বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী তাত শিল্প ভারতীয় কাপাড়ের দাপটের কারণে বিলিন হতে চলেছে। গাজীপুরের একটি গ্রাম এখনো ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্পের ধারাবাহিকতা বয়ে নিয়ে চলেছে। ওই গ্রামে হাতে গোনা কয়েক ঘরে কর্মরত তাঁত শিল্পীদের নিপুণ হাতের কর্মকুশলতায় এখনো মুগ্ধ হচ্ছেন দেশ বিদেশের জামদানী শাড়ি পরুয়া সৌখিন নারীরা। শাড়ি সৌন্দর্য পিপাসু নারীদের প্রিয় এই বেনারসি, জামদানী তৈরীর প্রধান নিয়ামক হ¯Íচালিত এসব তাঁত শিল্প আজ হুমকির মূখে পড়েছে। এটি রক্ষায় সংশিøষ্টদের দৃষ্টি দেয়া জরুরী বলে মনেকরেন সংশ্লিষ্টরা।
গাজীপুরের টঙ্গী পৌরসভা থেকে ৫ কি:মি: দূরে ছায়া সুনিবিড় সবুজ গ্রাম গুটিয়া। বৃক্ষশোভিত গ্রামের প্রবেশ মুখে পা দিতেই কানে ভেসে আসে ঐতিহ্যমন্ডিত তাঁত যন্ত্রের খটখটাখট শব্দ। একসময় এ গ্রামে অন্তত ৩ শতঘরের প্রতিটিতেই এক/দুটি করে হ¯Íচালিত এমন তাঁত কারখানা ছিল। সে সময় বেনারসি, জামদানী শাড়ির বাণিজ্যটাও ছিল রমরমা। কিন্তু গাজীপুরে শিল্পায়নজনিত কারণে শ্রমিক সংকটসহ নানাবিধ সমস্যায় পড়ে এ শিল্প এখন নিম্নমুখে ধাবমান। তবুও তাত শিল্পের ঐতিহ্যের শেষ স্মারক হিসেবে ওই গ্রামে এখনো কয়েকটি তাঁতশিল্প কারখানা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে অতীত সৌন্দর্যকে মনে করিয়ে দিতে। এসব কারখানায় শতাধিক তাঁত শিল্পী তাঁতের মাকুর খটখটাখট শব্দের সাথে নিজ কণ্ঠের সুললিত সুর মিলিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে নিবিষ্ট মনে বুনে চলেছে বিভিন্ন ধরণের শাড়ি। আর সেই শাড়ি মিরপুরের বেনারসী পলøী হয়ে পৌছে যাচ্ছে ক্রেতার হাতে।
শ্রম মজুরি নিয়ে তাঁত শিল্পীদের আক্ষেপ থাকলেও তাদের শ্রম, ঘাম ও নিপুণ কর্মকুশলতায় সৃষ্ট শাড়ি আজ ভারত থেকে পাচার হয়ে আসা শাড়ীর সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না।
তাঁত শিল্পের ঐতিহ্য রক্ষায় তাদের অতীত কর্মচাঞ্চল্য ফিরে পেতে ভারতের অবৈধ শাড়ি পাচার বন্ধে সহযোগিতা কামনা করেনতাঁতশিল্পীরা। আসন্ন ঈদের তাদের শাড়ির চাহিদায় ভাটা পড়ায় চিন্তিত তারা।
পূর্বের মতো বাজার সুবিধা না থাকা, বাড়তি সুতার দাম, শ্রমিক সংকটসহ ইত্যাকার নানাবিধ সমস্যায় পড়ে এ ব্যবসা আজ সংকটের মধ্যে পড়েছে। অবৈধ পথে ভারতীয় শাড়ি বন্ধ হলেই এ শিল্প তার পূর্ব রুপে ফিরে যেতে পারে।
নানা প্রতিকূলতা সত্তে¡ও বাঙালির চিরায়ত জামদানী ঐতিহ্যকে যারা এখনো বয়ে নিয়ে চলেছেন সেইসব তাঁতশিল্পীদের সুদিন আবারো ফিরে আসুক জামদানী প্রেমীদের ভাবনা এমনটাই।