গণবাণী ডট কম:
রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে কর্মচারীদের মারধরে নিহত পুশিলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুল করিমের দাফন গাজীপুরে সম্পন্ন হয়েছে। আজ সকালে গাজীপুরের ভাওয়াল রাজবাড়ি মাঠে জানাজার নামাজ শেষে তাকে সিটি করপোরেশনের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জানাজার নামাজে গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আজাদ মিয়া, কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মো: আমানত হোসেন খানসহ পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তাসহ বিপুল সংখ্যক মুসুল্লী অংশগ্রহণ করেন।
৩১ তম বিসিএস (পুলিশ) এর কর্মকর্তা আনিসুল করিম সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে বরিশাল মহানগর পুলিশে (বিএমপি) কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার আড়াল গ্রামে। তবে, ছোটবেলা থেকেই থেকেছেন গাজীপুর জেলা শহরের বরুদা এলাকায়। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন আনিসুল। তিনি এক সন্তানের পিতা। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৩৩ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।
আনিসের পরিবারের অভিযোগ ৩১ তম বিসিএস পুলিশের এই কর্মকর্তাকে মারধর করে হত্যা করা হয়েছে। ওই হাসপাতালটি ভর্তি করার কিছু সময় পরই তাকে মারধর করা হয় এবং এতে তিনি মারা যান।
আনিসুল করিমের ভাই রেজাউল বলেন, আনিস কিছুটা মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। সোমবার দুপুরে তাকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে যান। কাউন্টারে যখন ভর্তির ফরম পূরণ করছিলেন, তখন কয়েকজন কর্মচারী দোতলায় নেন। কিছুক্ষণ পর আনিসুল অজ্ঞান হওয়ার খবর পান। সেখান থেকে তাকে দ্রুত জাতীয় হৃদরোগ ইনিস্টিউটিটে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরও বলেন, পরে আদাবর থানা পুলিশের সহযোগিতায় হাসপাতাল থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। এতে দেখা যায় দুপুর ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল করিমকে টানাহেঁচড়া করে একটি কক্ষে ঢোকানো হয়, সেখানে হাসপাতালের ৬ কর্মচারী মিলে মাটিতে ফেলে চেপে ধরেন। এরপর নীল পোশাক পরা আরও দুজন কর্মচারী পা চেপে ধরেন। তার মাথার দিকে থাকা দুজন কর্মচারী হাতের কনুই দিয়ে আঘাত করে। এসময় হাসপাতালের ব্যবস্থাপক আরিফ মাহমুদ পাশে দাঁড়ানো ছিল। পরে একটি নীল কাপড়ের টুকরা দিয়ে আনিসুলের হাত পিছমোড়া করে বাঁধা হয়। কয়েক মিনিট পর আনিস জ্ঞান হারান। কর্মচারীদের একজন আনিসকে মুখে পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে। কিছু সময় পর সাদা অ্যাপ্রোন পরা একজন নারী কক্ষে প্রবেশ করেন। কক্ষের দরজা লাগিয়ে আনিসের বুকে পাম্প করেন ওই নারী। স্বজনদের দাবি, একজন চৌকষ পুলিশ অফিসারকে হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা ও মারধরের কারণে মৃত্যু বরণ করতে হয়েছে। এজন্য তারা চাইছেন দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি।
রেজাউল করিম আরো বলেন, আনিসের ব্লাডপ্রেসার ও হৃদরোগ ছিল। কিন্তু এ দুটির কোনোটিই মারাত্মক ছিল না। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গণপিটুনিতে তার ভাই মারা গেছে।
এদিকে, গাজীপুরের কাপাসিয়ার মেধাবী পুলিশ অফিসার ছিলেন আনিসুল করিম। আকস্মিকভাবে এ পুলিশ কর্মকর্তার এমন মৃত্যুতে নিহতের পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মো: আমানত হোসেন খান জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ শেষে নিহতের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং এ ঘটনায় দায়ীদের বিচার দাবী করেন।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আজাদ মিয়া নিহতের জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ শেষে পরিবারকে গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগীতার আশ্বাস প্রদান করেন।