গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরের শ্রীপুরে উদ্ধার হওয়া খন্ডিত লাশের হতভাগ্য নারীর পরিচয় মিলেছে। একই সাথে জেলা পুলিশ ঘটনা প্রকাশ হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে খুনের রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
পারিবারিক কলহ এবং পোশাক শ্রমিক স্ত্রীর জমানো ৪০ হাজার টাকা আত্মসাত করার জন্য ঘুমের ওষুধ খাইয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পাষন্ড স্বামী। পরে বাথরুমে নিয়ে স্ত্রীর লাশ ১৫ টুকরো করে সে। পরে দুই দফা দেহের খন্ডিত ১০ টুকরো ট্রাভেল ব্যাগে করে নিয়ে নদীতে ফেলে দেয়। বাকি ৫ টুকরো ফেলার সুযোগ না পেয়ে ঘরে রেখে পালিয়ে যায়। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশ ও শ্রীপুর থানা পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে ঢাকার আগুলিয়া থানার কবিরপুর এলাকায় থেকে মামুন মিয়াকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর স্বামী মামুন মিয়া (২৫) পুলিশের কাছে এভাবেই স্ত্রীকে খুন করার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়।
হতভাগ্য নারীর নাম সুমি আক্তার (২০)। তিনি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার দেবকান্দা গ্রামের নিজাম উদ্দিনের মেয়ে। সুমি স্থানীয় সাবলাইম গ্রীনটেক নামক একটি কারখানায় চাকরি এবং মামুন ইলেকট্রিক মিস্ত্রী কাজ করত। তিনি ও তার স্বামী মামুন মিয়া শ্রীপুর উপজেলার মাষ্টারবাড়ির গিলারচালা এলাকায় বিপুল হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। মামুন গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নের বড়বাড়ি এলাকার ফজলুল হকের ছেলে।
বুধবার দুপুরে গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার তার কর্যালয়ের কনফারেন্সরুমে এক প্রেস ব্রিফ্রিংয়ে খুনি মামুনের বরাত দিয়ে এ সব তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মামুন জানিয়েছে, পারিবারিক কলহ ও তার স্ত্রী সুমার জমানো ৪০ হাজার টাকা আত্মসাত করার জন্য বৃহস্পতিবার গার্মেন্টস ছুটির দিন সুমাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সে পলি, চাকু, তিনটি ট্রাভেল ব্যাগ ও ঘুমের ওষুধ কিনে। সন্ধ্যায় হালিমের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তা খাইয়ে সুমাকে অচেতন করে। ওই রাত ১টার দিকে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে সুমার লাশ বাথরুমে নিয়ে চাকু দিয়ে কেটে ১৫ টুকরো করে। পরদিন শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে মূল দেহ পলিতে পেচিয়ে একটি ট্রাভেল ব্যাগে ভরে কাপাসিয়ার সিংহশ্রী ব্রীজ থেকে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় হাত, পা ও মাথা একইভাবে ট্রাভেল ব্যাগে ভরে একইস্থানে গিয়ে নদীতে ফেলে দেয়। একইভাবে ফেলার জন্য দেহের বাকি ৫ টুকরো পলিতে মুড়িয়ে ডেসিং টেবিলে লুকিয়ে রাখে। এদিকে সুমির বোন শনিবার সকালে তালা ভেঙ্গে নতুন তালা নাগানোর কারণে দেহের খন্ডিত ওই ৫ টুকুরো নিতে পারেনি। পরে সে পালিয়ে যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার আরো জানান, নদীতে ফেলে দেয়া দেহের খন্ডিত অংশগুলো বুধবার দুপুর পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম সবুর, গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আফজাল হোসেন, শ্রীপুর থানার ওসি লিয়াকত আলী উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য,
নিহতের বোন বৃষ্টি জানিয়েছেন, ঈদ করতে শুক্রবার সুমির বাবার বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। শুক্রবার সকালে মামুন তার মাকে ফোনে জানিয়েছে সুমিকে সে বাসে তুলে দিয়েছে। বিকেলে সুমি বাড়িতে না পৌছলে তার মা বিষয়টি তাকে জানায়। তারা বোনজামাই মামুনের সাথে যোগাযোগ করে এবং তার কথায় আশ্বস্থ হয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। শনিবারও সুমি বাড়িতে না পৌঁছলে তিনি (বৃষ্টি) সুমিদের ভাড়া বাড়িতে গিয়ে খোঁজ করেন। এ সময় বাড়ির লোকজন মামুনকে বড় ব্যাগ নিয়ে যেতে দেখেছে তবে সুমিকে দেখেনি বলে জানায়। পরে তিনি তালা ভেঙ্গে ঘরের ভেতর দেখেন এবং বোনকে না পেয়ে নতুন তালা লাগিয়ে চলে যান। তিনি আরো জানান, শনিবার থেকে মামুনের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে রোববার তিনি স্বামীর সাথে শ্বশুরবাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশালে ঈদ করতে যান।
বৃষ্টি আরো জানান, ঈদের দিন সোমবারও সুমি বাড়িতে না পৌছলে সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি ফের বোনের ভাড়া বাড়িতে যান। ঘরের দরজা খুলতেই দুর্গন্ধ পেয়ে তল্লাশি করে ডেসিংটেবিলের ড্রয়ারে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় মাংসের টুকরা দেখতে পান। খবর পেয়ে রাতে পুলিশ টুকরাগুলো উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজ উদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহতের পিতা নিজাম উদ্দিন বাদী হয়ে শ্রীপুর থানার মামলা করেছেন।