গণবাণী ডট কম:
প্রাণঘাতি করোনাভাইারাস বা কোভিড ১৯ এ গাজীপুরে এ পর্যন্ত মোট পজিটিভ হয়েছেন ৩১৭ জন। তাদের মধ্যে এ পর্যন্ত ২ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুর সিভিল সার্জনের পক্ষে একটি ফেসবুক আইডিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে গত ১৯ ও ২০ এপ্রিল ঢাকায় পাঠানো নমুনার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, গাজীপুর জেলায় করোনা পজিটিভ হওয়াদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ১০৯ জন গাজীপুর সদর ও মহানগর এলাকার বাসিন্দা। জেলা পজিটিভ হওয়ার সংখ্যার দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কালীগঞ্জ উপজেলা। সেখানে মোট পজিটিভ হওয়ার সংখ্যা ৮৯ জন।
এরপরে রয়েছে কাপাসিয়া উপজেলা। কাপাসিয়া উপজেলায় মোট পজিটিভ হয়েছেন ৭০ জন। এছাড়া কালিয়াকৈর উপজেলায় ২৯ জন এবং শ্রীপুর উপজেলায় ২০ জন পজিটিভ।
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গাজীপুরে করোনা পজিটিভ হওয়াদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ রয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী। স্বাস্থ্য বিভাগে করোনা পজিটিভ হওয়ার সংখ্যা ৯১ জন। এসব চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর নমুনা আইইডিসিআরে পাঠানো হলে সেখান থেকে তাদের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। গাজীপুরে কয়েকটি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ২১জন চিকিৎসক, ২৪জন নার্স ও ৪৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনা পজিটিভ হয়েছেন। করোনার বিরুদ্ধে সামনের সারির যোদ্ধা হিসাবে গন্য হওয়া চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা গাজীপুরে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।
গাজীপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা মুহাম্মদ শাহীন গণমাধ্যমকে জানান, গত সোমবার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী গাজীপুরে এ পর্যন্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ ৯১জন করোনা পজিটিভ হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২১জন চিকিৎসক, নার্স ২৪জন ও স্বাস্থ্যকর্মী আছেন ৪৬ জন। তাদের মধ্যে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১ জন চিকিৎসক, ১ জন নার্স রয়েছেন। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতালের ১২জন চিকিৎসক ও ৮ জন নার্স রয়েছেন। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৭জন চিকিৎসক, ৭জন নার্স করোনা পজিটিভ। কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১জন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ৭ জন নার্স ও সহকারী করোনা পজিটিভ হয়েছেন। কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১জন নার্স করোনা পজিটিভ হয়েছেন। এছাড়া জেলার বিভিন্ন হাসপাতালের ৪৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনা পজিটিভ হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, করোনা পজিটিভ ব্যাক্তিদের সেবা দেয়া, সন্দেহভাজনদের নমুনা সংগ্রহ ও সনাক্ত না হওয়া ব্যাক্তিদের সেবা দিতে গিয়ে এসব চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনা পজিটিভ হয়েছেন।
এছাড়া গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি) ও জেলা পুলিশের কর্মকর্তাসহ ৩২ জন পুলিশ সদস্যও করোনা পজিটিভ হয়েছেন। তাদের মধ্যে গাজীপুর মহানগর পুলিশের গাছা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনারসহ ২৫ জন করোনা পজিটিভ হয়েছেন। এছাড়া ৭ জন গাজীপুর জেলা পুলিশের কালীগঞ্জ থানার পুলিশ সদস্য।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ঘরে থাকা, সামাজিক দুরত্ব বঝায় রাখা, হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যাক্তিদের পাহারা দেয়া, কখনো করোনা পজিটিভ ব্যাক্তিদের আনা নেয়াসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সেবা দিতে গিয়ে করোনা পজিটিভ হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়া গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দস্যু নারায়ণপুর এলাকার ছোঁয়া এগ্রো প্রোডাক্ট কারখানার ১৭ জন শ্রমিক করোনা পজিটিভ হয়েছে। এ কারখানার কাঁচামাল আনা হয় দেশের করোনার অন্যতম হটস্পট নারায়ণগঞ্জ থেকে। কাঁচামাল সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত ট্রাক ও ট্রাকের শ্রমিকরা অবাধে ছোঁয়া কারখানার ভিতরে শ্রমিকদের সাথে মেশার সুযোগ পেত। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কারখানার ভিতরে কাজ করা শ্রমিকদের সংক্রামক ব্যাধি থেকে রক্ষার জন্য হাত ধোয়া ছাড়া আর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অনেকের সন্দেহ এ কারখানা থেকেই কাপাসিয়ায় চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হয়। কারণ এ কারখানার এক শ্রমিক কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাথা ব্যাথার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে গেলে চিকিৎসকদের সন্দেহ হলে তার করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ ফলাফল আসে। কাপাসিয়ায় সেই প্রথম করোনা পজিটিভ। পরে তার সহকর্মীদের নমুনা পরীক্ষায় ঐ কারখানার আরো ১২ শ্রমিক কাপাসিয়ায় ও ৪ শ্রমিক শ্রীপুরে করোনা পজিটিভ হয়।
এছাড়া গাজীপুর মহানগর এলাকায় একমাত্র ছেলেসহ একজন ও কাপাসিয়া এলাকায় একজন সাংবাদিক করোনা পজিটিভ হয়েছেন।
(আমরা মহান আল্লাহর নিকট সকলের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।)