গণবাণী ডট কম:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসকে বিশ্বব্যাপী মহামারী হিসাবে ঘোষণা করেছে। বিশ্বের ১১৬ টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে করোনভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ঘোষণা দিল।
প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের ১১৬টি দেশ ও অঞ্চলে শনাক্ত হয়েছে । ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা চার হাজার দুইশ ছাড়িয়েছে, আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজারের বেশী মানুষ। আরও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যাওয়ার দীর্ঘ মেয়াদী ঝুঁকির আশংকা তৈরী করেছে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেড্রোস গেব্রেইয়েসুস এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ এখন বিশ্বব্যাপী মহামারীর চেহারা নিয়েছে একথা ঘোষণা করে বলেছেন, এ ভাইরাসের বিস্তারের ওপর তারা সার্বক্ষণিকভাবে নজর রাখছিলেন, এবং এ ব্যাপারে ‘ভীতিকর রকমের নিষ্ক্রিয়তা’ দেখে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেছেন,”এটি কেবল একটি জনস্বাস্থ্য সংকট নয়, এটি একটি সঙ্কট যা প্রতিটি ক্ষেত্রকে স্পর্শ করবে”,”সুতরাং প্রতিটি ক্ষেত্র এবং প্রতিটি ব্যক্তি অবশ্যই লড়াইয়ে জড়িত থাকতে হবে।”
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এ শব্দটি ব্যবহার না করার পর অবশেষে বুধবার মি. গেব্রেইয়েসুস নিশ্চিত করলেন যে করোনাভাইরাসের বিস্তার এখন প্যানডেমিক (মহামারী) এর রূপ নিয়েছে। তবে তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশ এটা দেখাতে পেরেছে যে এই নতুন করোনাভাইরাস বা কোভিড নাইনটিনের বিস্তারকে দমন এবং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
মি. গেব্রেইয়েসুস সরকারগুলোর প্রতি জরুরি এবং আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নিয়ে এ সংক্রমণের গতিপথ বদলে দেবার আহ্বান জানান।
যখন কোনো ছোঁয়াচে রোগ মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের মাধ্যমে পৃথিবীর বহু অংশে ছড়িয়ে পড়ে তখনই তাকে বলা হয় প্যানডেমিক বা ‘বিশ্বব্যাপী মহামারি’।
মি. গেব্রেইয়েসুস বলেন, তার এ ঘোষণায় করোনাইরাসের ব্যাপারে বিভিন্ন দেশের করণীয় সম্পর্কে দেয়া পরামর্শে কোন পরিবর্তন আসবে না।
চীন থেকে সূচনা হওয়া এই নতুন করোনাভাইরাস বা কোভিড নাইনটিন সংক্রমণে সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত পৃথিবীজুড়ে ১ লক্ষের বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছে এবং ৪ হাজার ৩শ’রও বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে। মি. গেব্রেইয়েসুস বলেন, গত দু’সপ্তাহে চীনের বাইরে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ গুণ বেড়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০ মার্চ স্থানীয় সময় দুপুর ১টা পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ১১৬টি দেশ। ভাইরাসটিতে ৪ হাজার দুইশের বেশি লোক মারা গেছেন।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের (এনএইচসি) তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার (১০ মার্চ) চীনে আরো ২২ জন মারা গিয়েছেন। চীনে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ১৫৮ জন। করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৭৭৮ জন । এর মধ্যে মোট ৬১ হাজার ৪৮১ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, চীনের বাইরে করোনা ভাইরাসে ইতালিতে ৬৩১ জন মারা গেছে। চীনের বাইরে করোনায় সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ইতালিতে। এছাড়াও দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। এদিকে, ইরানে মোট আট হাজার ৪২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৯১ জন মারা গেছেন। সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ৭৩১ জন সুস্থ হয়েছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ জনে।দেশটিতে ইতোমধ্যে সাত হাজার ৭৫৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়েছেন ২৮৮ জন।
অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে স্পেন ৩৬, ফ্রান্স ৩৩, আমেরিকা ৩০, জাপান ১০, ইরাক ৭, যুক্তরাজ্য ৬, নেদারল্যান্ড ৪, সুইজারল্যান্ড, হংকং ও অস্ট্রেলিয়া ৩, মিশর ও স্যান ম্যারিনো ২, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, আর্জেন্টিনা ও ফিলিপাইনে, কানাডা, পানামা, মরোক্কোতে একজন করে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।