গণবাণী ডট কম:
সারাদেশে জীবিত ৮০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরঙ্গনার ব্যক্তিগত যুদ্ধ-অভিজ্ঞতার স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য ‘বীরের কন্ঠে বীরগাথা’ প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ প্রকল্প বাস্তাবয়ন করছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক এমপি গাজীপুরের কালিয়াকৈরে মঙ্গলবার সকালে প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। প্রথম দিন কালিয়াকৈর উপজেলায় ১৪৬ জন জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ৫৭ জনের ভিডিও সাক্ষাৎকার ধারণ করা হয়।
এ উপলক্ষে কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধাদের মিলন মেলার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহাম্মেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, গাজীপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোঃ হাতেম আলী, প্রকল্প পরিচালক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব আফরাজুর রহমান, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ মোঃ মনিরুল ইসলাম খান।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ কিভাবে, কত কষ্টের বিনিময়ে, দুঃসাহসিক কাজ করেছেন, তাদের প্রত্যক্ষভাবে যার যে ভূমিকা ছিল, সেগুলো রেকর্ড করে সংরক্ষণ করা হবে। যাতে পরবর্তীকালে যারা গবেষক, ইতিহাস লিখবেন, পড়বেন, তারা যেন সত্যিকারভাবে জানতে পারেন। শুধু বললাম, আমি যুদ্ধ করেছি- তা বললে হবে না। কিভাবে যুদ্ধ হয়েছে, কোথায় যুদ্ধ করেছেন, কার কি অবদান সেগুলো প্রত্যেকের আলাদা আলাদাভাবে রেকর্ড করে সংরক্ষণ করব। যাতে করে মুক্তিযোদ্ধাগণ মারা যাওয়ার পরেও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকেন। তারা হলেন জীবন্ত সাক্ষী, তাই তাদের বক্তব্য রেকর্ড করে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধা জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন। তাদের রণাঙ্গণের অভিজ্ঞতা, দেশ প্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে শত প্রতিকূলতা জয়, অসম শক্তির সঙ্গে কৌশলী যুদ্ধ, যুদ্ধ ক্ষেত্রের আনন্দ-বেদনার স্মৃতিচারণমূলক ভিডিও চিত্র ধারণ করে সংরক্ষণের কাজ শুরু করেছে সরকার। ‘বীরের কন্ঠে বীরগাথা’ নামের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কেয়ামত পর্যন্ত প্রজন্মের পর প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের গৌরব গাঁথা জানতে পারবে।
উদ্বোধনের পর ৯টি স্থানে প্রকল্পের কর্মকর্তারা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভিডিও সাক্ষাৎকার ধারণ করেন। স্মৃতিচারণ মুলক ভিডিও ধারণ করার সময় মুক্তিযোদ্ধাগণ আবেগ প্রবণ হয়ে পড়েন। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে কেন, কীভাবে, কোথায় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন, কোন প্রশিক্ষকের অধীন কোন অস্ত্রের উপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, কোন সেক্টর, সাব-সেক্টরের অধীনে কতগুলো অপারেশনে কখন, কোথায়, কীভাবে অংশগ্রহণ করেছেন, ৯ মাসের যুদ্ধে কোথায়, কখন, কী ধরণের প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছিলেন, তাদের খাওয়া, পড়া, থাকা, সেই সময়ের পরিবেশ পরিস্থিতি, স্মরণীয় ঘটনা, বিজয় উল্লাস, বাড়ি ফেরা, অস্ত্র জমা দেয়া এসব ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে, মুক্তিযোদ্ধারা যেন যুদ্ধের দিনগুলোতে ফিরে গিয়েছিলেন।
প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, পর্যায়ক্রমে গাজীপুরের ৫ উপজেলার ১ হাজার ৬৯৬ জন জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হবে। এ জেলায় এই কার্যক্রম ২৩ দিনব্যাপি চলবে।