গণবাণী ডট কম:
প্রায় দেড় বছর পর গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানাধীন পারাবর্থা সাকিনস্থ পূর্বাচল ২৫নং সেক্টর এলাকার বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর ভূমি ব্যবসায়ী মজিবর রহমান হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতার করল পিবিআই গাজীপুর।
নিহতের নাম মজিবর রহমান (৫০)। তিনি রাজধানীর খিলক্ষেত থানাধীন ডেলনা এলাকার আছিম উদ্দিনের ছেলে।
গ্রেফতারকৃত আসামীর নাম মোঃ রাসেল (৩৫)। তিনি রাজধানীর খিলক্ষেত থানার পাতিরা এলাকার মৃত রুহুল আমিনের ছেলে।
আসামী মোঃ রাসেলকে গ্রেফতার করে গত ১৮ মে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে আসামী নিজেকে এবং ঘটনার সাথে জড়িত অপর আসামীদের নাম উল্লেখ করে এই হত্যাকান্ডের বিষয়ে পরিকল্পনা এবং অন্যান্য আসামীদের কার কি ভূমিকা ছিল বিস্তারিত বর্ণনা করে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গাজীপুরে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বৃহস্পতিবার বিকালে এসব তথ্য জানান।
তিনি আরো জানান, গত ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর সকাল ১১টার দিকে মজিবর রহমান ব্যবসায়িক কাজের কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। ঐ দিন দুপুর অনুমান সাড়ে ১২টার সময় তার স্ত্রীর সাথে পারিবারিক বিষয়ে কথা বলে। পরবর্তীতে ভিকটিম মজিবর রহমানের মোবাইল ফোনে তার পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ঘটনার পরের দিন ২৯ ডিসেম্বর দুপুরে মজিবরের প্রতিবেশী স্থানীয় সাবেক ইউ.পি সদস্য নাঈম বেপারী @ নাইম মেম্বার ঘটনাস্থলের পার্শ্বের লোকজনের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে ভিকটিম মজিবর রহমানের স্ত্রীকে ফোন করে জানান কালীগঞ্জ থানাধীন পারাবর্থা সাকিনস্থ পূর্বাচল ২৫নং সেক্টর ওয়ের্ষ্টান চত্তরের অনুমান ৩০০/৪০০ গজ পশ্চিমে ৫৩নং গজারী বনের ভিতরে তার স্বামীর লাশ পড়ে আছে। এ সংক্রান্তে ভিকটিমের মজিবর রহমানের স্ত্রী রুমি বেগম বাদী হয়ে কালিগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করলে সূত্রে বর্ণিত মামলাটি রুজু হয়।
মামলাটি কালিগঞ্জ থানা পুলিশ প্রায় ৩ মাস তদন্ত করে কোন রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় মামলাটি তদন্তাধীন অবস্থায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স পিবিআই গাজীপুর জেলাকে তদন্তের নির্দেশে প্রদান করে।
অতিরিক্ত আইজিপি পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই, গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমানের সার্বিক সহযোগীতায় পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ হাফিজুর রহমান মামলাটি তদন্ত করেন।
তদন্তকালে মোঃ রাসেলকে গত ১৮ মে রাতে ডিএমপির খিলক্ষেত থানাধীন পাতিরা এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী জানায়, তিনিসহ ঘটনায় জড়িত তার সহযোগী আসামীরা এবং ভিকটিম মজিবর জমি ক্রয়-বিক্রয়ের মিডিয়া হিসেবে কাজ করত। জনৈক মোঃ নছু মিয়ার মালিকানাধীন পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকার ২৩নং সেক্টরের ৪০৪ নং রোডের ৮নং প্লটটি বিক্রি করার জন্য ভিকটিম মজিবরকে দায়িত্ব দেয়। পরে ভিকটিম ও ঘটনায় জড়িত অপর আসামীরা উক্ত প্লটটি ভাল দামে বিক্রি জন্য চূড়ান্তভাবে মূল্য নির্ধারন করে। ঐ প্লটটি বিক্রয় করে যে লভ্যাংশ হবে তার অংশ ঘটনায় জড়িত আসামীরা ভিকটিমের নিকট দাবী করে। ভিকটিম যে টাকা লভ্যাংশ পাবে তা আসামীদেরকে দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ভিকটিম মজিবরের সাথে আসামীদের মনোমালিন্য হয়। আসামীরা ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
তিনি আরো জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী আসামীরা ভিকটিমকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে মাদক সেবনের জন্য পূর্বাচল ২৫নং সেক্টরে গজারী বনের ভেতর গিয়ে ভিকটিমের সাথে মাদক সেবন করে। ভিকটিম মাদক সেবনের পর ঘটনায় জড়িত আসামীরা ভিকটিম মজিবরের কপালে একটি ঘুষি মেরে মামলার ঘটনাস্থলে মাটিতে ফেলে দেয়। তখন ভিকটিম চিৎকার দিলে আসামীরা ভিকটিম মজিবরের হাত ধরে বুকের উপর বসে পা ধরে এবং প্লাস দিয়ে পায়ের নখ উঠায়। ভিকটিম চিৎকার দিলে ভিকটিমকে আসামীরা গলা চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, ঘটনাটি প্রায় দেড় বছর আগের ঘটনা। অত্র মামলার ভিকটিম মজিবরের বাড়ি খিলক্ষেত থানাধীন হলেও সে মূলত রাজউক পূর্বাচল এলাকার প্লট বিক্রয়ের মিডিয়া হিসেবে কাজ করত। ঘটনায় জড়িত আসামীরা ভিকটিমের মত একই কাজ করত। ডিএমপি, ঢাকা খিলক্ষেত থানার পাতিরা এলাকায় নছু মিয়া নামের একজন ব্যক্তির মালিকাধীন প্লট বিক্রির মিডিয়া হিসেবে ভিকটিম মজিবর কাজ করে। ঘটনায় জড়িত আসামী রাসেল ও অন্যান্য আসামীরা ভিকটিমকে উক্ত প্লট বিক্রয়ে সহায়তা করে। কিন্তু ভিকটিম মজিবর প্লট বিক্রয়ের পর যে লভ্যাংশ পাবে তা অন্য কোন ব্যক্তিকে দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে গ্রেফতার কৃত আসামী সহ তার সহযোগী আসামীরা ঘটনার দিন ভিকটিমকে মোবাইল যোগে ডেকে এনে মাদক সেবন করার কথা বলে মামলার ঘটনাস্থল নির্জন গজারী বনে নিয়ে এসে প্লাস দিয়ে পায়ের নখ উঠায়। পায়ের নখ উঠানোর সময় ভিকটিম চিৎকার দিলে উক্ত আসামীরা তাকে গলা টিপে হত্যা করে। মূলত প্লট বিক্রয়ের লাভের টাকা ভাগাভাগি বিষয়ে বিরোধের জের ধরে ভিকটিম মজিবরকে আসামীরা নির্মমভাবে হত্যা করে।