গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগরীর সদর থানাধীন ভারারুল সুখীনগর এলাকায় অবস্থিত মোবাইল সিমকার্ড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইন্টেলিজেন্ট কার্ড লিমিটেড এর কারখানায় নাইট্রোজেন গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডের ঘটনায় একজন প্রকৌশলী নিহত ও চীনা নাগরিকসহ ৭ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঐ কারখানায় নতুন একটি লেমিনেটিং মেশিন ইনস্টলেশন (স্থাপন) করার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতের নাম মোঃ লিখন মিয়া (২৪)। তিনি গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার তিলকপাড়া গ্রামের মোঃ সেকান্দার আলীর ছেলে। তিনি এ কারখানায় সহকারী প্রকৌশলী (রক্ষনাবেক্ষণ) পদে কর্মরত ছিলেন।
আহতরা হলেন, চীনের নাগরীক মিঃ নিউ ইয়াং সিন (৪২), কারখানার কোয়ালিটি কন্ট্রোলার নওগার বাদলগাছী থানার দনইল গ্রামের কাজী আবুল হোসেনের ছেলে মোঃ শাহরুখ হোসেন (২০), লেমিনেশন ইনচার্জ ময়সিংহের ত্রিশাল থানার ভাওয়ালিয়া পাড়ার আব্দুল খালেকের ছেলে মোঃ শাহজাহান (৪৫), দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ থানার দক্ষিণ বোয়ালমারী গ্রামের মোঃ মোজায়ের হোসেনের ছেলে মনিরুজ্জামান (৩৭), টাঙ্গাইল সদরের চকদই এলাকার রহমত ব্যাপারীর ছেলে মোঃ আহমেদ হোসেন (৩৩) এবং একই জেলার মোঃ মিজানুর রহমান (৩০)। অপরজন চীনা নাগরিক। তার নাম জানা যায়নি।
কারখানার মালিক পক্ষ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর ভারারুলের সুখীনগর এলাকায় অবস্থিত ওই কারখানায় বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানীর জন্য সিমকার্ড তৈরী করা হয়। এ কারখানাটি এখনো পুরোপুরি চালু করা হয়নি। এখানে বিভিন্ন ব্যাংকের ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড তৈরীর জন্য নতুন একটি ইউনিট চালু করার কাজ চলছিল। এরই অংশ হিসাবে চীন থেকে একটি নতুন লেমিনেশন মেশিন আমদানী করা হয়। ঐ মেশিনটি স্থাপনের জন্য চীন থেকে আসা কোম্পানীর দুইজন প্রতিনিধিসহ কারখানার ১০/১২ জন বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে একই স্থানে কাজ করছিল। এ লেমিনেশন মেশিনের গ্যাস সিলিন্ডিারে বিকট শব্দে বিষ্ফোরন ঘটে এবং আগুন ধরে যায়। খবর পেয়ে জয়দেবপুর ফায়ার স্টেশনের দুইটি ইউনিটের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে পৌনে এক ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। পরে দুর্ঘটনাস্থল থেকে একজনের অগ্নিদগ্ধ মরদেহ ও দুই চীনা নাগরিকসহ ৭ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
ইন্টেলিজেন্ট কার্ড লিমিটেড এর চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল হাসান বলেন, এ কারখানায় বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানীর সব ধরনের সিম কার্ড তৈরী করা হয়। কারখানায় ১০০ জনের মত কর্মী কাজ করে। ব্যাংকের কার্ড তৈরী করার জন্য বুধবার একটি লেমিনেটিং মেশিন স্থাপনের কাজ চলছিল। সেখানে দুইজন চীনা নাগরীকসহ কারখানার ১০ থেকে ১২ জন কাজ করছিল। দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে হঠাৎ ওই মেশিনের সাথে থাকা নাইট্রোজেন গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণ হয়। এতে ওই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক আব্দুল আল আরেফিন জানান, বিষ্ফোরণের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নির্বাপন করে। পরে একজনের মরদেহ ও ও ৬ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ বিষয়ে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা: রফিকুল্ ইসলাম বলেন, দুইজন চীন নাগরিকসহ মোট ৭ জন আহত ও দগ্ধ রোগী এসেছিল। তাদের মধ্যে এক চীনা নাগরিক নিউ ইয়াং সিন (৪২) এর অবস্থা গুরুতর। তার স্বাসনালীসহ শরীরের ৩০ ভাগের বেশী দগ্ধ হয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ণ ইনস্টিটিউটে রেফার্ড করা হয়েছে। ৫ জন বাংলাদেশী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। একজন চীনা নাগরিক প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন।
দুর্ঘটনার পর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ছাড়াও কলকারখানা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
জিএমপির সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ রাফিউল করিম জানান, কারখানায় মেশিন বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে একজন নিহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম জানান, হতাহতদের জন্য আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্তের জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরকে বলা হয়েছে।