গণবাণী ডট কম:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের জয় এখনো মেনে নেননি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগের বিষয়ে অনড় অবস্থান ধরে রেখেছেন। আজ সকালে এক টুইট বার্তায় তিনি এমন ইংগিতই করেছেন। সর্বশেষ তার টুইট বার্তায় তিনি বলেছেন,
“আপনার মনোভাব (অবস্থায়) কি তা আমি বিবেচনা করি না, এই কম্পিউটার ভোটিং সিস্টেমটি জালিয়াতি এবং হস্তক্ষেপের জন্য উন্মুক্ত”। সত্য, এবং কি ঘটতে যাচ্ছে তা না দেখা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন!
তবে, টুইটার কর্তৃপক্ষা ট্রাম্পের নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ বিতর্কিত বলে মন্তব্য জুড়ে দিয়েছে।
এদিকে, ট্রাম্প আইনি লড়াই শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার। কোনো প্রমাণ ছাড়াই এই অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পর পদত্যাগ করেছেন বিচার বিভাগের ঊর্ধ্বতন আইনজীবী রিচার্ড পিলজার। ভোট জালিয়াতি সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
এদিকে পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যে আনুষ্ঠানিক ফলাফল প্রকাশের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়েছে ট্রাম্পের প্রচারণা টিম। অন্যদিকে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের টালবাহানা বন্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে বাইডেনের প্রচারণা টিমও।
কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং নির্বাচনে জো বাইডেন নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু এই নির্বাচনের ফল মানতে নারাজ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে ফল জালিয়াতির অভিযোগ তুলে আইনি লড়াই শুরু করেছেন। সোমবার হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র কেইলি ম্যাকএনানি এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, নির্বাচন এখনো শেষ হয়নি। আইনি লড়াই মাত্র শুরু হয়েছে। তিনি নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুললেও এর সমর্থনে কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেননি। তার দাবি, পেনসিলভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়াতে রিপাবলিকান পর্যবেক্ষকদের কেন্দ্রে পর্যাপ্ত প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি বরং কর্মকর্তারা ডেমোক্র্যাট ভোটারদেরকে তাদের ভুলভাল ব্যালট ঠিক করে নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। অবশ্য ভোট কার্যক্রমের প্রত্যক্ষদর্শী সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, কেন্দ্রে সব দলের পর্যবেক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। করোনার কারণে ভোট গণনার টেবিলের ১৩ থেকে ১০০ ফুট দূরে ছিলেন তারা।
পদত্যাগ করলেন বিচার বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার। আইনজীবীদের এই নির্দেশ দেওয়ার পর পদত্যাগ করেছেন বিচার বিভাগের ঊর্ধ্বতন আইনজীবী রিচার্ড পিলজার। সাধারণত এই ধরণের তদন্ত তদারকির দায়িত্ব ছিলো তার।
ট্রাম্পের অনড় অবস্থানের মুখে অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার নির্বাচনি অনিয়ম তদন্ত করতে কেন্দ্রীয় প্রসিকিউটরদের নির্দেশ দিয়েছেন। আদেশে তিনি বলেছেন, যেসব অভিযোগের ভিত্তি রয়েছে সেগুলোরই তদন্ত হওয়া উচিত আর অনুমান নির্ভর ও কল্পনাপ্রসূত অভিযোগ এড়িয়ে যাওয়া উচিত। এর প্রেক্ষিতে পদত্যাগ করেছেন আইনজীবী পিলজার। সহকর্মীদের কাছে পাঠানো এক ইমেইল বার্তায় তিনি বলেছেন, নতুন নীতি ও এর বিভিন্ন যুক্তির দিক আমার জানাশোনা থাকায় আমি পরিতাপের সঙ্গে আমার পদ থেকে সরে যাচ্ছি।
রিপাবলিকান নেতারা ট্রাম্পের পাশে
আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর অনেক রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সিনেটে রিপাবলিকান পার্টির নেতা মিচ ম্যাককনেল। তিনি বলেছেন, আইন অনুযায়ী ভোট জালিয়াতির যেকোনো অভিযোগ তদন্তের দাবি তোলার শতভাগ অধিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রয়েছে। সংবিধানের আলোকে ধনী সংবাদমাধ্যমগুলোর এই প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই। এদিকে রিপাবলিকান রাজ্যগুলোর সরকারের পক্ষ থেকে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছে।
আইনি ব্যবস্থা নেবে বাইডেন শিবিরও
জো বাইডেনের যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ নেওয়ার কথা। এর আগেই বিদায়ী ও নতুন প্রশাসনের মধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তরের কাজটি সেরে নিতে হয়। তবে ট্রাম্প এখনো হার মেনে না নেওয়ায় সেই কাজ শুরু হয়নি। বাইডেনের প্রচারণা টিমের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে এখন আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছেন তারা। দুই প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়ের কাজটি করে থাকে জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিএসএ)। রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, জিএসএ কখন সরকার বদলের এ প্রক্রিয়া শুরু করবে সে ব্যাপারে আইনে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই। তবে বাইডেন শিবির বলছে, তাদের বিজয় পরিষ্কার। ফলে এখানে বিলম্ব বা কালক্ষেপণ করার কোনো সুযোগ নেই।