গণবাণী ডট কম:
চলমান জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সম্মেলনে সংস্থাটিকে পারমাণবিক যুদ্ধের ব্যাপারে সতর্কবার্তা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বুধবার নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে ইমরান জানান, জাতিসংঘকে তিনি বোঝাতে চেষ্টা করছেন যে কাশ্মীর ইস্যুতে দ্রুত সমাধানে পৌছানো সম্ভব না হলে যে কোনও মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে।
এ বছরের শুরুতেই ফেব্রুয়ারি মাসে পুলওয়ামা হামলাকে ঘিরে চিরশত্রু ভাবাপন্ন দেশ দুটি বড়সড় যুদ্ধের খুব কাছাকাছি চলে এসেছিলো। পারমাণবিক হামলার হুমকি-পাল্টা হুমকিও দিয়েছিল একে অপরকে। পরিস্থিতি শান্ত হয় যখন পাকিস্তান অভিনন্দন বর্তমান নামের ভারতীয় পাইলটকে ভারতের হাতে ফিরিয়ে দেয়।
কিন্তু দু’দেশের সম্পর্ক ফের খারাপের দিকে মোড় নেয়, যখন ৫ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্ত্বশাসন কেড়ে নিয়ে আলাদা দুটি কেন্দ্রশাসিত রাজ্য গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় ভারত সরকার। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, কাশ্মীরের জনগণকে দমন করে রাখতে ভারত সরকার সেখানে ৯ লাখ সেনা মোতায়েন করে রেখেছে। প্রায় প্রতিদিনই কাশ্মীরের যুবকদের রাস্তাঘাট ও ঘর থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন চালাচ্ছে সেনা সদস্যরা।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও কাশ্মীরি জনগণের দুঃখ-দুর্দশার করুণ চিত্র উঠে এসেছে। ৫২ দিন যাবত কাশ্মীর অবরুদ্ধ করে রেখেছে ভারত সরকার। জুমার দিনগুলোতে নিয়মিত কারফিউ জারি হচ্ছে। ইন্টারনেট ও মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বাইরের পৃথিবীর থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে কাশ্মীরিদের। পাকিস্তান বরাবরই এ নিপীরনের বিরোধিতা করে আসছে।
অপরদিকে ভারত সরকার কাশ্মীর ইস্যুকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে পাকিস্তানকে দূরে থাকতে বলছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ ক্ষমতাসীন বিজেপির দুজন শীর্ষস্থানীয় নেতা এরই মধ্যে পাকিস্তান অধিকৃত আজাদ কাশ্মীরেও ভারতের প্রাপ্যতা দাবি করে বসেছে।
এমন পরিস্থিতির জন্য ইমরান খান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উগ্র হিন্দুত্ববাদী ভাবধারাকেই দায়ী করে তাকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এসময়জাতিসংঘকে সতর্ক করে বলেন, ‘কাশ্মীরের মানুষকে যেভাবে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে, অবরোধ উঠে যাওয়ার পর এসব মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে আসবে। তখন আপনারা কি করবেন?’
এরপরই তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলে, ‘আমার ভয় হচ্ছে, বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।‘
ইমরান খান সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার এখানে আসার মূল উদ্দেশ্যই হলো, জাতিসংঘের অন্যান্য নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করা এবং তাদের সামনে কাশ্মীর ইস্যুর ভয়াবহ ভবিষ্যত তুলে ধরা। কিউবার সংকটের পর এই প্রথম দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ যুদ্ধের এত কাছাকাছি এসে পৌঁছেছে। এ বছরই ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ প্রায় বেঁধেই গিয়েছিল।‘
পাক প্রধানমন্ত্রী এরপর নিজের দেশের স্বার্বভৌমত্ব রক্ষার ব্যাপারে অঙ্গীকার করেন এবং একইসঙ্গে ভয়াবহতা মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও নিজের আশঙ্কা ব্যক্ত করেন।
শেষদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে বিশ্বেশান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে জানিয়ে ইমরান খান কাশ্মীরের জণগণকে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে সেখানে শান্তি পুণঃপ্রতিষ্ঠা করতে জাতিসংঘ দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সূত্র-দ্য গার্ডিয়ান