গণবাণী ডট কম:
সরকারের ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামোতে সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার কর্মীদের বদলে মালিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হয়েছে অভিযোগ করে তা সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। অপরদিকে সরকারের অতিরিক্ত সচিব মত দিয়েছেন, আইনজীবীদের মত সাংবাদিকদেরও নিবন্ধন থাকা দরকার। আইনজীবীরা যেভাবে বার কাউন্সিলে নিবন্ধন নেয়, তেমনই প্রেস কাউন্সিল সাংবাদিকদের নিবন্ধন দিতে পারে।
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘গণমাধ্যমের বিদ্যমান সঙ্কট ও সাংবাদিকদের স্বার্থ সুরক্ষা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তাগণ এসব মতামত প্রকাশ করেন।
সাংবাদিকদের স্বার্থ সুরক্ষা পরিষদ আয়োজিত এই গোল টেবিল বৈঠকের আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ।
আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও অবজারভার পত্রিকার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সিনিয়র সাংবাদিক অজয় দাশ গুপ্ত, বিএফইউজের মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ওমর ফারুক, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভুঁইয়া, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বপন সাহা, বিটিভির উপ-মহাপরিচালক (বার্তা) অনুপ খাস্তগীর, বিএফইউজের নির্বাহী কমিটির সদস্য খায়রুজ্জামান কামাল, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন, ডিইউজের সাবেক সভাপতি কাজী রফিক, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) ট্রাস্টি রাশেদ আহমেদ, সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জাকারিয়া কাজল, ডিআরইউর সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, লেবার রাইটস সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি কাজী আবদুল হান্নান, বাংলাদেশ সাংবাদিক অধিকার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, খাইরুল আলম, অমীয় ঘটক পুলক প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক আকতার হোসেন, ডিআরইউর দুই সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোরসালিন নোমানী ও রাজু আহমেদ, বিএসআরএফের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ, ডিআরইউর কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন, সাংবাদিক শরীফুল ইসলাম বিলু, খায়রুল আলম, জোবাইর চৌধুরী প্রমুখ।
সাংবাদিকদের তরফে দাবী তোলা হয়, বছরে সংবাদকর্মীদের দুটি গ্রাচুইটি ও তাদের আয়কর মালিকদের পরিশোধের প্রচলিত নিয়ম বহাল রেখে তারা নতুন করে নবম ওয়েজ বোর্ড ঘোষণা করা হোক। এছাড়াও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের বেতন কাঠামোতে অন্তর্ভুক্তির আলোচনা এবং মজুরি কাঠামোতে সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষায় ইউনিয়ন নেতাদের বিরুদ্ধে সমালোচনাও উঠে আসে বৈঠকে।
সাংবাদিক নেতা আব্দুল জলিল ভূইয়া বলেন, “আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের নিজেকে সাংবাদিক দাবি করে নতুন ওয়েজবোর্ডের মাধ্যমে সাংবাদিকদের অধিকার হরণ করেছে। “সাংবাদিক সংগঠনগুলো যে এ ওয়েজবোর্ডকে অভিনন্দন জানিয়েছে, তাতে লজ্জা পাই। আমার কাছে মনে হয়, অথর্ব এ ইউনিয়ন দিয়ে কিছু হচ্ছে না। তিনি বলেন, “ইউনিয়নে নতজানু ও আপসকামী লোকজন। অধিকারের কথা বলতে তারা কেন রাস্তায় নামতে পারলো না?”
ঢাকা সংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, “এ ওয়েজবোর্ড সাংবাদিকতা সংকুচিত করার উদ্দেশ্যে করেছে রাষ্ট্র- গ্রাচুইটি দুটি থেকে একটিতে নামানো হয়েছে। “এটি মালিক স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য করেছে, শ্রমিক স্বার্থের জন্য করা হয়নি। অধিকার ক্ষুন্ন করেছে।” তিনি আয়কর পরিশোধের ভার সংবাদপ্রতকর্মীদের বদলে আগের মতোই মালিকদের পরিশোধ করতে হবে বলে দাবি জানান।
বাংলাদেশ সম্প্রচার সাংবাদিক কেন্দ্র (বিজেসি) ট্রাস্টি রাশেদ আহমেদ বলেন, “টেলিভিশনগুলোর জন্য একটি নিয়ম থাকা প্রয়োজন। অনেক টেলিভিশনে বেতন হয় না, অন্যায়ভাবে চাকুরিচ্যুত করা হচ্ছে। টেলিভিশনের জন্য একটি ওয়েজ বোর্ড করার দাবি জানাই, এখনো পর্যন্ত এর ভিত্তি তৈরি হয়নি।”
ডেইলি অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, কর্মীদের বেতনভাতা ঠিকমতো দেওয়ার জন্য সংবাদপত্র শিল্প মালিকদের প্রণোদনা দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান । তিনি বলেন, ওয়েজ বোর্ডে অসঙ্গতি থাকলে দূর করতে হবে। সাংবাদিক ও কর্মীদের বাদ দিয়ে সংবাদপত্র বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিকাশ সম্ভব নয়।
ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব সাবান মাহমুদ বলেন, নোয়াব যে অবস্থান নিয়েছে সাংবাদিকদের স্বার্থ ধর্বংস করার জন্য এর জোরালো প্রতিবাদ করতে ইউনিয়ন আন্দোলন করবে।”
আলোচনায় অংশ নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজান উল আলম বলেন, ‘সাংবাদিকদের রেজিস্ট্রেশন করা উচিত। তেমনই সাংবাদিকদের সংজ্ঞা আরো সুনির্দিষ্ট করা উচিত বলে মনে করি। কারণ সোশ্যাল মিডিয়ার এ যুগে আমিও সাংবাদিক। ফেসবুক চালাই, সংবাদ পরিবেশন করি। যদিও প্রেস কাউন্সিলে সাংবাদিকদের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা আছে, তারপরও সেটা আরো সৃনির্দিষ্ট করা উচিত মনে করি।’
তথ্য মন্ত্রণালয়ের এই অতিরিক্ত সচিব বলেন, গণমাধ্যমবান্ধব সরকার সাংবাদিকদের কল্যাণের জন্য গণমাধ্যম আইন করছে। এটি এখন আইনমন্ত্রণালয়ে ভেটিং এ আছে। আইনটি বাস্তবায়িত হলে পত্রিকার জন্য, ইলেকট্রনিক মিডিয়া কিংবা নিউ মিডিয়া, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বেতার ইত্যাদির জন্য আলাদা আলাদা ওয়েজবোর্ড গঠন করা হতে পারে। শ্রম আইন-২০০৬ ধারা মোতাবেক শুধু পত্রিকার ওয়েজবোর্ড এর কথা বলা হয়েছে। সেখানে ইলেকট্রনিক মিডিয়া নেই। তাই এই আইন থেকে বেরিয়ে যুগোপযোগী গণমাধ্যম আইন করা হয়েছে। এটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি বলেন, এ আইনের সঙ্গে আগের শ্রম আইনের কোন বিষয় নিয়ে সাংঘর্ষিক আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এজন্য একটি মিনি কমিটি রয়েছে। সেটি এখন কাজ করছে বলেও জানান অতিরিক্ত সচিব। তিনি বলেন, নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে লিখিতভাবে অভিযোগগুলো জানালে আমরা বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষকে জানাবো।