গণবাণী ডট কম:
করোনাভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত হবার দশদিন পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত ২৭শে মার্চ ঘোষণা করা হয় যে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তখন থেকে তিনি লন্ডনে ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে সেলফ আইসোলেশনে থেকে সরকারি কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তার শরীরে জ্বরসহ করোনাভাইরাসের অন্যান্য উপসর্গ রয়েছে । বলা হচ্ছে, ‘সতর্কতা’ হিসেবে ডাক্তারের পরামর্শে মি. জনসনকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
এক বিবৃতিতে ডাউনিং স্ট্রিটের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, “চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী মি. জনসনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।” তিনি আরো জানিয়েছেন, “প্রধানমন্ত্রী ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা এনএইচএসের সব কর্মীকে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং জনগণকে সরকারের উপদেশ অনুযায়ী বাড়িতে থাকতে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সুরক্ষা এবং জীবনরক্ষায় সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন।”
অসুস্থতা সত্ত্বেও মি. জনসন ব্রিটেনে সরকার প্রধানের দায়িত্বপালন চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে আজ পরের দিকে করোনাভাইরাস নিয়ে অনুষ্ঠিতব্য একটি সভায় সভাপতিত্ব করবেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বরিস জনসন রাতে হাসপাতালে থাকবেন এবং ‘রুটিন পরীক্ষানিরীক্ষা’ করা হবে তার।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে এক ব্রিফিংয়ের শুরুতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর আরোগ্য কামনা করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। “প্রতিটি আমেরিকান তার জন্য প্রার্থনা করছে। তিনি আমার একজন খুবই ভালো বন্ধু, একজন অসাধারণ ভদ্রলোক এবং একজন অসাধারণ নেতা।” মি. ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেন যে মি. জনসন দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন, কেননা তিনি একজন ‘শক্ত মানুষ’।
এদিকে, লেবার নেতা কির স্টারমারও মি. জনসনের দ্রুত আরোগ্য কামনা তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
করোনাভাইরাস নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে চাপ :
ব্রিটেনের রানী এবং প্রধানমন্ত্রী দুইজনই করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে দেশটির জনগণের উদ্বেগকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই ব্যক্তিগতভাবে ভাইরাসের ভয়াবহতা অনুভব করতে পারছেন।
তবে, অসুস্থতা সত্ত্বেও ডাউনিং স্ট্রিটের কর্মকর্তারা চান মি. জনসন যেন সরকার প্রধানের দায়িত্ব চালিয়ে যান, এবং মন্ত্রীসভার সদস্য ও আমলাদের সঙ্গে যোগাযোগ অক্ষুণ্ণ রাখেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এই ভাইরাস বিষয়ে প্রচলিত ও স্বাভাবিক কোনকিছু আগাম বলা সম্ভব নয়, যতই বলা হোক প্রধানমন্ত্রীর ‘রুটিন পরীক্ষানিরীক্ষা’ করা হচ্ছে।
করোনাভাইরাস এর আগেও তার প্রাণসংহারী ক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। যে কারণে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, কর্মকর্তা এবং মন্ত্রীসভার সদস্যদের সবাইকে ‘সেলফ আইসোলেশনে’ পাঠানো হয়েছে।
কোভিড-১৯ এর কারণে ইতিমধ্যেই ব্রিটিশ অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, মানুষের স্বাভাবিক স্বাধীনতার পরিধি সীমিত হয়েছে এবং সর্বোপরি এখন দেশটির উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারাও আক্রান্ত হচ্ছেন।
কী পরীক্ষানিরীক্ষা হবে মি. জনসনের?
চিকিৎসক ও ব্রডকাস্টার ডা. সারাহ জার্ভিস বিবিসিকে জানিয়েছেন, মি. জনসনের এখন বুকের এবং ফুসফুসের এক্স-রে হবার কথা, বিশেষ করে যদি তার শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হয়ে থাকে।
এছাড়া তার হৃদপিণ্ডের অবস্থা জানতে ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম, তার শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা পরীক্ষা, রক্তে শ্বেত কণিকার পরিমাণ নিরূপণ এবং তার কিডনি ও লিভারের কার্যক্ষমতার পরীক্ষা হবার কথা।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার তাকে জনসমক্ষে দেখা যায়, যখন ডাউনিং স্ট্রিটে তার ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে হাত নেড়ে তিনি এনএইচএস এবং এর কর্মীদের অভিনন্দন জানান।
এছাড়া পরদিন শুক্রবার ‘দূর-নিয়ন্ত্রিত’ পদ্ধতিতে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত একটি বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন তিনি। ওইদিনই তিনি টুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট করেন যাতে বলা হয় তার শরীরে এখনো ‘ছোটখাটো’ উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। শনিবার মি. জনসনের গর্ভবতী সঙ্গী ক্যারি সাইমন্ডস টুইট করে জানান, করোনাভাইরাসের প্রধান উপসর্গ নিয়ে এক সপ্তাহ যাবৎ তিনি শয্যাশায়ী। তবে তিনি জানান তার ভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষা হয়নি।
এর আগে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানককের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় এবং বৃহস্পতিবার তিনি সেলফ আইসোলেশন থেকে ফিরে ডাউনিং স্ট্রিটের প্রতিদিনকার সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন।
করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়ায় দেশটির প্রধান চিকিৎসা উপদেষ্টা অধ্যাপক ক্রিস হুইটিকেও সেলফ আইসোলেশনে যেতে হয়েছিল।
গত মাসে প্রধানমন্ত্রীর একজন মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, কোন কারণে মি. জনসন দায়িত্ব পালনে অক্ষম হবার মতো অসুস্থ হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক দায়িত্ব পালন করবেন।