গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচিত প্রথম নারী মেয়র জায়েদা খাতুন সোমবার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। এ সময় তার ছেলে ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সাথে ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে নতুন নগর মাতা নগর ভবনে তার কার্যালয়ে গিয়ে নিজ চেয়ারে বসেন। এসময় তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমও পাশে ছিলেন।
দায়িত্ব গ্রহণ উপলক্ষে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ মহানগরীর বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে সোমবার সকালে বর্ণাঢ্য অভিষেক ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান আলোচক ছিলেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। অনুষ্ঠানে সাবেক সংসদ সদস্য কাজী মোজাম্মেল হক, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৫৭ টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ১৯টি ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলরগণ অংশগ্রহণ করেন। হাজারো নেতাকর্মী অভিষেক অনুষ্ঠানের যোগ দিয়েছেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম শফিউল আজম। তবে, অনুষ্ঠানে প্রশাসনের কোন কর্মকর্তা বা আওয়ামী লীগ বা অংগ সংগঠনের পদধারী কোন নেতা যোগ দেননি।
অভিষেক উপলক্ষে সকালে গাজীপুর মহনগরীর ছয়দানা এলাকার নিজ বাসা থেকে মোটর শোভাযাত্রা নিয়ে বাদ্য বাজিয়ে এবং শত শত নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে নগরীর বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করেন। গত কয়েকদিন ধরেই অভিষেক অনুষ্ঠানকে ঘিরে চলে নানা প্রস্তুতি।
অনুষ্ঠানে মেয়র জায়েদা খাতুন বলেন, আপনারা লাখ লাখ ভোট দিয়ে আমাকে মেয়র নির্বাচিত করেছেন। আমার আগেও আমার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়র পদে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছিলেন। এজন্য আমি আমার পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাদের শুভেচ্ছা জানাই।
তিনি আরো বলেন, গাজীপুর নগরবাসী আমার উপর যে দায়িত্ব দিয়েছেন তার জন্য আল্লাহর উপর ভরসা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা এবং আমার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে একটি সুন্দর ও আধুনিক নগর নগরবাসীকে উপহার দেব। এজন্য তিনি সবার সহযোগিতা চেয়েছেন।
অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীর আলম বরাবরের মতো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণায় তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্তের যে আদেশ দিয়েছিল তার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, বলা হয়েছে, আমি আত্মসাত করেছি। ২১ মাসে আপনারা কোন অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেননি। তিনি অভিযোগ করেন, আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, আমার মা জায়েদা খাতুন। তাকে আল্লাহ পাঠিয়েছেন। তাকে অসম্মান করার চেষ্টা করলে আল্লাহর আরশ কেপে যাবে। আমি তার সন্তান হিসাবে বলছি, রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে হলেও কোন মোনাফেককে এ শহরে ঢুকতে দিব না।
তিনি বলেন, আপনারা মাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। এজন্য গাজীপুরবাসীকে-দেশবাশীকে সালাম জানাই। মা-ও বলেছেন তার জীবনবাজী রেখে আপনাদের পাশে থাকবেন, সেবা দেবেন। জন্মের পর বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে আমি সংগঠনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধত্ব করার কাজটি শিখেছি। তিনি বলেন, কেউ শহরের ক্ষতি করবেন না। এ শহর রক্ষার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি, কষ্ট করেছি। আবারও প্রয়োজন হলে মায়ের সঙ্গে থেকে এ সিটির জন্য কাজ করবো।
প্রকাশ, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে গোপনে ধারণ করা জাহাঙ্গীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেন। পরে মেয়র জাহাঙ্গীরকে ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর দল থেকে বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ। একই অভিযোগে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গাজীপুর, নওগাঁ, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, পঞ্চগড়সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মামলা দায়ের করা হয়। পরে ২৫ নভেম্বর তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। পরে জাহাঙ্গীর আলম সাধারণ ক্ষমার আবেদন করলে আওয়ামী লীগ থেকে ক্ষমা করা হয়।
গাজীপুর সিটির নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর জাহাঙ্গীর আলম মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হন এবং তার মা জায়েদা খাতুন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেন। পরে ঋণ খেলাপী প্রতিষ্ঠানের জামিনদার হওয়ায় বাছাইয়ে জাহাঙ্গীরের মনোনয়ন বাতিল হয়। নিজের মনোনয়ন বাতিল হওয়ার পর তিনি তার মায়ের পক্ষে প্রচারণা চালান। এসময় সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার বক্তব্য দিলে জাহাঙ্গীরকে আবারো দল থেকে বহিস্কার করা হয়।
গত ২৫ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জায়েদা খাতুন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে চমক সৃষ্টি করেন। নির্বাচনে ৪৮০টি কেন্দ্রে মোট ভোটার ছিল ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৬৩ জন। মোট ভোট দিয়েছেন ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৫০জন। নির্বাচনে ৪৮ দশমিক ৭৬ ভাগ ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। জায়েদা খাতুন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট এবং আজমত উল্লাহ খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। জায়েদা খাতুন নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের ৪১ ভাগ ভোট পেয়েছেন। আর মোট ভোটারের ২০ দশমিক ২৫ ভাগ ভোট পেয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের সেলিনা হায়াৎ আইভীর পর তিনি হলেন দেশের দ্বিতীয় নারী মেয়র।