গণবাণী ডট কম:
বিশ্ব মহামারি করোনা ভাইরাস বা কোভিড ১৯ এর সংক্রমণ রোধ করার লক্ষে চলমান সার্বিক কার্যাবলী ও চলাচলের বিধি নিষেধের মেয়াদ কিছু শর্ত শিথিল করে আবারও বাড়ানো হয়েছে। শর্ত শিথির করায় এবার চলবে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ। উন্মুক্ত থাকবে হোটেল রেস্তোরাঁও৷ তবে একে বিধিনিষেধ বলতে নারাজ বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ৷
এবার লকডাউন বাড়ানোর সাথে আরো কয়েকটি ঘোষণা এসেছে৷ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্রেন, দূরপাল্লার বাস ও লঞ্চ চলবে৷ হোটেল, রোস্তারাঁ, খাবারের দোকানে বসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খাওয়া যাবে৷ যানবাহনে অর্ধেক আসন খালি থাকবে৷ ভাড়া দিতে হবে শতকরা ৬০ ভাগ বেশি৷ সোমবার থেকে এসব নিয়ম কার্যকর হচ্ছে৷ আজ এ বিষয়ে নতুন করে প্রজ্ঞাপণ জারি করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপণে জানানো হয়, আগামী ৩০ মে পর্যন্ত বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। আগামীকাল থেকে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলবে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ। তবে সেক্ষেত্রে জনগণকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সেই সঙ্গে হোটেলে বসে খাওয়া যাবে।
দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর গত ৫ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর লকডাউন’ শুরু হয়৷ কিন্তু তিনদিনের মাথায় তা ঢিলেঢালা হয়ে যায়৷ পুলিশের ‘মুভমেন্ট পাস’ নিয়েও চলাচলের কথা বলে হলেও পরের দিকেও তাও শিথিল হয়ে পড়ে৷ এরপর ধারাবাহিকভাবে বিধিনিষেধের সময়সীমা বাড়ে সঙ্গে একে একে সব খুলেও দেয়া হয়৷ ঈদের সময় ফেরিঘাটে বিজিবি মোতায়েন করেও বাড়িমুখো মানুষের ঢল থামানো যায়নি৷ ঈদের পরও তারা এসেছেন একইভাবে৷
এর আগে গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হলে ২৬ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিন সব কিছু বন্ধ ছিলো৷ আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয় ১৮ মার্চ থেকে৷
দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন সাত লাখ ৮৯ হাজার ৮০ জন৷ করোনায় মারা গেছেন ১২ হাজার ৩৭৬ জন৷ আর রবিবার ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ২৮ জন৷ করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৩৫৪ জনের৷
ভাইরোলজিস্ট ও করোনা সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য এবং বিএসএমইউ’র সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মনে করেন, ‘‘দূরপাল্লার বাস এবং ট্রেন চলাচল শুরুর চাপ ছিলো৷ তাই সরকার কৌশলে বিষয়টি সহজ করে দিয়েছে৷ বিধিনিষেধের সময়ও বাড়িয়েছে আবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কিছু খোলারও অনুমতি দিয়েছে৷ সরকার একটা কৌশল অবলম্বন করেছে৷ আসলে তো সব কিছু তো খুলেই গেছে৷”
তিনি বলেন, ‘‘ঈদের সময় স্বাস্থ্যবিধি না মানার যে ব্যাপক প্রবণতা দেখা গেছে তার প্রভাব দেখতে আমাদের আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে৷ কারণ কেউ সংক্রমিত হলে তা প্রকাশ পেতে কমপক্ষে ১৪ দিন সময় লাগে৷ তাই আগামী ২৬-২৭ তারিখে তা বোঝা যাবে৷’’
তার মতে, ‘‘বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে পুরোপুরি লকডাউন সম্ভব নয়৷ তাই আমরা সরকারকে শুরু থেকে স্বাস্থ্যবিধির ওপর জোর দিতে বলেছিলাম৷ বিশেষ করে মাস্ক পড়ার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে বলেছি৷ কিন্তু সেটা হয়নি৷ এখনো বলছি সবাইকে মাস্ক পরাতে হবে৷ স্বাস্থ্যবিধি মানাতে হবে৷ এর কোনো বিকল্প নাই৷’’
সোহারাওয়ার্দী হাসপাতালের ভাইরোলজিস্ট ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘‘এখন যা হচ্ছে তা বোঝা কঠিন৷ সবকিছুই তো খুলে দেয়া হচ্ছে৷ তাহলে বিধিনিষেধ কোথায়? আমরা শুরু থেকেই এই অব্যস্থাপনা দেখে আসছি৷ সেটা নিয়ে এখন বলতে বলতে ক্লান্ত৷ আর বলতে ইচ্ছা করে না৷’’
তার মতে, ‘‘যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমেছে৷ এখন খুলে দেয়া হয়েছে৷ কিছু দিন পর এর ফলাফল বোঝা যাবে৷’’
এদিকে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই আমরা নতুন নির্দেশনা দিয়েছি৷ সংক্রমণ বাড়লে আমাদের সিদ্ধান্তও পরিবর্তন হবে৷’’এদিকে ভারতে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন ধরনে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে নয়জন শনাক্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷ সন্দেহভাজন আরও কয়েকজনের নমুনা জিনগত পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে৷ খবর : ডয়চেভেলে ও অন্যান্য।