গণবাণী ডট কম:
আজ মুসলিম জাহানের বহু কাংখিত পহেলা রমজান। শুক্রবার পশ্চিমাকাশে সূর্য অস্ত যাওয়ার পরপরই নতুন চাঁদ উদিত হয়ে পবিত্র রমজান মাসের সূচনা করেছে।
মাহে রমজানের প্রধান আমল হলো ফরজ রোজা। রোজা ফার্সি শব্দ, যার অর্থ ‘বিরত থাকা’। আরবিতে বলা হয় সিয়াম, অর্থ ‘বিরত থাকা’, ‘আত্মসংযম করা’ ইত্যাদি। পরিভাষায় সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পানাহার, দাম্পত্য মিলন ও রোজা ভঙ্গ হওয়ার সকল বিষয় থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম বা রোজা পালন।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি “সিয়াম” ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য; যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৩)।
রমজান মাস মানবজাতির জন্য জান্নাতের সুসংবাদ নিয়ে আসে। তাইতো রাসুল (সা:) বলেন, রমজান মাস যখন আগমন করে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের শৃংখলাবদ্ধ করা হয়। (নাসায়ী, আল মুসতাদরাক)
এই মাস মুমিনের অতীতের গুনাহ সমূহকে মুছে দেয়। রাসুল (সা:) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াব অর্জনের নিয়তে রমজানের সিয়াম পালন করবে তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (বোখারী ও মুসলিম)
রমজান মাস সহানুভূতির মাস। রমজান মাস এলে রাসূল (সা:) দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের প্রতি দান সদকা করতে উৎসাহিত করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: যখন রমাদান মাস আসে, তখন জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়; শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (বুখারি, তৃতীয় খণ্ড হাদিস: ১,৭৭৮)।
নাজাতের বার্তা নিয়ে এল মাহে রমজান। প্রিয় নবী (সা.) বলেন: রমজানের প্রথম অংশ রহমত বা দয়া, করুণা; মাঝের অংশ মাগফিরাত বা ক্ষমা; শেষাংশ নাজাত বা মুক্তি। (বায়হাকি শরিফ)। রহমতের বারিতে সিঞ্চিত হয়ে, ক্ষমার মহিমায় উদ্বেলিত নবজীবন লাভ করে, নাজাত তথা অনন্ত মুক্তির নবদিগন্তের জান্নাতি আহ্বানে অফুরান কল্যাণের পথে অভিযাত্রার সুবর্ণ সুযোগ মাহে রমজান।
রমজান মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। কারণ এমাসেই আল কোরআন অবতীর্ণ হয়। এ বিষয়ে ইরশাদ হচ্ছে : রমজান মাস, যাতে নাজিল হয়েছে মানুষের দিশারি সত্যপথের স্পষ্ট নিদর্শন এবং সত্য ও অসত্যের মধ্যে পার্থক্যকারী পবিত্র আল কোরআন। সুতরাং তোমরা যারা এই মাস প্রতক্ষ করবে, তারা এতে সিয়াম পালন করবে। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)।
রমজান মাস অনেক ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার স্মৃতি ধারণ করে রয়েছে। অধিকাংশ আসমানী কিতাব ও সহিফা নাজিল হয়েছিল রমজান মাসে। পহেলা রমজান হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে নাজিল হয়েছিল সহিফা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম মুসলিম জাতির জনক। তিনিই মক্কা নগরীর পত্তন করেন। তিনি আল্লাহর নির্দেশে কাবা শরিফ পুনর্নির্মাণ করেন এবং হজের ঘোষণা দেন।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রমাদানের প্রথম দশক রহমতের, দ্বিতীয় দশক মাগফিরাতের এবং শেষ দশক দোজখের আগুন থেকে নাজাতের।
আত্মশুদ্ধি, সহিষ্ণুতা, সহমর্মিতা ইত্যাদি গুণ অর্জনের প্রত্যক্ষ প্রশিক্ষণ লাভ হয় রমজানে রোজা পালনের মাধ্যমে। আমরা এই মোবারক মাসকে জানাই খোশ আমদেদ।