গণবাণী ডট কম:
বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশের অন্যান্য জেলার ন্যায় গাজীপুওের নেয়া হয়েছে নানা ব্যবস্থা। বিদেশ ফেরত ৪৩ জনকে রাখা হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে এবং ৫০ জনকে রাখা হয়েছে হোম কোয়ারেন্টাইনে। এছাড়া করোনা বিষয়ে জন সচেতনতা সৃষ্টির লÿে জেলা প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে প্রশাসন।
প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের লক্ষে কোয়ারেন্টাইনের জন্য ইতালী থেকে ফেরত ৪৪জন বাংলাদেশী প্রবাসীকে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে ১৪ মার্চ (শনিবার) মধ্যরাতে দু’টি বিআরটিসির বাসযোগে গাজীপুরের পূবাইল এলাকার ‘মেঘডুবি ২০শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় তাদের মধ্যে প্রথম দফায় ১৫ মার্চ ৪ জন এবং দ্বিতীয় দফায় ১৬ মার্চ ৪ জনের শরীরে উচ্চ তাপমাত্রা পাওয়া গেলে মোট ৮জনকে অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রাজধানী উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঢাকায় পাঠানো ওই ৮জনের মধ্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় একজনের করোনা ভাইরাস পজিটিভ এসেছে। বাকী ৭ জনকে পুনরায় আরো ১৪ দিনে জন্য কোয়ারেন্টাইনে রাখার জন্য গত ১৮ মার্চ রাতে ঢাকা থেকে এ্যাম্বুলেন্স যোগে গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলাধীন ১০ ময্যা বিশিষ্ট পাবুর মা ও শিশু শিশু কল্যাণ কেন্দ্র পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে জেলার দুটি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারের মধ্যে মেঘডুবি ২০শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ৩৬ জন ও ১০ ময্যা বিশিষ্ট পাবুর মা ও শিশু শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ৭ মোট ৪৩ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে আসা আরো ৫০ জন্য প্রবাসী জেলার বিভিন্ন উপজেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।
গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. খায়রুজ্জামান জানান, গাজীপুরের পূবাইল এলাকার ‘মেঘডুবি ২০শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’ হাসপাতালে বর্তমানে ৩৬ জন কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। অধিকতর পর্যবেক্ষণ ও পরীÿক্ষা নিরীক্ষায় এখানে রাখা ইতালী ফেরত একজনের শরীওে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে। তাই এখানের বাকী সকলকে আরো ১৪ দিন কোয়ান্টোইনে থাকতে হবে। এখানে তাদেরকে করোনা ভাইরাস বিষয়ক সচেতনতামূলক পরামর্শও দেয়া হচ্ছে। তবে আপাততঃ এ হাসপাতালে অবস্থনরতরা সবাই ভাল আছেন। মেঘডুবি থেকে ঢাকায় পাঠানো বাকী ৭ জনকে পুনরায় কোয়ারেন্টাইনে রাখার জন্য কাপাসিয়ায় একটি কেয়ারেন্টাইন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। দুটি সেন্টারে উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও পুলিশ নিয়মিত তত্বাবধান করছে। সেখানে তাদের তিন বেলার খাবারসহ সকল প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি প্রদান করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গাজীপুরের বিভিন্ন উপজেলায় একজন প্রধান শিক্ষিকাসহ আরো ৫০ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তাদেরকে সাবক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
এদিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিগণ শর্ত মানছেন না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। হোম কোয়ারেন্টাইনের শর্ত না মানায় বুধবার জেলার কাপাসিয়া উপজেলায় একজনকে ১০ হাজার টাকা এবং বৃহস্পতিবার অপর একজনকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। এছাড়া জেলার সকল থানা এলাকায় পুলিশ সার্বক্ষনিক নজরদারী রেখেছে। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিগণ যাতে শর্ত মেনে চলেন তা তদারক করা হচ্ছে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম জানান, গাজীপুরের মেঘডুবি মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রে কোয়ারেন্টাইনে রাখা প্রবাসীদের পরিবারের সদস্যদের বুধবার সকালে ডাকা হয়েছে। তাদের সঙ্গে ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোয়ারেন্টাইনে রাখার গুরুত্ব নিয়ে কথা বলা হয়েছে। তাদের সহযোগিতা ও ধৈয্য ধরতে অনুরোধ করেছি, সহযোগিতা চেয়েছি। এতে তারা বুঝতে পেরেছেন। কোয়ারেন্টাইনে না থাকলে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে তাদের ঝুকি বেড়ে যেতে পারে। কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানীয়, চিকিৎসা সরঞ্জামাদিসহ নিত্য-প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন রয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য আহবান জানান।