গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগী হাসপাতালের ১২ তলা থেকে পড়ে গিয়ে রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন। এ ঘটনায় ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গত শুক্রবার রাত পৌনে ১১টার দিকে হাসপাতালের ১২ তলায় মেডিসিন বিভাগের পাশের বিদ্যুত রক্ষণাবেক্ষণ কক্ষে এ ঘটনা ঘটেছে।
মৃত্যুবরণকারী রোগীর নাম জিল্লুর রহমান (৭০)। তিনি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ দরদরিয়া এলাকার কাসেম আলীর ছেলে।
হাসপাতালের পরিচালক ডা: মো: আমিনুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি জানান, একজন রোগী চিকিৎসাধীন অবস্থায় পড়ে গিয়ে আহত হয়ে মারা গেছেন। এ ঘটনা তদন্তের ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি প্রধান হলেন হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান রুবিনা ইয়াসমিন। তিন কার্যবিসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। দবে, তিনি রোগীর পরিচয় বা কিভাবে ঘটনা ঘটেছে, এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, আপনি হাসপাতালের আরপি ডা: কামরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করেন।
পরে ডা: কামরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, জিল্লুর রহমান (৭০) স্ট্রোক জনিত কারণে গত ২ মে রাত পৌনে ৮টার দিকে হাসপাতালের ১২ তলায় মেডিসিন বিভাগের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি হন। কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ায় আমরা তার কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে পারেনি। রোগীটি গরীব হওয়ায় তেমন গুরুত্ব পায়নি।
তিনি আরো জানান,রাত পৌনে ১১টার দিকে ঐ ওয়ার্ডের পাশে ছোট একটি কক্ষ রয়েছে, বিদ্যুতের লাইন রয়েছে সেখানে। সে কক্ষের একপাশে এক ফুট পরিমাণ ফাঁকা রয়েছে। জিল্লুর রহমান সেখানে গিয়ে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকেন। সেখানে তার স্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে কথা হচ্ছিল। এসময় অসাবধানতা বশত তিনি ফাঁকা দিয়ে নীচে পড়ে যান। নীচে ১০ তলায় ফাঁকা জায়গাটা গ্রিল দিয়ে আটকানো ছিল। সেখানে তিনি আটকে যান। পরে ১০ তলা থেকে তাকে উদ্ধার করে জরুরী বিভাগে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। সেখানে তিনি ১১টার দিকে মারা যান।
শনিবার বিকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ১০ তলায় যেখানে পড়ে গিয়ে জিল্লুর রহমান আটকে যান, সে কক্ষটি তালাবদ্ধ আছে। ভিতরে রক্তমাখা রয়েছে। কিন্তু উপরে ১২তলায় কক্ষটিতেদ তালা দেয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। একারণে তিনি সেখানে ঢুকতে পেরেছিলেন।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্স জানান, ঐ কক্ষে সারাধনত কেউ যায় না। তিনি সেখানে কেন গেলেন বুঝতে পারছি না।
অপরদিকে, এ ঘটনার জন্য একাধিক রোগী জানান, যদি কক্ষটি তালাবদ্ধ রাখা হতো, বা ১০ তলার মতো গ্রিল দেয়া থাকত, তাহলে এ ঘটনাটি ঘটত না। এ ক্ষেত্রে হাসপতালে কর্তৃপক্ষের অবহেলা রয়েছে।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম দাবী করেন, বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগকে একাধিকবার জানালেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি।
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বলেন, আমরা ডিজাইন অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করেছি। সাধারণত হাইরাইজ ভবনে বিদ্যুতের লাইন উঠানো-নামানোর জন্য একটি ছোট ফাকা রুম (ডাক রুম) রাখা হয়। এটি থাই গ্লাস দিয়ে আটকানো থাকে। এটি সব সময় তালাবদ্ধ রাখার কথা। এটির চাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে থাকে। ঘটনার সময় কেন সেটি তালাবদ্ধ ছিল না তা আমার জানা নেই। কক্ষটি তালাবদ্ধ থাকলে হয়ত ঘটনাটি এড়ানো যেত।
তিনি আরো বলেন, তারপরেও যেহেতু একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে, এখন আমরা সবগুলো ফ্লোরের ঐল কক্ষের ফাঁকা জায়গাগুলো গ্রিল দিয়ে আটকিয়ে দিব।
গাজীপুর সদর মেট্রো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ রফিউল করিম জানান, এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীণ। লাশ ময়না তদন্তের জন্য ওই হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।