নিজস্ব প্রতিবেদক, কাপাসিয়া (গাজীপুর):
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের দস্যু নারায়নপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নুরুল ইসলাম মোল্লার বাড়িতে বুধবার গভীর রাতে আগুনে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই হয়েগেছে।
আগুন লাগার খবর পেয়ে কাপাসিয়ার ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ঐ বাড়ীতে যাওয়ার রাস্তা স্বরুপথ হওয়ায় সময়মতো ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি। বাড়ির মালিক ঘটনাটিকে নাশকতা হতে পারে বলে আশংকা করছেন।
স্থানীয়রা জানায়, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নুরুল ইসলাম মোল্লার বাড়িটি মাটির দেয়াল দিয়ে ইউ আকৃতির। চারপাশে মাটির দেয়াল উপরে টিনের চালা। বিশাল বাড়িতে নুরুল ইসলাম মোল্লা তার স্ত্রী শিক্ষিকা আকতারা বেগম ও এক ছেলে এবং অপর তিন ছেলের পরিবারের সদস্যরা বসবাস করেন। প্রতিদিনের মতো বুধবার রাতে সকলেই রাতের খাবার খেয়ে নিজ নিজ ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত একটার দিকে আগুন জ্বলার শব্দ ও তাপে ঘুম ভেঙ্গে গেলে হঠাৎ তারা বাড়ীতে আগুন দেখতে পান। আগুনের লেলিহান শিখা খুব দ্রুত পুড়ো বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। এসময় বাড়ির সকলে দ্রুত বাড়ীর তালাবদ্ধ কলাপসিবল গেইট খুলে বাড়ী থেকে বের হয়ে আসেন। পরে কাপাসিয়া ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। এসময়ের মধ্যে ঘরের চাল থেকে আগুন ঘরের ভিতরে থাকা খাট, আলমিরা, সোকেজ, সোফাসেটসহ সকল আসবাবপত্র, কাপড়-চোপড়, জরুরী প্রয়োজনীয় মূল্যবান কাগজপত্র সবকিছু পুড়ে যায়। এতে এই পরিবারটির প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে ধারণা করা হচ্ছে।
গৃহকতার্র বড়ছেলে সাইফুল ইসলাম মোল্লা জানান, রাত একটার দিকে হঠাৎ আগুনের তাপে আমরা ঘুম থেকে জেগে উঠি। কোনকিছু বুঝে উঠার আগেই পুড়ো বাড়ির টিনের চালে আগুন ছড়িয়ে যায়। মেঝো ভাই কায়কোবাদ চাকুরী সুবাদে কুয়েত প্রবাসী এবং ছোটভাই রাসেল চাকুরী সুবাদে ঢাকায় থাকে। তাদের সকলের স্ত্রী সন্তানরা বাড়িতেই ঘুমিয়ে ছিলো। আল্লাহর রহমতে তাদের জীবন বাঁচাতে পেরেছি কিন্তু ঘরে থাকা আলবাবপত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র আমরা রক্ষা করতে পারিনি।
কাপাসিয়া ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার সাবেদ আলী খান জানান, সংবাদ পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করি। গ্রামের সরু রাস্তা থাকায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি নিয়ে অগ্নিকাণ্ডের স্থলে যাওয়া যায়নি। আগুন নিভানোর যন্ত্র হাতে টেনে নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
গৃহকর্তা নুরুল ইসলাম মোল্লা জানান, এর আগে ২০০৯ সালে প্রতিবেশীদের সাথে জায়গা-জমি সক্রান্ত একটি বিরোধের জের ধরে কে বা কারা রাতের আধারে দুই দফা আমাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেই সময় ঘরের সকল দরজা বাইরে থেকে আটকিয়ে দেয়া হয়। পূর্বে ঘটনা এবং গতকালের আগুনের ধরণ দেখে মনে হচ্ছে এটি নাশকতা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কাপাসিয়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা একেএম গোলাম মোর্শেদ খান, কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম নাসিম ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন। গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ্ রিয়াজুল হান্নান রিয়াজসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের লোকজনকে শান্তনা দেন। গাজীপুর-৪ আসনের সাংসদ সিমিন হোসেন রিমি খবর পেয়ে মুঠোফোনে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের গৃহকতার সাথে কথা বলেন শান্তনা প্রদান করেন। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
কাপাসিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম নাসিম জানান, আগুনে পুরো বাড়িটি পুরে গেছে এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘটনাটি নাশকতা কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আগুনে পুড়ে যাওয়া পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি, পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এব্যাপারে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা একেএম গোলাম মোর্শেদ খান বলেন, কি পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার একটি হিসাব করে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদ এর মাধ্যমে পরিবারটিকে সাহায্য করার হবে।