নিজস্ব প্রতিবেদক, কাপাসিয়া (গাজীপুর) :
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, শিক্ষাকে বাস্তব ও কর্মমুখী করার জন্য নতুন কারিকুলাম প্রণয়ন করা হয়েছে। ‘ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রমে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অবিভাবক, শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে আমরা নতুন শিক্ষাক্রম এমনভাবে তৈরি করেছি যেখানে শিক্ষা হবে আনন্দময়। পরীক্ষা থাকবে কিন্তু থাকবে না পরীক্ষাভীতি। ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে শিখবে শিক্ষার্থীরা।’
শিক্ষামন্ত্রী রোববার (১ জানুয়ারি) সকালে মাধ্যমিকের কেন্দ্রীয় পুঠ্যপুস্তক উৎসব-২০২৩ উপলক্ষে গাজীপুরের কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে নতুন পাঠ্যপুস্তক তুলে দেন শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি। করোনা মহামারীর কারণে ২০২১ ও ২০২২ সালে নতুন বছরের প্রথমদিনে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে পাঠ্যপুস্তক তুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি।
শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, আমরা এমন শিক্ষা কার্যক্রম তৈরি করেছি যেখানে শিক্ষা হবে আনন্দময়। কোন মুখস্ত বিদ্যার বালাই থাকবে না। তার মধ্য দিয়ে জীবনব্যাপী যে পথ সারা বিশ্ব খুলে দিতে চায় প্রতিটি মানুষের জন্য সে পথ তোমাদের জন্য খুলে যাবে। আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানমনস্ক হবে। প্রযুক্তি বান্ধব শুধু নয়, প্রযুক্তি ব্যবহার ও উদ্ভাবনে তারা দক্ষ হবে। তারা মানবিক মানুষ হবে, সৃজনশীল মানুষ হবে। আমরা সত্যিকারের সোনার মানুষ হবো। যেন সোনার বাংলা গড়তে পারি। আজ এই নতুন শিক্ষা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে সোনার মানুষ গড়তে চাই।
দীপু মনি বলেন, সারা দেশ আজ বই উৎসব পালন করছে। এখানে বছরের প্রথম দিন বই উৎসব হয়। আমাদের কোটি কোটি শিক্ষার্থী এই বই উৎসবের অংশগ্রহণ করে। সেই ২০১০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আমরা ৪৩৪ কোটি ৪৫ লাখ ৮০ হাজার ২১১টি বই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। এটি পৃথিবীর ইতিহাসে একটি অচিন্তনীয় ব্যাপার। এ বছর সারাদেশে মোট ৪ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার ৩৮১জন শিক্ষার্থীর হাতে মোট ৩৩ কোটি ৪৮ লাখ ৭৮ হাজার ৮৩৩ টি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে।
দীপু মনি বলেন,বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। কেউ যেন কোনদিন বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখতে না পারে। তার জন্য আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে তৈরি করে দিয়েছে এবং স্বপ্ন দেখিয়েছেন স্মার্ট বাংলাদেশের। তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের নাগরিক হবে স্মার্ট নাগরিক, সরকার হবে স্মার্ট সরকার, দেশের কৃষি হবে স্মার্ট কৃষি, অর্থনীতি হবে স্মার্ট অর্থনীতি সমাজ হবে স্মার্ট সমাজ। এসব করার জন্য যেটি দরকার সেটি হলো স্মার্ট শিক্ষা।
পাঠ্যপুস্তক উৎসব অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও গাজীপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. কামাল হোসেন, এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর মো: ফরহাদুল ইসলাম, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর মহাপরিচালক নেহাল আহামেদ, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: হাবিবুর রহমান, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোঃ ওমর ফারুক, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোতাহার হোসেন মোল্লা,কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো আমানত হোসেন খান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোর্শেদ খান। অনুষ্ঠানে নতুন বই পাওয়ার বিষয়ে শিক্ষার্থী ইলমা ইসলাম সিমি তার অনুভূতি প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে সিমিন হোসেন রিমি এমপি বলেন, বই হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে বড় বন্ধু। জ্ঞানী মানুষ স্মার্ট মানুষ গড়ে ওঠার জন্য বই বিকল্প নেই।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, শুধু পড়ার বই পড়লে হবে না, গল্পের বই পড়তে হবে। বইয়ের পাশাপাশি জীবন থেকে শিখতে হবে। বাবা-মার কাছ থেকে শিখতে হবে। আমরা তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করে ভাষা শেখার চেষ্টা করব।
আয়োজকরা জানান, বই উৎসবে কাপাসিয়া উপজেলার ৫২টি উচ্চ বিদ্যালয়, ৩৮ টি মাদ্রাসা ও একটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া হয়। এছাড়া একই দিন জেলার প্রাথমিক পর্যায়ের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৬ লাখ ১২ হাজার ৩৫১ জন শিক্ষার্থীদের হাতে মোট ২৫ লাখ ৪০ হাজার ২৩৪ টি পাঠ্যপুস্তক, মাধ্যমিক পর্যায়ের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৬ লাখ ৯২ হাজার ৭৩০ জন শিক্ষার্থীদের হাতে মোট ৮৭ লাখ ৭৬ হাজার ৬৮৯ টি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে।
উৎসবে আগত উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা বলেছেন, নতুন বছরে নতুন বই পেয়ে খুশি তারা।