গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানা ও টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানা এলাকা থেকে কানাডায় মানবপাচার ও জাল ভিসা প্রস্তুতকারী চক্রের ২ সদস্যকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও স্মার্ট ফোন উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতার আসামীরা হলো মোস্তাকিম ইসলাম (২০) এবং জুয়েল ইসলাম (২৬)। তারা উভয়ে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর থানার মুশরুত দুলিয়া সর্দারপাড়া এলাকার যথাক্রমে মো: মানিক হোসেন ও মোঃ জয়নাল আবেদীনের ছেলে।
গত বুধবার রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গাজীপুর এবং টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানাধীন গোড়াই এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার বিকালে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিবি-উত্তর) মুহাম্মদ কামাল হোসেন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর ফেরত যুবক সোহেল রানা (৪০) আরো ভালো চাকরীর আশায় কানাডায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে গ্রেফতারকৃতদের ৯ লাখ টাকা দেয়। পরে তারা সোহেল রানাকে ভূয়া ভিসা ও অন্যান্য কাগজপত্র দিয়ে প্রতারণা করে। এ ঘটনায় সোহেল রানা বাদী হয়ে মহানগরীর বাসন থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ঐ পুলিশ কর্মকর্তা আরো বলেন, এ চক্রটি দেশের বেকার যুবকদের উন্নত জীবনের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মানব পাচার ও ভূয়া কাগজপত্র তৈরী করে প্রতারণা করে আসছিল। এ কারণে আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখি। পরে তথ্য প্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আসামীদের গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা স্বীকার করে, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ তারা কানাডার জাল ভিসা প্রস্তুত করে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ জনগণের নিকট হতে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
প্রতারণার কৌশল সম্পের্কে আসামীরা জানায়, এ চক্রটি https://www.visaschack.com নামে একটি ওয়েব সাইট চালু করে। পরে চক্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেয়, যেখানে কানাডার ভিসা সম্পর্কে লোভনীয় প্রস্তাব দেয়া হয়। ফেসবুকে বিজ্ঞাপনের প্রেক্ষিতে অনেকে এই প্রতারক চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে। প্রতারক চক্রের যোগাযোগের মাধ্যম ছিল হোয়াটসঅ্যাপ, যেখানে তারা কানাডার নাম্বার ব্যবহার করত এবং এই বিদেশী নাম্বার গুলো তারা বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে কিনে নেয়। কানাডায় ভিসা প্রাপ্তির জন্য যোগাযোগকারীদের প্রতারক চক্র তাদের তৈরী নিজস্ব ওয়েবসাইট দেয় এবং আবেদন করতে বলে। আগ্রহীরা মনে করে এটি কানাডার সরকারি ওয়েবসাইট, প্রকৃতপক্ষে এই ওয়েবসাইট গুলো প্রতারক চক্র নিজেরাই চালাতো এবং কানাডায় যেতে আগ্রহীদের ডাটা এন্ট্রি করে রাখত। এসব সাইটে প্রতারক চক্র আগ্রহী প্রার্থীদের পাসপোর্ট নাম্বার, নাম, ঠিকানা তাদের কাছ থেকে নিয়ে পূর্বেই এন্ট্রি করে রাখতো। যার ফলে কানাডা যেতে আগ্রহী এইসব ভিকটিমদের তথ্য এ সকল ওয়েব সাইটে দেখা যেত এবং তারা ভাবতো তাদের ভিসা কনফার্ম হয়েছে। প্রতারক চক্র হোয়াটসঅ্যাপ এর মাধ্যমে এ সকল ব্যক্তিদের একটি জাল ভিসার ছবি দেখাতো এবং বিভিন্ন সময়ে টাকা হাতিয়ে নিতো।
তিনি আরো বলেন, আসামীরা জিজ্ঞাসাবাদে আরও প্রতারক চক্রের কয়েকজন সদস্যের নাম প্রকাশ করেছে। তাদেরকে সনাক্ত পূর্বক গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।