গণবাণী ডট কম:
সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে ব্যাংকগুলো। ক্ষুদ্র, মাঝারি উদ্যোক্তারা কোনো রকম সহায়তা পাচ্ছে না ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে। কোনো কোনো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ব্যাংক কর্মকর্তা কর্তৃক দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অথচ করোনার ক্ষতি পুষিয়ে অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে সরকার ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। যাতে অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চারিত হয়। ক্রেতা, উৎপাদক সবাই টিকে থাকতে পারে। এই প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য সরকার ব্যাংকগুলোকেও বিশেষ কিছু সুবিধা দিয়েছে। এসব সুবিধা নিয়ে এখন ব্যাংকগুলো চুপচাপ বসে আছে। অভিযোগ রয়েছে, ‘রাঘব বোয়ালদেরই’ টাকা দিয়েই ক্ষান্ত হয়েছে ব্যাংকগুলো।
ব্যাংকিং সূত্রগুলো বলেছে, পরিচালকদের পছন্দের লোকেরাই সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। আবার কোনো কোনো ব্যাংক নিজেদের তারল্য সংকট দুর করেছে সরকারের দেওয়া সুবিধার মাধ্যমে। গ্রাহকদের ব্যাপারে তাদের কোনো আগ্রহই নেই। উপরন্তু, কোনো কোনো ব্যাংক নিজেদের ব্যবসা খারাপ বোঝাতে কর্মীদের চাকরিচ্যুতির আশ্রয়ও নিচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বিপর্যস্ত অথনীতিতে প্রাণসঞ্চার করতে সরকার ১ লাখ কোটি টাকার ১৯টি ভিন্ন ভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। আর এসব প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংকগুলোকে যেসব সুবিধা দেওয়া হয়েছে তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—বাংলাদেশ ব্যাংক নগদ জমার হার (সিআরআর) ১ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। আবার ঋণ আমানত অনুপাত সীমা (এডিআর) ২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। নীতি সুদহার বা রেপো দশমিক ৫০ শতাংশ কমানো হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোতে তারল্যের জোগান হয়।
তদুপরি, ১৯টি প্যাকেজের মধ্যে প্রায় সবগুলোতেই পুনঃ অর্থায়ন তহবিল থেকে টাকা দেবে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রণোদনা প্যাকেজের প্রায় অর্ধেকই আসবে পুনঃ অর্থায়ন তহবিল থেকে। করোনার অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—বড় শিল্প ও সেবা খাতের জন্য চলতি মূলধন বাবদ ৩০ ?হাজার কোটি টাকা ও এসএমই খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা। এসব ঋণের সুদের অর্ধেক পরিশোধ করবে সরকার, বাকি অর্ধেক গ্রাহক। ব্যাংকগুলোতে যাতে তারল্যসংকট না হয়, সে জন্য বড় অঙ্কের পুনঃ অর্থায়ন তহবিলও গঠন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সূত্রগুলো বলেছে, দুঃখজনক হলেও সত্য যে গ্রাহকদের অসিলায় এসব সুবিধা পেলেও ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের তোয়াক্কাই করছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও বারবার নির্দেশনা দেওয়ার পরও ব্যাংকগুলোর টনক নড়ছে না। এর আগে ৯ শতাংশ বা সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার বাস্তবায়নের সময় ব্যাংকগুলো সরকারের কাছ থেকে নানা সুবিধা আদায় করে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল—সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানত বেসরকারি ব্যাংকে রাখার বিধান। তখন সরকারি আমানতের অর্ধেক বেসরকারি ব্যাংকের রাখতে সরকারকে বাধ্য করেন ব্যাংকের মালিকরা। এছাড়া এডিআর বাড়ানোসহ বেসরকারি ব্যাংকের সুবিধা হয় এমন অনেকগুলো বিধান করতে বাধ্য হয়। যদিও যে সময়ে ব্যাংক ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ করার কথা ছিল সে সময়ে করেনি ব্যাংকগুলো। কয়েক বছর ঘুরিয়ে এপ্রিল ২০২০ থেকে কোনো কোনো ব্যাংক সিঙ্গেল ডিজিট সুদ হার বাস্তবায়ন করে। যদিও সর্বশেষ তথ্যমতে, এখনো ১৩টি ব্যাংকের সুদহার ৯ শতাংশের বেশি।
এদিকে, সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রণোদনার অর্থ ছাড়ে একটি শর্ত থাকায় খেলাপি গ্রাহকরা আবেদন করতে পারছে না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, করোনার এই সময়ে উন্নত দেশগুলোও সবাইকে অর্থ দিচ্ছে অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে। এ সময়ে কে খেলাপি, কে খেলাপি না—তা দেখার সময় নয়। বরং সবার হাতে টাকা থাকতে হবে। ভোক্তা ব্যয় বাড়াতে হবে। নইলে শ্রেণিবিভাজন করে, শুধু কতিপয় বড়দের বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করলে অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখা দুষ্কর হবে। খবর : দৈনিক ইত্তেফাক।