গণবাণী ডট কম:
বাংলাদেশে প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণাসহ সব রকমের যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। দেশে চলছে অঘোষিত লক ডাউন। একই সাথে সকল নাগরিককে সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হতে পরামর্শ রয়েছে। এসবের উদ্দেশ্য নাগরিকদের মধ্যে পরস্পর সামাজিক দুরত্ব বঝায় রাখা।
এ কাজে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সেনা বাহিনীকে নিয়োজিত করা হয়েছে। শুক্রবার সারাদেশে ৬২ জেলায় সক্রিয় ছিলো সেনাবাহিনীর ৩০৫টি দল। তারা বিভিন্ন জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে অবস্থান করে ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে করোনার বিরুদ্ধে সবচাইতে কার্যকর পদ্ধতি ‘সামাজিক দূরত্ব’ সৃষ্টিতে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সহায়তা করছে।
গত দুই দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাস্ক না পরা বা বাইরে বের হওয়ার জন্য পুলিশের লাঠিপেটা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে বয়োবৃদ্ধ নাগরিকদের প্রকাশ্যে কান ধরে থাকা এবং তার ছবি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজে ক্যামেরায় ধারণ করার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্থানীয় গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হেয়েছে, সাধারণ মানুষের সাথে পুলিশের এ’ধরণের আচরণ নিয়ে বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
কক্সবাজারের টেকনাফের একজন মুদি দোকানদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, গতকাল তিনি পুলিশের মার খেয়েছেন। “আমি সকালে বাসা থেকে বের হয়ে দোকানের দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে টহলরত পুলিশ আমার দিকে তেড়ে আসে আমাকে বলে বাইরে বের হয়েছিস কেন? এই বলে আমাকে মারতে থাকে। তারা আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই মারে,” তিনি বলেন।
“আমি দোকানে যাচ্ছি, দোকান খোলার জন্য সেটা তো অন্যায় না। এখন আমার কাছে জানতে চেয়ে উত্তর তাদের মন মত না হলে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু কিছু না শুনেই মারা শুরু করে। এ কেমন কথা,” তিনি বলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরো দুইজন এমন ক্ষোভ জানিয়েছেন। তারা বলছেন , আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সামাজিক দূরত্ব রাখা বা মানুষকে নিয়ম-কানুনের মধ্যে রাখার জন্য যেটা করছেন সেটার অবশ্যই ভালো দিকে আছে।
কিন্তু অনেকে আছেন যারা জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হচ্ছেন। তাদের কাছে আগে শুনতে হবে, দরকার পরলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তারা দেখতে চাইতে পারেন কিন্তু এভাবে কথা না শুনেই মারা বা হেনস্থা করা কাম্য নয়।
পুলিশ কী বলছে?
বাংলাদেশ পুলিশের এআইজি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন কর্মকর্তা সোহেল রানা বলছিলেন, বল প্রয়োগের ঘটনা বিচ্ছিন্ন ভাবে হয়ে থাকতে পারে। তবে তিনি বলে পুলিশ সেটা ”একেবারেই প্রশ্রয় দিচ্ছে না।”
”সারাদেশে মাঠ পর্যায়ে যেসব পুলিশ সদস্য কাজ করছেন তাদের কঠোর নির্দেশ দেয়া হচ্ছে , যাতে করে সম্মানিত নাগরিকদের সাথে বিনয়ের সাথে, পেশাদার আচরণ করা হয়, তাদেরকে বোঝানো হয় করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি এবং সচেতনতা সম্পর্কে, ” মি. রানা বিবিসিকে বলেন।
“তারপরেও পুলিশের কোন কোন সদস্যের দ্বারা এই ঘটনা ঘটেছে। আমরা ঐসব এলাকার ইউনিট কমান্ডারদের বলেছি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে, ” তিনি বলেন। তবে সোহেল রানা বলেন যে, পুলিশের ”দুই একজন সদস্যের এ’ধরণের আচরণ বাংলাদেশ পুলিশকে প্রতিনিধিত্ব করে না।”
পুলিশ বলছে দেশের এই জরুরী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নাগরিকদের সর্বোচ্চ সচেতন থাকতে হবে। এবং সরকারের দেয়া নির্দেশ মেনে চলতে হবে।
মাস্ক না পরায় ৩ বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে ছবি তুললেন এসি ল্যান্ড:
অঘোষিত লক ডাউনের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার বিকালে মাস্ক না পরায় ভ্রাম্যমাণ আদালত তিন বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখার ঘটনা ঘটেছে যশোরের মনিরামপুরে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসান এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় তিন বৃদ্ধকে এভাবে শাস্তি দেন। একই সাথে তাদের ছবি নিজের মোবাইলে ধারণ করেন। রাতে এ ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার করেন সকলেই।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সামাজিক দুরত্ব বঝায় রাখার লক্ষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসানের নেতৃত্বে গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে চিনাটোলা বাজারে অভিযানের সময় তিনি দেখতে পান এক বৃদ্ধ সাইকেল চালিয়ে আসছিলেন। এবং অপর একজন রাস্তার পাশে বসে সবজি বিক্রি করছিলেন। তবে তাদের মুখে মাস্ক ছিল না।
এ সময় পুলিশ ওই দুই বৃদ্ধকে শাস্তি হিসেবে তাদের কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন। শুধু তাই নয়, এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজেই তার মোবাইল ফোনে এ চিত্র ধারণ করেন। এ ছাড়া পরে অপর এক ভ্যান চলককে অনুরূপভাবে কান ধারিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন। এসি ল্যান্ড সাইয়েমা হাসান এ শাস্তি দেওয়ার সত্যতা স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উল্লাহ শরিফী এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, কান ধরিয়ে দাঁড় করানোর বিষয়টি দুঃখজনক। বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।