত্র কল্যাণ কমিটি, এবং সমস্ত বিভাগীয় প্রধানের পাশাপাশি প্রভোস্টদের নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আলোচনা বসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তারা তারা প্রশাসনের সঙ্গে বসতে রাজি হননি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, নতুন শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক এবং বহির্বিশ্বের কাছে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য এটি একটি পূর্ব-পরিকল্পিত উদ্যোগ বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করে। এ প্রেক্ষাপটে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির সুপারিশের আলোকে কঠোর শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেশী বিদেশী পরিচয় নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীকে, ওআইসি-এর একটি সহযোগী অঙ্গ এই মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে এমন কোনো কার্যকলাপ প্রদর্শন না করার জন্য অনুরোধ ও সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেছে।