গণবাণী ডট কম:
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে তাদের অনুমতি ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশের কোন সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে অভিযান চালাতে পারবে না। বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ বরাবর এই মর্মে একটি চিঠি পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
আগে থেকে অনুমতি সাপেক্ষে অভিযান পরিচালনা করলে তা কখনোই ফলপ্রসূ হবে না এবং অনিয়মের চিত্র অনেকটাই ধামাচাপা পড়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি বিভিন্ন হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে উঠে আসে চিকিৎসার নামে প্রতারণার ও ভুয়া পরীক্ষার নানা চিত্র।
গত মাসে রিজেন্ট হাসপাতাল এবং জেকেজি হেলথ-কেয়ারে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়। এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের পাশাপাশি শীর্ষ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আজাদ এবং হাসপাতাল পরিচালকসহ একাধিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ওএসডি হন।
এখন অভিযানের আগে অনুমতি নেয়ার ব্যাপারে সরকার যে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে, এতে অনিয়মের আরও সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে ক্ষোভ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
ঢাকার বাসিন্দা নুসরাত ইয়াসমিন বলেন, “অভিযানকে আমরা সাধুবাদ জানিয়েছি। অভিযান না হলে আমরা এতো দুর্নীতির কথা জানতে পারতাম না। এখন আগে থেকে অনুমতি নিলে তারা তো আগে থেকেই সতর্ক হয়ে যাবে। দুর্নীতি চলতেই থাকবে।”
চিঠিতে বলা হয়, হাসপাতালে অকস্মিক অভিযানের কারণে স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তাই আকস্মিক অভিযানের পরিবর্তে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের সার্বিক কার্যক্রম তদারকির জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠনের কথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠিতে জানানো হয়েছে।
সেখানে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, অর্থ বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগের একজন করে যুগ্ম সচিব সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক এবং আইইডিসিআর-এর পরিচালককে রাখা হয়েছে।
তারা মূলত অভিযোগ পর্যালোচনার পাশাপাশি লাইসেন্সের যথার্থতা পরীক্ষা, সরকার নির্ধারিত ফি নেয়া হচ্ছে কি না সেটা যাচাই করাসহ সার্বিক তদারকি করবেন।
আকস্মিক অভিযানের কারণে অনেক হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই স্বাস্থ্য কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে আগে থেকে জানিয়ে একটি সুযোগ দেয়ার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক বিভাগের পরিচালক ফরিদ হোসেন মিয়া।
তিনি বলেন, “আকস্মিক অভিযান চালালে রোগীরা আতঙ্কিত হয়ে যায়, চিকিৎসকদের কাজে বিঘ্ন ঘটে। আগে থেকে জানালে এমনটা হবে না। এই সময়ে হাসপাতালগুলো ছোটখাটো ক্রুটি সংশোধন করার সুযোগ পায়। কিন্তু বড় ত্রুটি যেমন লাইসেন্স নাই। সেটা তো ঠিক করা সম্ভব না।”
সরকারের মূল লক্ষ্য কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ঢালাওভাবে অভিযান চালিয়ে যদি হাসপাতালগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে স্বাস্থ্যসেবা বাধাগ্রস্ত হবে। তাদেরকে একটা সুযোগ দিয়ে আমাদের চিকিৎসার মূলধারা ধরে রাখা জরুরি।”
তবে মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের নির্দেশনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এ ধরনের নির্দেশনার কারণে যেসব হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোয় অনিয়ম হচ্ছে সেখানে রোগীরা প্রতারিত হতেই থাকবেন।
আগে থেকেই জানিয়ে অভিযান চালানো হলে সব অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের প্রমাণ ধামাচাপা পড়ে যাবে।
এতে অভিযানের মূল উদ্দেশ্য বিফলে যাবে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বে-নজীর আহমেদ।
হাসপাতালের অনিয়ম ও জালিয়াতি ধরার ক্ষেত্রে অভিযানের কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন তিনি।
তবে তিনি অভিযানের আগে গুরুত্ব দিয়েছেন বারবার হাসপাতালগুলো তদারকি করার ওপর।
মি আহমেদ বলেন, “আমাদের স্বাস্থ্যখাতে সক্ষমতা যেহেতু কম তাই আগে হাসপাতাল তদারকি করে ক্রুটিগুলো ধরিয়ে দিতে হবে। তারপর আকস্মিক অভিযান চালিয়ে দেখতে হবে কারা সংশোধন করেছে, কারা করেনি। যারা মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আকস্মিক অভিযান বন্ধ করে দিলে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যখাতের ওপর থেকে তাদের আস্থা হারাবে।” খবর: বিবিসি।