গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বাল্য বন্ধুতে অপহরণের পর মুক্তিপণ না পেয়ে গলা কেটে ও পানিতে চুবিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ২৯ নভেম্বর ভোর সোয়া ৫টায় ঘাতক বন্ধুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
নিহত যুবকের নাম আজাদ খান (২০)। তিনি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল থানার দেওজানা গ্রামের মো: শিবলু খানের ছেলে। তিনি তার পিতা মাতার সাথে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন কলাবাধা এলাকায় জনৈক ইউনুছ আলীর বাড়ীতে থাকতো। তিনি ও তার মা রাজমিস্ত্রির যোগালী হিসাবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
গ্রেফতার আসামীর নাম শ্রী জয় চন্দ্র রায় (১৯)। তিনি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর থানার নারায়নপুর দেবপাড়া এলাকার শ্রী কমল চন্দ্র রায়ের ছেলে। তিনিও গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন কলাবাধা এলাকায় জনৈক রাজীব মিয়ার বাড়ীতে থাকতো। তিনিও রাজমিস্ত্রির যোগালী হিসাবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
নিহত আজাদ খান ও গ্রেফতার জয় চন্দ্র একই এলাকার থাকার সুবাদে তারা ছোটবেলা থেকেই পরস্পরের বন্ধু ছিল।
বুধবার বিকালে এসব তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর গাজীপুর ইউনিটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান, বিপিএম-সেবা।
তিনি আরো জানান,গত ২৪ নভেম্বর আজাদ খান সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বাসা হতে বের হয়। ঐ রাতে আজাদ খান বাসায় না ফিরলে তার মা মোসাঃ মাজেদা খাতুন ছেলের মোবাইলে ফোন করলে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ফোন রিসিভ করে তাকে অশালীন ভাষায় গালি দিয়ে জানায়, আজাদ পেতে হলে টাকা দিতে হবে এবং টাকা যোগাড় করে জানাতে বলে। কিন্তু আজাদের মা বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে লোকজন নিয়ে তাঁর ছেলেকে সম্ভাব্য স্থানে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে গত ২৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় লোকমুখে সংবাদ পান, তাদের ভাড়া বাসার কাছে জনৈক মধুর মাছের খামারে এক যুবকের মরদেহ পানিতে ভাসছে। সংবাদ পেয়ে মাজেদা খাতুন সেখানে গিয়ে পানির মধ্যে অর্ধগলিত মহদেহ দেখেন। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ পানি হতে উপরে উঠালে মরদেহের গায়ে থাকা শার্ট, প্যান্ট ও কোমরে থাকা দুটি চাবি দেখে আজাদের মরদেহ বলে সনাক্ত করেন। মরদেহের গালের ডান পাশে ছিদ্র যুক্ত জখম ও বুকের ডান পাশে দুটি ছিদ্র যুক্ত রক্তাক্ত জখম দেখা যায়।
তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় নিহতের মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে কালিয়াকৈর থানা গত ২৮ নভেম্বর মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, অজ্ঞাত খুনি বা খুনিরা তার ছেলে আজাদ খানকে গত ২৪ নভেম্বর রাত অনুমান সাড়ে ৭টার পর যে কোনো সময় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে শ্বাসরোধ করে বা অন্য কোনোভাবে হত্যা করে এবং হত্যা রহস্য গোপন করার উদ্দেশ্য তার ছেলের লাশ কলাবাধা এলাকায় মাছের খামারে পানিতে মাটি চাপা দিয়ে ফেলে পালিয়ে যায়। পুলিশ তার ছেলের লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরন করে।
পিবিআই এর পুলিশ সুপার আরো জানান, হত্যার ঘটনার সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে পিবিআই গাজীপুরের একটি ক্রাইম সিন টীম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ছায়াতদন্ত শুরু করে। তদন্তকালে পিবিআই গাজীপুর মামলার ঘটনা সংক্রান্তে সকল তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিযান পরিচালনা করে মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামি শ্রী জয় চন্দ্র রায় কে পলাতক থাকা অবস্থায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার মৌচাক এলাকা থেকে ২৯ নভেম্বর ভোর সোয়া ৫টায় গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অপরাধের কথা স্বীকার করে। পরে তাকে ২৯ নভেম্বর বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়।
তিনি বলেন,গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামী ও ভিকটিম আজাদ ছোট বেলার বন্ধু। তারা ছোট থেকেই একই এলাকায় বসবাস করে আসছে। আসামী শ্রী জয় চন্দ্র রায় ও ভিকটিম আজাদ রাজমিস্ত্রির যোগালীর কাজ করতো। আসামী ও ভিকটিম ও তাদের অপর বন্ধু বাধন একসাথে গাঁজা সেবন করতো। আসামীর অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ থাকায় টাকা রোজগারের কোন উপায় না পেয়ে তার বন্ধু ভিকটিম আজাদকে আটক করে বা হত্যা করে তার পরিবারের নিকট থেকে মুক্তিপণ আদায় করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ২৪ নভেম্বর শুক্রবার আসামী জয় ভিকটিম আজাদকে নিয়ে মধুর টেক নামক এলাকায় গাজা সেবন করার জন্য নিয়ে যায়। তখন আসামী জয় একটি লাল চাদর গায়ে দিয়ে চাদরের ভিতরে একটি দা সাথে করে নিয়ে যায়। মধুর টেক মাছের খামারের গাছ তলায় বসে গাঁজা সেবনের জন্য গাঁজার স্টিক তৈরী করার সময় আসামী জয় ভিকটিম আজাদের পিছন থেকে গলার ডান পার্শ্বে তার সাথে থাকা দা দিয়ে স্বজোরে একটি কোপ দেয়। তখন ভিকটিম আজাদ মাটিতে লুটিয়ে পরে এবং আর্তনাদ করে বলতে থাকে “জয় এটা তুই কি করলি ? এটা করলি!”। আসামী জয় তখন তার হাতের দা ফেলে দিয়ে আজাদকে পাশের পুকুরের পানিতে চুবিয়ে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরবর্তীতে আসামী জয় চন্দ্র রায় তার বন্ধু ভিকটিম আজাদকে পুকুরের পানিতে ভাসিয়ে অপরপ্রান্তে থাকা ঝোপের নিচে মাটিচাপা দিয়ে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ও আসামীর চাদরটি নিয়ে সেখান থেকে চলে আসলেও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা’টি ঘটনাস্থলেই ফেলে আসে।
গ্রেফতার আসামীকে জিগ্যাসাবাদে আরো জানা যায়, ঘটনাস্থল থেকে আসামী তার অপর বন্ধু বাধনের বাসায় এসে ভেজা কাপড় পরিবর্তন করে বাধনের গেঞ্জি ও লুঙ্গি পড়ে। বাধন কাপড় ভেজার কারণ জিজ্ঞাসা করলে আসামী জানায় যে, ভুতের ভয় পাওয়ায় সে গোসল করেছে। পরবর্তীতে রাত ০৯.৫২ ঘটিকার সময় আজাদের মোবাইল থেকে পর পর দুই বার ভিকটিমের মাকে ফোন দিয়ে তার ছেলের মুক্তিপনের জন্য ৬০ হাজার টাকা চায়। আজাদের মা বিষয়টি আমলে না নেওয়ায় সে ফোন কেটে দেয়। পরদিন ভোরে আসামী শ্রী জয় চন্দ্র রায় পুনরায় ঘটনাস্থলে গিয়ে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা’টি নিয়ে এসে ২৫০/- টাকার বিনিময়ে ফেরিওয়ালার নিকট বিক্রয় করে দেয়। ভিকটিম আজাদের ব্যবহৃদ মোবাইলের সিম ভেঙ্গে বাড়ির পাশে লাল মাঠ নামক স্থানে ফেলে দেয় এবং মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে আসামীর মায়ের রুমে রেখে দেয়।