গণবাণী ডট কম:
আজ ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি। স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৭২ সালের এই দিনে পাকিস্তানে দীর্ঘ কারাবাস শেষে সদ্য স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে ফির আসেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু।
তখন থেকে দিনটি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পালিত হয়ে এলেও ৪৮ বছর পর এবার আয়োজনে ভিন্ন আঙ্গিক নিয়ে এসেছে ‘মুজিববর্ষ’। জাতির জনক বেঁচে থাকলে এই বছরই ১০০ বছর পূর্ণ করতেন; আর তাই তার জন্মশতবার্ষিকী ঘটা করে উদযাপনের যে পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ, তার ক্ষণ গণনা শুরু হবে এই ১০ জানুয়ারি থেকেই। শুক্রবার বিকালে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে মুজিববর্ষের ক্ষণ গণনার উদ্বোধন করবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ক্ষণ গণনা শেষে আগামী ১৭ মার্চ সূচনা হবে মুজিববর্ষের বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের; বছরজুড়ে চলবে সেই আয়োজন। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও থাকবে আয়োজন।
দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বিজয় অর্জনের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের অভ্যূদয় হলেও বঙ্গবন্ধু বিহীন এ স্বাধীনতা তখনো পূর্ণতা পায়নি। কারণ দেশের স্বাধীনতা লাভের পরেও স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ছিলেন সদ্য স্বাধীন দেশের মানুষ।
সমগ্র জাতি যখন সেই মহান নেতার আসার আশায় তখন চাপের মুখে পাকিস্তান সরকার তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ২৪ দিন পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি নিজের স্বপ্নের স্বাধীন দেশে পা রাখেন জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান। কাঙ্ক্ষিত সেই মানুষটির বাংলার মাটিতে পা রাখার মধ্য দিয়েই সেদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ণতা পেয়েছিল।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়ি থেকে পাকিস্তানি সেনারা আটক করে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। ওই রাতেই বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের উপর শুরু হয় বর্বর হামলা।
পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান বঙ্গবন্ধু। তার ডাকে বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তি সংগ্রামে।
বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর এ স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঘটনা বিশেষ তাৎর্যপূর্ণ, এক অনন্য দিন। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদ্যাপনের কাউন্টডাউনও আজ ঐতিহাসিক এই দিনে সারাদেশে শুরু হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয়ভাবে বিকাল ৩টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে মুজিববর্ষের কাউন্টডাউন অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এরপর প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও সকল পাবলিক প্লেসে একইসঙ্গে কাউন্টডাউন শুরু হবে। এদিন সারা দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের ২৮টি পয়েন্টে, বিভাগীয় শহর, ৫৩ জেলা ও দুই উপজেলা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীতে মোট ৮৩টি পয়েন্টে কাউন্টডাউন ঘড়ি বসানো হবে।
আজ বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের দিন আতশবাজি উত্সবের মাধ্যমে শুরু হবে মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা। স্বয়ং জাতির পিতা তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা’ হিসেবে। সেদিন বাংলাদেশে ছিল এক উৎসবের আমেজ। গোটা বাঙালি জাতি রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছিল কখন তাদের প্রিয় নেতা, স্বাধীন বাংলার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীন দেশের মাটিতে আসবেন। বিমানবন্দর থেকে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দান (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পর্যন্ত রাস্তায় জনতার ঢল নামে। বঙ্গবন্ধু বিজয়ের বেশে নামেন বিমান থেকে। পা রাখেন লাখো শহিদের রক্তস্নাত স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে। গোটা জাতি সেদিন হর্ষধ্বনি দিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে তাদের প্রিয় নেতাকে স্বাগত জানায়।
সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দেন, ‘রক্ত দিয়ে হলেও আমি বাঙালি জাতির এই ভালোবাসার ঋণ শোধ করে যাব।’ কথা রেখেছেন জাতির পিতা। হিংস্র পাক হানাদাররা যার গায়ে আঁচড় দেওয়ারও সাহস দেখাতে পারেনি, স্বাধীন দেশে বাঙালি নামক একশ্রেণির কুলাঙ্গার-বিশ্বাসঘাতকের হাতে তাকে জীবন দিতে হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে বঙ্গবন্ধু তার কথা রেখে গেছেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী :
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, এ বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী সাড়ম্বরে উদ্যাপিত হবে; যা বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসটিকে আরো বেশি তাৎপর্যমণ্ডিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারবাহিকতা রক্ষা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং ইউনেস্কো যৌথভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন করবে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার জন্য তার সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
কর্মসূচি:
দিবসটি উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকাল সাড়ে ৬টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারাদেশে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন। বিকাল ৩টায় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষ্যে ক্ষণগণনা কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণ। এছাড়া দেশের প্রতিটি জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগ এবং এর সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন অনুরূপ কর্মসূচির আয়োজন করবে।