গণবাণী ডট কম:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-৩ সংসদীয় আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুই সংসদ সদস্য নির্বাচনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে চলেছেন। তাঁরা হলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান সংসদ সদস্য ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ অপরজন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুমানা আলী টুসি। এ দুজনের পক্ষে ইতিমধ্যে সহকারী রিটার্ণিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোননয় ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গত রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে। গাজীপুর-৩ সংসদীয় আসনে নৌকার তালিকা থেকে বাদ পড়েন বর্তমান সংসদ সদস্য সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ। তার স্থানে জায়গা পেয়েছেন শ্রীপুরে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাড. রহমত আলীর মেয়ে ও সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য রুমানা আলী টুসী।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, গাজীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন ইকবাল হোসেন সবুজ, রুমানা আলী টুসী ও তার ভাই জামিল হাসান দুর্জয়সহ অন্যরা। দলীয় প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর ইকবাল হোসেন সবুজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক স্ট্যটাস দিয়ে শ্রীপুরের জনগণকে শান্ত থাকার আহবান জানান। কিন্তু একদিন পর সোমবার সন্ধ্যায় গাজীপুর-৩ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন ইকবাল হোসেন সবুজ।
তিনি জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আামার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে বলেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে কোন বাধা নেই। যদি নির্বাচিত হতে পার তাতেও কোন সমস্যা নেই। একারণে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবো। তিনি বলেন, বিগত ৫ বছর আমি এলাকার মানুষের সাথে থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজ করেছি। তারা নিশ্চয়ই আমার সাথে থাকবে।
দলীয় মনোনয়ন লাভের পর সোমবার রুমানা আলী শ্রীপুরে বড় ধরণের শো ডাউন করেন এবং একইদিন সহকারী রিটার্ণিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তার মনোননয় ফরম সংগ্রহ করা হয়। অপরদিকে, মঙ্গলবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ইকবাল হোসেন সবুজের পক্ষে সহকারী রিটার্ণিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তার মনোননয় ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে।
এ আসন থেকে আরো যারা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন, তারা হলেন, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের জেলা কমিটির সভাপতি আব্দুর রহমান, জাসদের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল হক মন্ডল বাচ্চু, স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগের প্রার্থী রুমানা আলীর সহোদর ভাই) মো: জামিল হাসান এবং জাকের পার্টির প্রার্থী মো. আলাউদ্দিন, ন্যাশনার পিপলস পার্টির জয়নাল আবেদীন দপ্তরী।
শ্রীপুর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র জানায়, এখানে প্রয়াত রহমত আলী ব্যাপক জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মী সাজানো মামলায় হয়রানীর শিকার হয়। তখন ইকবাল হোসেন সবুজ নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ান। এতে শ্রীপুরের রাজনীতিতে তাঁরও প্রভাব বলয় তৈরী হয়। তখন থেকে শ্রীপুর আওয়ামী লীগ দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। সবুজ ২০০৬ সালে সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন দাবি করেন। এতে রহমত আলীর সঙ্গে সবুজের বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নেয়।
সূত্র আরো জানায়, রহমত আলীর জীবদ্দশায় ওই আসন থেকে ২০১৮ সালে রহমত আলীর ছেলে জামিল হাসান দুর্জয় এবং ইকবাল হোসেন সবুজ একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। সেই বছর ইকবাল হোসেন সবুজ নৌকার মনোনয়ন লাভ করেন। দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ইকবাল হোসেন সবুজ। পরে সংরক্ষিত নারী আসনে সাংসদ নির্বাচিত হন রহমত আলীর ছোট মেয়ে রুমানা আলী টুসি। সংরক্ষিত নারী সাংসদ নির্বাচিত হয়ে নিজের বলয় তৈরি করে নেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইকবাল হোসেন সবুজ সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকে তার স্ত্রী, ভাই সাখাওয়াত হোসেন ও সবুজের উকিল জামাই মাসুদ আলম অনেক প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। অপরদিকে, তিনি রহমত আলীর অনুসারীদের কোন ঠাসা করে রাখা ও দলীয় পদ পদবি থেকে বঞ্চিত করেছেন বলেও অভিযোগ উঠে। তাছাড়া তিনি ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রার্থীর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী দিয়ে জয়ী করেন।
অপরদিকে, সবুজের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরপরই শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও তাঁর নিজের ছবি সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে তাঁরা শেখ হাসিনা নির্দেশকে অবমাননা করা হয়েছে।
এদিকে, রুমানা আলী টুসি মনোনয়ন পাওয়ার পর তার ভাই জামিল হাসান দুর্জয় মনোনয়ন জমা দিবেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে টুসির পক্ষে একসঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে উৎফুল্ল প্রয়াত রহমত আলী, দুর্জয় ও টুসির অনুসারী নেতাকর্মীরা।
গাজীপুর-৩ সংসদীয় আসনটি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা (পেীরসভাসহ) এবং গাজীপুর সদর উপজেলাধীন ভাওয়ালগড়, মির্জাপুর ও পিরুজালি ইউনিয়ন এলাকা নিয়ে গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪লাখ ৯৪হাজার ৪২৭ জন। এখানে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ২লাখ ৪৫হাজার ৪৩৪জন এবং মহিলা ভোটার সংখ্যা ২লাখ ৪৮হাজার ৯৯৩জন। তাদের মধ্যে শ্রীপুর উপজেলা এলাকার ভোটার ৩ লাখ ৯২ হাজার ২৫১ জন এবং সদরের ৩ ইউনিয়নের ভোটার ১ লাখ ২ হাজার ১৭৬ জন। এখানে ভোট কেন্দ্র সংখ্যা ১৮০টি, বুথ সংখ্যা ১০৬৮টি।