গণবাণী ডট কম:
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের একজন জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় জড়িত থাকা এবং রাজাকারদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনসহ আরো নানা অভিযোগ।
কাউন্সিলের ওই একই বৈঠকে, খোন্দকার মোশতাক আহমেদের নাম মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ‘স্মরণীয় বরণীয়’ ব্যক্তি হিসেবে যে রাষ্ট্রীয় তালিকা, সেখান থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তবে এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর করা বা না করা নির্ভর করছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করবে।
জামুকার সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাজাহান খান বলেন, “বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিদের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি ওই হত্যাকাণ্ডে মদদ দেয়ার কারণে জিয়াউর রহমানের খেতাবও বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা”।
তিনি জানান তাদের এসব সিদ্ধান্ত এখন মন্ত্রণালয়ে যাবে, তবে এটি গ্রহণ করা বা না করার ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ের আছে।
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকার জন্য পাওয়া খেতাব পরবর্তীতে বাতিলের সুযোগ আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে মিস্টার খান বলেন, একটা কমিটি এ নিয়ে কাজ করবে এবং তারাই এ বিষয়টি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখবে।
তবে জামুকার এ সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেনারেল জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, এটি মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের চরম অবমাননার শামিল এবং জিয়াউর রহমানের বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পাওয়া খেতাব বাতিলের অধিকার কারও নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির নেতারা জিয়াউর রহমানকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ বলে দাবি করে থাকে।
তবে জামুকার আরেকজন সদস্য এবং সংসদের অনুমিত হিসাব কমিটির সভাপতি আব্দুস শহীদ বলছেন, প্রফেসর ইব্রাহিমকে নিশানে পাকিস্তান খেতাব দিয়েছিলো পাকিস্তান। কিন্তু পরবর্তীতে ছয় দফা আন্দোলনকে সমর্থন করায় সেটি আবার কেড়েও নিয়েছিলো পাকিস্তান।
“কেউ একবার খেতাব পেলেও পরবর্তীতে তার কার্যক্রম দেশ ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে গেলে সরকার তো সেটি প্রত্যাহার করতেই পারে,” বলছিলেন মিস্টার শহীদ। ।
তিনি বলেন তারা সবকিছু পর্যালোচনা করে এবং মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রতি মানুষের আবেগ অনুভূতিকে বিবেচনায় নিয়ে সুপারিশ করেছেন।
“এখন মন্ত্রণালয় দেখবে তারা কতটুকু কী করতে পারে,” বলছিলেন তিনি।
তবে বিএনপি নেতা মোশাররফ হোসেন বলেছেন পুরো বিষয়টিই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও দেশের মানুষ এটি গ্রহণ করবে না বলেই মনে করেন তিনি। “জামুকা যে প্রস্তাব এনেছে তা দুর্ভাগ্যজনক। যদি এ ধরণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয় তা হলে এটা হবে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি চরম অবমাননার শামিল”।
মিস্টার হোসেন বলেন, “শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ২৬শে মার্চ ১৯৭১ তারিখ সকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে বিদ্রোহ করেছেন ও কালুরঘাট থেকে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন। দেশে বিদেশে সবার তা জানা । কেউ তা অস্বীকার করতে পারবেনা। তিনি প্রথম সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেন এবং পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলেন”।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার এবং জেড ফোর্সেরও কমান্ডার ছিলেন।
“এখন ৫০ বছর পর যদি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াকে অস্বীকার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তাহলে তা দেশের মানুষ গ্রহণ করবেনা “।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধের বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদক হিসেবে ৬৮ জনকে বীর উত্তম খেতাব দেয়া হয়েছিলো এবং এ তালিকায় তিন নম্বরে ছিলো জিয়াউর রহমানের নাম।
তালিকায় যাদের নাম ছিলো তাদের মধ্যে আব্দুল কাদের সিদ্দিকী ছাড়া বাকী সবাই সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য ছিলেন।
এখানে বলে রাখা ভালো পঁচাত্তরে শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার পর ধীরে ধীরে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন জিয়াউর রহমান।
আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলো বরাবরই ওই হত্যার পরিকল্পনায় জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করে থাকেন। খবর : বিবিসি।