গণবাণী ডট কম:
শত বছরের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় আনন্দ ও উৎসবমূখর পরিবেশে গাজীপুরের কালীগঞ্জের বিনিরাইলে মাছের মেলা বা জামাই মেলা সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার (১৫ জানুয়ারি) দিনভর মেলায় হাজার হাজার শিশু, নর-নারী ভিড় করে। তারা মেলা ঘুরে দেখেন ও পছন্দের পণ্য কিনে হাসি মুখে বাড়ী ফিরে যান। মেলায় বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা করেন অনেকে। মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল বড় বড় আকৃতির বিশাল বাহারী মাছ।
স্থানীয়রা জানান, গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালিয়া, বক্তারপুর, জামালপুর ও মোক্তারপুর ইউনিয়নের চার মোহনায় বিনিরাইল পল্লী গ্রামে ১৮ শতকে মেলাটির প্রচলন হয়। প্রায় ২৫০ বছর ধরে কৃষকের ধান কাটার পর ওই জমিতে প্রতি বছর পৌষ মাসের শেষে মাঘ মাসের প্রথম দিনটিতে এ মেলার আয়োজন করা হয়। মেলার প্রধান আকর্ষণ বিশাল আকৃতির মাছ। প্রতি বছর মেলাবে কেন্দ্র করে বিনিরাইল ও আশপাশের কয়েক গ্রামের শ্বশুররা তাদের মেয়ের জামাইকে বাড়িতে নিমন্ত্রণ জানায়। মেলা থেকে বড় বড় মাছ কিনে জামাইরা শ্বশুড় বাড়ীতে নিয়ে যাওয়ার কারণে এটি পরে জামাই মেলা নামে পরিচিতি পায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেলা প্রাঙ্গণে দুই শতাধিক ব্যবসায়ী বাহারি মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মাছ ছাড়াও মেলায় আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টি নিয়ে বসেছে দোকানিরা। মাছের মেলায় সামুদ্রিক চিতল, বাঘাইড়, আইড়, বোয়াল, কালিবাউশ, পাবদা, গুলসা, গলদা চিংড়ি, বাইম, ইলিশ, কাইকলা ও রূপচাঁদা উঠেছে।
মেলার আয়োজন দেখতে ও পছন্দের বড় মাছ ও অন্যান্য পণ্য কিনতে মেলায় স্থানীয়রা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের সমাগম ঘটে। দিনভর চলে আনন্দ-উৎসব। দিনটির জন্য বছরজুড়ে অপেক্ষায় থাকেন স্থানীয়রা। কারণ এটা মাছের মেলা হলেও এখানে চলে এলাকার জামাইদের বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা। বিনিরাইল এবং আশপাশের গ্রামে যারা বিয়ে করেছেন তারা মেলার মূল ক্রেতা। তবে এ মেলা ঘিরে এলাকার জামাই-শ্বশুরদের মধ্যে মাছ কেনার প্রতিযোগিতা চলে।
মেলায় মাছের পাশাপাশি পরিবারের নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক রকম পন্য বিক্রি করা হয়। মাছের পরেই মেলার আরেক আর্কর্ষণ বালিশ মিষ্টি। এক কেজি ওজনের একটি বালিশ আকৃতি মিষ্টি বিক্রি হয় ৫০০ টাকায়। এছাড়া মেলায় কাঠ ও স্টিলের আসবাবপত্র, ফল, খেলনা, নানা ধরনের আচারসহ সবধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী রয়েছে।
মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি কিশোর আকন্দ সাংবাদিকদের বলেন, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে শুরু হওয়া মেলাটি এখন রূপ নিয়েছে ঐতিহ্যে। এ মেলা স্থানীয়দের কাছে সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে স্বীকৃত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলাটি একটি সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাতাব উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, মেলাকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে পুলিশের টহল থাকবে। পাশাপাশি সাদা পোষাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন সেখানে অবস্থান করবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বিনিরাইলের মাছের মেলাটি স্থানীয় একটি ঐতিহ্য। বহু বছরের পুরনো মেলাকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে রয়েছে নানা ধরনের কথা। তবে ইতিহাস-ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে গ্রাম-গঞ্জে এ ধরণের আয়োজন সত্যি আমাদের চিরায়ত বাংলার রূপই ফুটে উঠে।