গণবাণী ডট কম:
বেশ কিছুদিন ধরেই জাহাঙ্গীর আলমের অনুসারীরা সুখবর পেতে যাচ্ছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছিল। সোমবারে প্রধানমন্ত্রীর সাথে মা ও ছেলের সাক্ষাতের মধ্যদিয়ে সে প্রচার সত্যি হতে চলেছে। সহসাই জাহাঙ্গীর আলম দলে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষোতে এমন ইঙ্গিতই পেয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম এবং তার মা জায়েদা খাতুন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নব নির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুন সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন। এসময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন তার ছেলে, আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কৃত সাবেক গাজীপুর সিটি মেয়র এড. মো: জাহাঙ্গীর আলম ।
যোগাযোগ করা হলে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি জাহাঙ্গীর আলম নিশ্চিত করেছেন। তবে, তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, আপনারা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জেনে নেন।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ আল মামুন মোর্শেদ বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও তার মা সোমবার দুপুরের পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসেছিলেন। তবে, তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করেছেন কি না বিষয়টি আমার জানা নেই।
তবে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র ও জাহাঙ্গীর আলমের ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর সাথে জাহাঙ্গীর আলম ও তার মায়ের সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এসব সূত্রে জানা গেছে, মা ও ছেলে সোমবার দুপুর ১টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রবেশ করেন। তারা সেখানে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অবস্থান করেন।
সূত্র মতে, মা ও ছেলে এসময়ের মধ্যে কোন এক সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তারা প্রায় ১০ মিনিটের কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে প্রথমে সালাম ও কুশলাদি বিনিময় হয়। পরে গাজীপুরের উন্নয়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন জায়েদা খাতুন। তিনি গাজীপুরের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা কামনা করেন। এসব আলাপের মধ্যে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জাহাঙ্গীরের প্রসঙ্গ তোলেন। এসময় জায়েদা খাতুন বলেন, আমার ছেলেকে (জাহাঙ্গীর) আপনার কাছে নিয়ে এসেছি। সে তো আপনারও ছেলে। আমি তাকে আপনার হাতে তুলে দিলাম। এখন আপনি যা ভালো হয় করেন।
সূত্র জানায়, এসময় সেখানে উপস্থিত জাহাঙ্গীর আলম কেঁদে ফেলেন। জাহাঙ্গীর আলম প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আমাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে। তারা যেসব অভিযোগ করেছে, সেগুলো সত্যি নয়।
সূত্র জানায়, এসময় প্রধানমন্ত্রী জাহাঙ্গীরকে কাঁদতে নিষেধ করে বলেছেন, ‘যাও সেক্রেটারির সঙ্গে দেখা করো। আমি দেখব।’
প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের পর জাহাঙ্গীর আলম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমার মা আমাকে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছেন। তিনিও আমার মা। সন্তান হিসেবে মায়ের কাছে গিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে তা জানিয়েছি। তিনি বলেছেন, দেখবেন।’
জানা গেছে, গত ১৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে আবেদন করেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জায়েদা খাতুন ও তার পুত্র জাহাঙ্গীর আলম। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবার তাদের সাক্ষাতের সময় দেন শেখ হাসিনা।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে। তাতে জাহাঙ্গীর আলম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। পরে তাকে প্রথমে শোকজ ও পরে আওয়ামী লীগ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। দল থেকে বহিষ্কারের ৭ দিন পর ২৫ নভেম্বর বিভিন্ন অভিযোগে তাকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে স্থানীয়র সরকার মন্ত্রণালয় ও দুদক পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। দেশের বিভিন্ন জেলায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়। পরে তিনি মেয়র পদ ফিরে পেতে উচ্চ আদালতে আপীল করেন। পরে জাহাঙ্গীরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন দল তাকে সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দেয়।
কিন্তু দলে ফেরার পর গত ২৫ মে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পাননি। পরে জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হন। সাথে তার মাকেও মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী করেন। বাছাইয়ে একটি ঋণ খেলাপী প্রতিষ্ঠানের ঋণের জামিনদার হওয়ার জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। আপীলেও তিনি প্রা্থীতা ফিরে পাননি। তবে তার মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর মায়ের পক্ষে নির্বাচনে নেমে একের পর এক সরকার ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে দেন জাহাঙ্গীর। পরে তাকে পুনরায় আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানতে হারিয়ে মেয়র পদে বিজয়ী হন। তারপর থেকেই জাহাঙ্গীর আলম আবার দলে ফেরার চেষ্টা করে আসছিলেন।