গণবাণী ডট কম:
এক বছর আগে ২৩শে জানুয়ারি ২০২০ সালে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর প্রথম লকডাউন করা হয়। ধারণা করা হয় এই শহর থেকেই প্রথম করোনাভাইরাস মহামারির রূপ নেয়।
সেই সময়ে বিশ্ববাসী এই কঠিন বিধিনিষেধ এবং সেটার কঠোর বাস্তবায়নে হতবিহবল হয়ে পড়ে। জানুয়ারির শেষ দিক থেকে জুন পর্যন্ত উহানকে দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়।
যদিও এই সিদ্ধান্তের উচ্চ মূল্য দিতে হয়েছে, কিন্তু দিন শেষে এই ভাইরাস মোকাবেলা করার একটা সফল কৌশল হিসেবে দেখা হয়েছে।
এক বছর হতে চলেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের এখন চীনেকে প্রায়ই ভাইরাস মোকাবেলায় সফল হিসেবে ধরা হয়।
সুতরাং ঠিক কীভাবে চীন লকডাউন থেকে আজ পর্যন্ত আসতে পারলো এবং বেইজিং কীভাবে তার নিজের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলো?
চীন কীভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকালো
২০১৯ সালের শেষের দিকে যখন প্রথম এই রোগের প্রাদুর্ভাব হয় তখন দেশটির কর্তৃপক্ষ “রহস্যজনক অসুস্থতা” বলে এর ব্যবস্থা একটু আস্তে ধীরেই নিয়েছিল।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে ছিল চীনের নতুন বর্ষ পালন উৎসব যেটাকে কেন্দ্র করে প্রচুর ভ্রমণের করে মানুষ।
চীন সেটাতে কোন বাধা দেয়নি।
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটা স্বাধীন প্যানেল একটা অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে বলেছে, কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নিতে ধীর গতিসম্পন্ন ছিল।
তারা চীনের সেই সময়কার প্রতিক্রিয়াকে সমালোচনা করে বলেছে ” সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে পদক্ষেপগুলো জোরপূর্বক প্রয়োগ করতে পারতো”।
কিন্তু যখনই চীন বুঝতে পারে এটা একটা সমস্যা তখনই কর্তৃপক্ষ সেটা কঠোরভাবে দমন করার উদ্যোগ নেয়।
জানুয়ারির ২৩ তারিখ।
চীনের নতুন বছর উৎযাপনের দুই দিন আগে উহানের রাস্তা জনশূন্য হয়ে পড়ে।
১১ মিলিয়ন লোককে কঠোর কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়।
মুখের মাস্ক এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক হয়ে যায়।
বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিয়ে তারা মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে বিশাল ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করে ফেলে।
তারপরেও উহানের বাসিন্দা উয়েজাং ওয়াং বলছিলেন তিনি কতটা ভীত ছিলেন।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, সেই সময় তার চাচা কীভাবে মারা গিয়েছিল, তারা বাবা -মা অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং মেডিকেল সহায়তা পাওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব।
উহান যে কৌশলে ভাইরাস মোকাবেলা করছিল সেভাবে চীনের অন্যান্য বড় শহর বেইজিং এবং সাংহাই তাৎক্ষণিক লকডাউন এবং ব্যাপক হারে পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা হয়।
ইতিমধ্যে চীন সেদেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠিন নিয়ম এবং কোয়ারেন্টিনে থাকার ব্যবস্থা করে।
কিন্তু প্রথম দিকে কর্তৃপক্ষ ভাইরাস সংক্রমণের খবরটা যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সে ব্যাপারেও ছিল কঠোর।
যেসব চিকিৎসক একে অপরকে সতর্ক করার চেষ্টা করেছিল, তাদের তিরস্কার করা হয়েছিল এবং তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যাতে করে তারা নীরব থাকে।
এদের মধ্যে একজন ছিলেন ডা. লি ওয়েনলিয়াং, যিনি এই ভাইরাস সংক্রমণে মারা যান।
সংবাদ মাধ্যমগুলো প্রাথমিক ভাবে কিছু প্রতিবেদন করতে পারছিল, কিন্তু নাগরিক সাংবাদিক যারা উহান থেকে খবর দিচ্ছিল তাদের কে চুপ থাকতে বলা হয়।
সম্প্রতি এদের একজনকে চার বছরের জেল দেয়া হয়েছে।
এসব পদক্ষেপ কী কাজে লেগেছিল?
যদিও চীনের এই কঠোর পদক্ষেপ মানুষের কাছে প্রথম দিকে কঠিন মনে হয়েছিল। কিন্তু এক বছর পর অফিসিয়াল তথ্যে দেখা যাচ্ছে, তাদের পদক্ষেপের ফলে তুলনামূলক কম মৃত্যু এবং শনাক্তের হার কম হয়েছে।
চীনে কোভিড ১৯-এ এ পর্যন্ত চার হাজার আটশ জন মারা গেছে এবং এক লক্ষ লোক সংক্রমিত হয়েছে।
অন্যান্য দেশের মত প্রাথমিক সংক্রমণের পর সংখ্যাটা একেবারে কমে আসে এবং সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ দেখা যায়নি।
যাই হোক, চীন যে হিসেব দিয়েছে সেখানে উপসর্গ ছিল না এবং কোভিড আক্রান্ত রোগীর কোন তথ্য দেয়নি, তাই কিছু পর্যবেক্ষক এটার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
উহানে জীবন এখন কেমন?
এক বছর পর উহানে জীবন অনেকটাই স্বাভাবিক।
তারপরেও বিধিনিষেধ থাকার কারণে উহান এবং দেশের অন্যান্য অংশের পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া কঠিন ছিল। তবে এটা নিশ্চিত যে গত বছর মানুষকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছে।
উহানের বাসিন্দাদের সাথে সম্প্রতি কথা বলা মনে হয় তাদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে শঙ্কা বোধ করছে।
উহানের বাসিন্দা হ্যান মেইমেই গণমাধ্যমকে বলেছেন, “এই মহামারি নিশ্চিতভাবে পেছনে কিছু ফেলে যাচ্ছে, যেটা হয়ত উপর থেকে নাও দেখা যেতে পারে,”।
তারপরেও কিছু চাইনিজ নাগরিক মনে করে চীন এই মহামারি ভালোভাবে সামাল দিয়েছে। বেইজিং এর কয়েকজন বাসিন্দা গণমাধ্যমকে এমনটাই বলেছেন।
অন্যদের জন্য এটা একে অপরের সঙ্গে বিরাট আকারে ঐক্য এবং যোগাযোগের ধারণা তৈরি করেছে।
উহানের একজন ছাত্র, যিনি নিজেকে লি সি বলে পরিচয় দিয়েছেন, তিনি বলেছেন, “মহামারির আগে মানুষ মনে হত কিছুটা বদমেজাজী, সব সময় ছুটছে - কিন্তু মহামারির পর তারা জীবনের প্রতি আরো বেশি কৃতজ্ঞ এবং অনেক বেশি আন্তরিক হয়েছে।”
হ্যান বলেছেন, “এই ধরণের বিপর্যয় মানুষকে আরো কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।” খবর: বিবিসি।