গণবাণী ডট কম:
বিদেশে পালিয়ে যাবার চেষ্টাকালে বিমান থেকে নামিয়ে গ্রেফতারের পর বাংলাদেশে অনলাইন ক্যাসিনোর মূলহোতা সেলিম প্রধানের গুলশানের বাসায় অভিযান চালাচ্ছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সদস্যরা।
সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গুলশান-২ এর ৯৯ নম্বর সড়কের ১১/এ নম্বরের সেলিমের ‘মমতাজ ভিশন’ নামের বাড়িটি ঘিরে রাখে র্যাব। পরে সেলিম প্রধানকে সঙ্গে নিয়ে এই বাড়িতে অভিযান শুরু করা হয়। বাড়িটি ছয় তলা। এর পঞ্চম তলায় অভিযান চলছে। সোয়া ১১টার দিকে অভিযান স্থলে র্যাব সদস্যের উপস্থিতি আরও বাড়ানো হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম জানান, “সেলিম প্রধান বাংলাদেশের অনলাইন ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত। ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এই বাসাতেই সেলিম পি ২৪ গ্যাম্বলিং নামে অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালনা করতো। জিজ্ঞাসাবাদের পর সেলিমের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে নিয়ে তার অফিস কাম বাসায় অভিযান চালানো হচ্ছে।”
এর আগে, সোমবার দুপুরে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থাই এয়ারওয়েজের ব্যাংককগামী একটি ফ্লাইট থেকে নামিয়ে সেলিম প্রধানকে আটক করা হয়। তিনি ব্যাংককে পালিয়ে যেতে থাই এয়ারওয়েজের ঐ ফ্লাইটের যাত্রী ছিলেন। ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা ছিল। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি ইউনিট ফ্লাইটে হাজির হলে ফ্লাইট ছাড়তে ৩টা বেজে যায়।
বিমান সূত্র জানায়, থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩২২ নম্বর ফ্লাইটটি ছাড়ার আগ মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একদল সদস্য বিজনেস ক্লাসের ওই যাত্রীকে বিমান থেকে নামিয়ে নিয়ে যায়।
জানা যায়, রাজধানীর গুলশানে একটি অভিজাত স্পা সেন্টারের মালিক তিনি। কোটি টাকার গাড়িতে অস্ত্রধারী দেহরক্ষী নিয়ে তার চলাফেরা। বিশ্বের একাধিক দেশে তার শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ। অথচ স্পা ব্যবসা ছাড়া দৃশ্যমান কোনো আয়ের উৎস নেই। ঢাকার বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক থাইল্যান্ডে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। এসব অর্থ পাচারে সহায়তা করেন সেলিম প্রধান। এছাড়া সেলিম আন্তর্জাতিক ক্যাসিনো নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত।
গ্রেফতার হওয়া সেলিম প্রধান বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তার বিভিন্ন পার্টিতে তরুণী সরবরাহের কাজ করতেন সেলিম। এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন স্পা ও বিউটি পার্লার যেখানে ভিআইপিদের আসা যাওয়া রয়েছে, সেগুলোতে মেয়ে সরবরাহের কাজ করতেন সেলিম। সেই মেয়েরা ভিআইপিদের বিনোদন দেওয়ার কাজ করতেন। পাশাপাশি সিলেট থেকে অবৈধভাবে পাথর নিষ্কাশনের কাজ করতেন তিনি। ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু পাচারেও ভূমিকা ছিল তার।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিরাপত্তাকর্মী থেকে ভোল পালটে টাকার পাহাড় গড়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া। একসময় লোকমান বিএনপির রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর করা লোকমান আওয়ামী লীগের ১০ বছরে দাপটের সঙ্গে মোহামেডানকে শেষ করে বাণিজ্য করেছেন রমরমা। লোকমানের ক্যাশিয়ার হলেন ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সহসভাপতি সেলিম প্রধান।
সেলিম প্রধান ‘প্রধান গ্রুপ’ নামে একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের চেয়ারম্যান। এই গ্রুপের অধীনে পি ২৪ গেইমিং নামের একটি কোম্পানি আছে, যাদের ওয়েবসাইটেই ক্যাসিনো ও অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসার তথ্য রয়েছে। প্রধান গ্রুপের কোম্পানি জাপান বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপার্সের নাম রয়েছে ঢাকা চেম্বারের সদস্যদের তালিকায়। সেলিম প্রধানের অফিসের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে গুলশানে। সেখানেই পি২৪ গেইমিংয়ের অফিস। আর ফেসবুক পেইজে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সেলিম থাকেন থাইল্যান্ডে।
গোয়েন্দারা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, সেলিম প্রধান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। তার মাধ্যমে তারেক রহমানের কাছে প্রতি মাসে কয়েক কোটি টাকা পাঠানো হয়। এক সময় হাওয়া ভবনে যাতায়াতের মাধ্যমে তারেক রহমানের সঙ্গে সেলিম প্রধানের ঘনিষ্ঠতা হয়।
সেলিম প্রধানের ব্যাংককে নিজের বাড়ি, পাতায়ায় বিলাসবহুল হোটেল, ডিসকো বারসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। এদিকে জিজ্ঞাসাবাদে লোকমান ক্যাসিনো ঘিরে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য ও বিদেশে অর্থ পাচারসহ জড়িত অনেকের নাম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে প্রকাশ করেছেন। তার দেওয়া তথ্য থেকেই বেরিয়ে আসে সেলিম প্রধানের নাম। ঢাকার ক্যাসিনোর টাকা থাইল্যান্ডের বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করেছেন তিনি।