গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরে অনৈতিক সম্পর্কের পর টাকা লেনদেন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় যুবতীকে স্বাসরোধে হত্যার ৩ বছর পর ঘটনায জড়িত দুই বন্ধুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আসামীরা বিজ্ঞ আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্ধি প্রদান করেছে।
মঙ্গলবার গাজীপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেয়া জবানবন্ধিতে আসামীরা হত্যার কারণ ও ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করেছে।
নিহতের নাম কল্পনা আক্তার কল্প (৩২)। তিনি টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর থানাধীন বালুবাড়ি এলাকার মৃত শহীদ আলীর মেয়ে।
গ্রেফতার আসামীরা হলো; নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ থানার তেঁতুলিয়া গ্রামের জাহিদুল হাসানের ছেলে মো: মাহবুব আলম (২৯) ও একই গ্রামের আবুল কালাম চৌধুরীর ছেলে মো: মোশারফ হোসেন (৩২)।
মাহবুবকে গত ১১ই মার্চ (সোমবার) রাতে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্য মতে সাভারের আশুলিয়া থানার আমতলা কাঠগড়া এলাকা থেকে মঙ্গলবার (১২ই মার্চ) রাতে মোশারফকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)’র গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, গাজীপুর মহানগর পুলিশের কাশিমপুর থানা পুলিশ ২০২১ সালের ২মার্চ দুপুরে ১টার দিকে পানিশাইল গ্রামের জিরানী ডাক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পুকুর থেকে অজ্ঞাতনামা অর্ধ উলঙ্গ ও অর্ধগলিত এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে। পরে নিহতের ছোট রুনা মরদেহ শনাক্ত করেন। পুলিশ মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। মরদেহে আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ঘটনায় নিহতের বোন বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলা রুজুর পর ৮মাস কাশিমপুর থানা পুলিশ মামলাটির তদন্ত করে কোন রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই গাজীপুর।
তিনি আরো জানান, তদন্তকালে তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ করে ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রথমে মাহবুবকে ও পরে মাহবুবের দেয়া তথ্যমতে মোশারফকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা উভয়ে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং বিস্তারিত বর্ণনা দেয়।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান আরো জানান, মাহবুব ও মোশারফ একই গ্রামের বাসিন্দা ও পরস্পর বন্ধু। তারা গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর ও ঢাকার আশুলিয়া এলাকার বিভিন্ন কারখানায় একসাথে চাকুরি করতো। চাকরি করার সময় কল্পনা আক্তার কল্প‘র সাথে তাদের পরিচয় ও পরে সুসম্পর্ক তৈরী হয়। তারা কল্পনার সাথে দেখা সাক্ষাত করতো এবং টাকার বিনিময়ে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতো। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের ঘটনার দিন গভীর রাতে দুই বন্ধু কল্পনাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে এসে শারীরিক সম্পর্ক করে। পরে টাকা লেনদেন নিয়ে কল্পনার সাথে বনিবনা না হলে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। পরে আসামী দুই বন্ধু মিলে ঘটনাস্থলেই শ্বাসরোধ করে কল্পনাকে হত্যা করে লাশ ফেলে চলে যায়।
তিনি আরও জানান, একটি হত্যার ঘটনা। ভিকটিম কল্পনাকে নিয়ে দুই আসামী অনৈতিক কাজ করে। পরে টাকা পয়সা নিয়ে ভিকটিমের সাথে ঝামেলা সৃষ্টি হলে আসামীদ্বয় ভিকটিমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পালিয়ে যায়। পিবিআই গাজীপুর তথ্য সংগ্রহসহ সকল তথ্য প্রমাণ বিচার বিশ্লেষণ করে ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে আসামীদ্বয়কে গ্রেফতার করে এবং আসামীদ্বয় স্বেচ্ছায় বিজ্ঞ আদালতে মামলার ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকার করে জবানবন্ধি দেয়। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।