গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগরীর পূবাইল এলাকায় প্রেমের সম্পর্ক মেনে না নেয়ায় অভিমানে একদিনের ব্যবধানে প্রথমে প্রেমিকা ও পরে প্রেমিক আত্মহত্যা করেছে।
গত ১৮ জুলাই রাতে নিজ ঘরের ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন কলেজ ছাত্রী তাসমিম তাহসিন আলিফ। তার একদিন পর বুধবার ভোরে বাড়ীর পাশে পেয়ারা গাছে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে যুবক ফাহিম হোসেন শান্ত।
মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটেছে গাজীপুর মহানগরীর পূবাইল থানাধীন হারবাইদ গ্রামে। এঘটনায় এলাকা শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
আত্মহননকারী ফাহিম হোসেন শান্ত (২২) গাজীপুর মহানগরীর পূবাইল থানাধীন হারবাইদ গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে। তিনি গত বছর করোনার কারণে অটো এইচএসসি পাস করেন। মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বাড়ীতে অবস্থান করছিল। সম্প্রতি তিনি কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তার পিতা খলিলুর রহমান মহানগরীর মীরের বাজারে টিভি/ফ্রিজ মেরামতের দোকান চালাতেন। বর্তমানে শান্তর অপর দুই ভাই সেটি দেখাশুনা করে।
এর আগে আত্মহননকারী তাসমিম তাহসিন আলিফ একই গ্রামের আমিনুল ইসলাম বুলবুলের মেয়ে। আমিনুল ইসলাম বুলবুল বৃন্দান উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক। আলিফ স্থানীয় জাপান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ছিল।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, শান্ত ও আলিফের বাড়ী একই গ্রামের আধা কিলোমিটার দুরত্বে। ছোট সময় থেকে একসাথে বেড়ে ওঠে। স্কুলে পড়ার সময় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরী হয়। সম্পর্কের বিষয়টি তাদের উভয় পরিবার ও স্থানীয়রা সকলেই জানে। কিন্তু আলিফের পরিবার বিষয়টি সব সময় অপছন্দ করতো। এরই জের ধরে আলিফ গত ১৮ জুলাই রাতে নিজ ঘরে ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনার একদিন পর গত ২০ জুলাই বুধবার ভোরে শান্ত বাড়ীর পাশে পেয়ারা গাছে ঝুলে আত্মহত্যা করে।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুস সালাম জানান, সম্প্রতি তাদের সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে দুই পরিবারের টানাপোড়েন চলছিল। গত ১৮ জুলাই এ নিয়ে আলিফের পরিবারে সদস্যরা আলিফকে শাসন করে। ঐদিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে আলিফ ফোন করে শান্তকে বলে, তুমি আমাকে নিয়ে যাও। আমি এখানে থাকতে পারব না। তখন শান্ত তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলে এক পর্যায়ে আলিফ আত্মহত্যা করার হুমকি দেয়। তারপর শান্ত একাধিকবার আলিফকে ফোন করলেও সে ফোন রিসিভ করেনি। পরে শান্ত ফোন করে বিষয়টি আলিফের মাকে জানায়। পরে আলিফের মা ও পরিবারের অন্যরা গিয়ে দেখে ঘরের দরজা বন্ধ। তখন জানালা দিয়ে আলিফকে ঘরের আড়ার সাথে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে থাকতে দেখে। তিনি আরো বলেন, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই ও পুলিশ রাতেই এসে লাশ উদ্ধার করে।
তিনি আরো জানান, আলিফ আত্মহত্যা করার পর থেকেই শান্ত অন্যরকম হয়ে যায়। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। একারণে আমরা নজরে রেখেছিলাম। যে অনেকবার তাকে আলিফের কবরে নিয়ে যাবার অনুরোধ করে। বুধবার ভোরে ফজরের নামাজ পড়ার সময় সুযোগ পেয়ে শান্ত বাড়ির দক্ষিণ পাশে পেয়ারা গাছের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
জিএমপির পুবাইল থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক মিলন মিয়া জানান, খবর পেয়ে আমি সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে যাই। গিয়ে দেখি বাড়ীর দক্ষিণ পাশের একটি পেয়ারা গাছে শান্তর লাশ ঝুলে থাকতে দেখি। পরে লাশ নামিয়ে সুরত হাল করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুবাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিদুল ইসলাম বলেন,প্রাথমিকভাবে জানা গেছে আত্মহননকারী দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত ১৮ তারিখ কলেজ ছাত্রী এবং বুধবার ভোরে যুবক আত্মহত্যা করেছে। এসব ঘটনায় পৃথক অপমৃত্যূ মামলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।