গণবাণী ডট কম:
ফিলিস্তিনের গাজায় একটি হাসপাতালে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ৫০০ জন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে মধ্য গাজার এ হাসপাতালটিতে হামলা চালানো হয়। এর আগে ইসরায়েলি হামলায় আহত শত শত রোগী ও গৃহহীন অসংখ্য বাসিন্দা নিরাপদ ভেবে ওই হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাসপাতালটির নাম আল-আহলি আরব। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে ইসরায়েলি বিমান হাসপাতালটিতে হামলা চালায়। বোমা হামলায় অন্তত ৫০০ জন নিহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে রয়েছেন অনেকে। হামলার ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিবিসি জানিয়েছে, অ্যাংলিকান চার্চ পরিচালিত আল-আহলি আরব হাসপাতালের যে ছবি তারা পেয়েছে, সেখানে দেখা গেছে ভয়াবহ এক পরিস্থিতি। চিকিৎসাকর্মীরা এখনও লাশ খুঁজে বের করছেন।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, বিস্ফোরণের পর হাসপাতালের বহুতল ভবনটি জ্বলছে। চারপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে মরদেহ। ধ্বংসস্তূপ থেকে ভেসে আসছে আহত ব্যক্তিদের আর্তচিৎকার।
বিবিসি, রয়টার্সসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, গাজার একটি হাসপাতালে মঙ্গলবার রাতে বিস্ফোরনের ফলে শত শত মানুষের মৃত্যুর পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে বুধবারের অনুষ্ঠিতব্য বৈঠক বাতিল করে দিয়েছেন আরব নেতৃবৃন্দ। তবে, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের তেল আবিব সফর বাতিল হয়নি।
ইসরায়েল সফর শেষে জর্ডানের রাজধানী আম্মানে যাওয়ার কথা ছিল প্রেসিডেন্ট বাইডেনের। সেখানে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ, মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠকের কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের।
এদিকে, গাজার হাসপাতালে বিস্ফোরেণের ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি ‘সমবেদনা’ জানিয়েছেন বাইডেন।
এদিকে, গাজার আল আহলি হাসপাতালে বিমান হামলায় নিহতদের উদ্দেশ্যে তিন দিনের শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।
এটা গণহত্যা: জানালেন চিকিৎসক
গাজায় হাসপাতালে বিস্ফোরেণের পর আল-আহলি-আরব হাসপাতালের একজন চিকিৎসক একে ‘গণহত্যা’ বলে বর্ণনা করেছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সেটি খ্রিষ্টান মিশনারিদের পরিচালিত একটি হাসপাতাল, যার সঙ্গে হামাসের কোনও সম্পর্ক নেই।
মঙ্গল আর বুধবার মাঝরাতে আল-আহলি আরব হাসপাতাল থেকে যে ভিডিও পাওয়া গেছে তাতে দেখা গেছে চারিদিকে বিশৃঙ্খলা। রক্তাক্ত হতাহতদের স্ট্রেচারে করে অন্ধকারের মধ্যেই বার করে আনা হচ্ছে। হাসপাতালের বাইরে ধ্বংসস্তূপ, রাস্তায় পড়ে রয়েছে মৃতদেহ আর বিধ্বস্ত যান বাহন।
একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি রকেট আছড়ে পড়ছে আর তারপরেই লাগাতার বিস্ফোরণ ঘটছে।
“আমরা হাসপাতালে অপারেশন করছিলাম, হঠাৎই একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ হয় আর অপারেশন রুমের ছাদটাই পুরো ভেঙ্গে পড়ে। এটা একটি গণহত্যা,” বলছেন ডঃ ঘাসান আবু-সিত্তাহ। তিনি মেডেসিনস সানস ফ্রন্টিয়ারস-এর প্লাস্টিক সার্জন। যুদ্ধে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা করতে এসেছেন তিনি।
আহলি আল-আরব হাসপাতালটি অ্যাংলিকান চার্চের অর্থায়নে চলে। চার্চ দাবী করেছে তাদের হাসপাতালটি গাজার কোনও রাজনৈতিক গোষ্ঠী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। ওই হাসপাতাল প্রাঙ্গণে গত সপ্তাহের শেষ দিক থেকে প্রায় ছয় হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন।
ব্রিটিশ-ফিলিস্তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাহের কুহাইল বিবিসিকে বলেন, তিনি যা দেখেছেন তা ‘কল্পনারও বাইরে’। তার কথায়, “আমি একটি এফ-১৬ বা এফ-৩৫ (যুদ্ধ বিমান) থেকে দুটি রকেট আসতে দেখেছি। ওই দুটো বিমান থেকে মানুষের ওপরে গোলাবর্ষণ করেছে, তাদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
“বিস্ফোরণের ফলে আগুন লেগে অনেক লোক মারা গেছে। প্রাথমিকভাবে উদ্ধারকাজের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব ছিল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৫০০ জন নিহত হয়েছে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আরো শতাধিক মানুষ আটকা পড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
‘অতি সত্বর’ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের
গাজায় হাসপাতালে হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সেখানে ‘অতি সত্বর’ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। বেইজিংয়ে এক ফোরামে বক্তব্য দেয়ার সময় তিনি এই আহ্বান জানান। ওই ফোরামে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও উপস্থিত ছিলেন।
মি. গুতেরেস বলেছেন, তিনি “সেখানকার অবর্ণনীয় দুর্ভোগ বন্ধে অতি সত্বর যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছেন…সেখানে বহু মানুষ এবং তাদের ভাগ্য এক অনিশ্চয়তার মুখে রয়েছে”।
ওই হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়ে হতাহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন তিনি।
এদিকে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার প্রধান ভল্কার তুর্ক হাসপাতালে হামলার ঘটনাকে ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “আমরা এখনো এ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে পুরোপুরি জানতে পারিনি। তবে এটা পরিষ্কার যে অবিলম্বে সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।”
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ:
গাজার হাসপাতালে বোমা হামলার পর বেশ কয়েকটি বড় শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, পশ্চিম তীরের বেশ কয়েকটি শহরে রাতেই ফিলিস্তিনিরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। বিভিন্ন জায়গায় তারা পাথর ছুঁড়তে থাকেন নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে।
সেখানে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তা বাহিনী কাঁদানে গ্যাস ও স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।
অন্যদিকে লেবাননের রাজধানী বেইরুতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের সামনে হাসপাতালে বিস্ফোরণের ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়।
এছাড়া ফরাসি দূতাবাসের বাইরে আরেকটি দল জড়ো হয় এবং ভবনটি লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়ে বলে জানা গেছে।
এছাড়া ত্রিপোলি এবং লিবিয়ার অন্যান্য শহরেও শত শত মানুষ ফিলিস্তিনি পতাকা বহন করে এবং গাজাবাসীদের সমর্থনে স্লোগান দেয়।