গণবাণী ডট কম:
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কোন জমি কেনার পর তার দলিল নিবন্ধন করতে হয়। কিন্তু সরকারের বাধ্যতামূলক এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে গিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয় নিবন্ধনের জন্য আসা মানুষদের।
জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ এড়াতে বিশেষ করে অবৈধ দখল রোধ করতে বাংলাদেশের আইনে জমির নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকারি নিয়মে একটি জমি নিবন্ধনে ২৮ থেকে ৪৫ কর্মদিবস সময় লাগার কথা থাকলেও বাস্তবের চিত্র পুরো ভিন্ন। নিয়ম বহির্ভূত টাকার লেনদেন তো হয়ই তার ওপর সময়ও বেশি লাগে। ভূমির দলিল নিবন্ধনের এমন নানা অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে আজ (সোমবার) একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এই গবেষণার ব্যাপারে জানান যে, বাংলাদেশে ভূমি দলিল নিবন্ধন সেবা খাতে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, “ভূমি নিবন্ধন অফিসে প্রয়োজনীয় জনবল নেই, তাদের প্রশিক্ষণ নেই, আইনি কাঠামোতে ঘাটতি আছে এমন আরও অনেক সমস্যা আছে। তবে সবচেয়ে বড় অনিয়ম হয় সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে নিয়ম-বহির্ভূতভাবে কর্মকর্তারা অর্থ নিয়ে থাকেন।” কোন গ্রাহকের থেকে কত অর্থ আদায় করা হবে সেটা দালালদের কাছে পুরো সরকারি রেটের মতোই নির্ধারিত থাকে বলে জানান তিনি। ভূমি নিবন্ধন দপ্তরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেকে এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “নিয়ম বহির্ভূতভাবে উত্তোলন হওয়া টাকার পঞ্চাশ শতাংশ পান সাব রেজিস্টার । আর বাকি টাকা অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা হয়।”
ভূমি নিবন্ধনের আগের ও পরের সব কাজ ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকলেও নিবন্ধন প্রক্রিয়া হয় আইন ও বিচার বিভাগের অধীনে। এই পুরো প্রক্রিয়ায় সমন্বয় আনা না গেলে শৃঙ্খলা ফেরানো কঠিন হবে বলে মনে করেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান পাটোয়ারি। “ভূমি সংক্রান্ত প্রত্যেকটা কাজ স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে আমরা আইন ও বিচার বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে কাজ করার চেষ্টা করছি। এ নিয়ে আমরা তাদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। এই দুটো পক্ষ যদি এক হয়ে কাজ করে তাহলে গ্রাহকদের আরও ভাল সেবা দেয়া যাবে। সমন্বয় ছাড়া বিষয়টা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন,” বলেন মি. পাটোয়ারি।
এদিকে ভূমি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ঢালাওভাবে দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে তা অস্বীকার করেছেন আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মোঃ গোলাম সারওয়ার। তার মতে, এগুলো বিচ্ছিন্ন কয়েকটি অভিযোগ যেগুলো তারা গুরুত্ব দিয়েই দেখছেন। মি. সারওয়ার বলেন, “ঢালাওভাবে অনিয়ম দুর্নীতি হচ্ছে এটা আমি বলবো না। হ্যাঁ, কিছু ব্যতিক্রম ঘটনা হয়তো ঘটেছে। আমাদের নলেজে এমন কোন অভিযোগ এলেই আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নেই। আর আমরা এগুলো মনিটর করি যেন কোন অভিযোগ এলেই সাথে সাথে অ্যাকশন নেয়া যায়।” প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ ধরণের অনিয়ম দূর করতে শিগগিরই ভূমি নিবন্ধনের পুরো প্রক্রিয়াটি ডিজিলাইজড করার কথাও জানান তিনি। যেন অনলাইনেই সবকিছু সম্পন্ন করা যায়।
টিআইবির ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী দলিল নিবন্ধনে এক হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ম বহির্ভূত অর্থ লেনদেন হয়ে থাকে। একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট নিয়মভঙ্গের পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণ করছে বলে ওই গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। খবর : বিবিসি।