গণবাণী ডট কম:
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় লকডাউনের দাবি জানিয়েছেন সিটি মেয়র এ্যাডভোকেট মো: জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বুধবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে মহানগরীর বোর্ড বাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে সরকারের নিকট এ দাবি জানান।
মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের তরুন ও উদ্যোমী এ নগরপিতা নিজেই কয়েকটি গণমাধ্যমে গাজীপুর মহানগরীর ৫৭টি ওয়ার্ড এলাকায় লকডাউন ঘোষণা দিয়ে আলোচনার সৃষ্টি করেছিলেন। তার উক্ত ঘোষণার পরে গাজীপুরবাসীর মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরী হয়। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন তার এ ঘোষণায় বিব্রত অবস্থায় পড়ে।
যদিও দেশে করোনভাইরাসের বিস্তারের বর্তমান প্রেক্ষাপকে মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় গাজীপুর মহানগরী (সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ৫৭টি ওয়ার্ড) এলাকায় নগরীর বাইরে থেকে কাউকে প্রবেশ করতে না দেয়া এবং মহানগরী থেকে কাউকে বাইরে যেতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সভায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ্যাডভোকেট মো: জাহাঙ্গীর আলম নিজেও উপস্থিত ছিলেন। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন, সাভার ক্যান্টনমেন্টের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরান, , গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মো: আনোয়ার হোসেন বিপিএম (বার) পিপিএম (বার),গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: খুলিলুর রহমান,গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা.খায়রুজ্জামান, গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার পিপিএম।
উক্ত সভার পরে সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম নিজের উদ্যোগে সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ৫৭টি ওয়ার্ড এলাকায় লক ডাউনের ঘোষণার একদিনের মাথায় আজ তিনি সরকারি লক ডাউনের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের কাছে দাবি করলেন।
আজ সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে সিটি মেয়র বলেন, মহানগরী এলাকায় সকল কারখানা বন্ধের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শ্রমিকরা যাতে ঘরের বাইরে এসে জড়ো হতে না পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি ঘরে থাকার নিশ্চিতে সকলের সহেযোগিতা কামনা করেন।
মেয়র জাহাঙ্গীর বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন একটি শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকা। এই এলাকায় শ্রমিকরা কারখানা বন্ধের ঘোষণায় বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। পরে আবার অনেকে গাজীপুরে ফিরে এসেছেন। তাই গাজীপুরের লাখ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা চিন্তা করে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা যেন লকডাউন করা হয় সেটা সরকারের কাছে দাবি জানাই। এটি যাচাই-বাছাই করে সরকার যেন দ্রুত সিদ্ধান্ত দেয়। তা না হলে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকেই যাবে।
তিনি আরও বলেন, সিটি কর্পোরেশনের সকল কাউন্সিলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যাতে কেউ বাসা থেকে বের না হয় এবং অযথা কোনো স্থানে আড্ডায় জড়ো না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একজন একজন করে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটা করবে। অনেক মানুষ যাতে কোনো দোকানে এক সঙ্গে জড়ো হতে না পারে সে জন্য সকল মানুষকে কাউন্সিলররা অনুরোধ করে বুঝিয়ে বলবে। মাত্র ১৫ দিন যদি আমরা যার যার বাসায় অবস্থান করতে পারি তাহলে আমাদের অনেক ঝুঁকি কমে যাবে।
অপরদিকে মঙ্গলবারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আজও বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে একাধিক চেক পোস্ট বসিয়ে লোক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে কাজ করেছে পুলিশ, র্যা ব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। জেলা প্রশাসনের একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম বাজার ও জনসমাগম এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছে। দুপুর ১২টার পর সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
সিটি মেয়রের লক ডাউনের দাবীর প্রসঙ্গে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যজিস্ট্রেট এস এম তরিকুল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, গাজীপুর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এখানে মহানগরী এলাকায় অনেক ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এগুলো জীবন রক্ষাকারী ঔষধ উৎপাদন হয়, এছাড়া দেশের বিভিন্ন পোল্ট্রি ফিড ও পশু খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনকারী ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন ও সরবরাহ চালু রাখতে হবে। হাজার হাজার শিল্প কারখানার মধ্যে এখনো কিছু কারখানা চালু রয়েছে, এগুলো বন্ধ করার জন্য প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করছে। এরকম অনেক বিষয় মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। আমরা এখন এসব বিবেচনায় মানুষের চলাচল বন্ধ রেখে, মানুষকে নিজ নিজ ঘরে রেখে কিভাবে সামাজিক দুরত্ব বঝায় রাখা নিশ্চিত করা যায় সেদিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। এ জন্য মহানগর পুলিশ ও জেলা পুলিশ, র্যা ব ও সেনা সদস্যগণ বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে কাজ করছে। যাতে কেউ এখানে আসতে বা এখান থেকে বেরিয়ে যেতে না পারে। অন্যান্য স্থানে লোক সমাগম বন্ধে আইন শৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালকাজ করছে।