কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় গত ৯ দিনে নতুন কোন করোনা পজিটিভ ফলাফল আসেনি। এ সময়ের মধ্যে উপজেলা থেকে ১২৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় সকলের নেগেটিভ ফলাফল পাওয়া গেছ। যেখানে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত কাপাসিয়ায় মোট ৩৮১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে মোট ৭০ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। সেখানে ১৮ এপ্রিল থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত নতুন কোন করোনা পজিটিভ না পাওয়ায় উপজেলায় আলোচনা শুরু হয়েছে, তাহলে কি কাপাসিয়ায় অঘোষিত লকডাউন কড়াকড়িভাবে বাস্তবায়নের উপজেলা প্রশাসনের তৎপড়তার সুফল আসতে শুরু করেছে?
তবে, এর বিপরীত মতও আছে। তাদের বক্তব্য, এখানে কয়েকদিন ধরে কম সংখ্যক মানুষের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। উপজেলায় আরো বেশী সংখ্যক মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হলে প্রকৃত অবস্থা জানা যাবে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সকলকে ঘরে থাকার ও সামাজিক দুরত্ব বঝায় রাখার সরকারি নির্দেশনা জারির পর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে তৎপর হয় কাপাসিয়া উপজেলা প্রশাসন। কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা: ইসমত আরা কাপাসিয়াবাসীকে করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে সার্বক্ষণিকভাবে বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছেন। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলামের নির্দেশনা ও পরামর্শে প্রতিদিন তিনি উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার এলাকা পরিদর্শন করে প্রথম দিকে নির্দিষ্ট সময়ে খোলা ও বন্ধ করা নিশ্চিত করেছেন। নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন। কিন্তু কাপাসিয়ার মানুষ পরিস্থিতি বুঝাতে কাজ করেছেন। এ অবস্থায় উপজেলায় কিছু করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়।
কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হতে প্রাপ্ত তথ্যে দেথা যায়, দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা পজিটিভ শনাক্ত হবার পর থেকে গত ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত কাপাসিয়া উপজেলা থেকে মোট ৩৮১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে কাপাসিয়ায় মোট ৭০ জনের করোনা পজিটিভ ফলাফল পাওয়া যায়। এদের মধ্যে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স, স্বাস্থ্য সহরকারীসহ স্বাস্থ্য বিভাগের ৩০ জন, উপজেলার দুস্যু নারায়নপুর গ্রামের ছোঁয়া এগ্রো প্রোডাক্ট নামক একটি কারখানার ১৪ জন শ্রমিক, গাজীপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ২ কর্মচারী রয়েছেন। পরে প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে উক্ত কারখানাসহ দস্যু নারায়নপুর গ্রাম, পজিটিভ হওয়াদের বাড়ী লক ডাউন ঘোষণা করে।
কিন্তু পরবর্তী সময়ে উপজেলা প্রশাসন ঘরে থাকা ও সামাজিক দুরত্ব বঝায় রাখার বিষয়ে কঠোর হলে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। মানুষের ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে, ঘরের বাইরে সামাজিক দুরত্ব বঝায় রাখার জন্য জন সচেতনতার পাশাপাশি তিনি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ সহায়তা বিতরণ ও অন্যান্য খাদ্য বান্ধব কর্মসূচী বাস্তবায়নে সচেষ্ট রয়েছেন। পরবর্তী সময়ে তিনি উপজেলার হাট বাজার খোলা স্থানে স্থানান্তর করেও সামাজিক দুরত্ব বঝায় না থাকায় উপজেলার সকল হাট বাজার বন্ধ করে দিয়ে ভ্যান গাড়ীতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন। পাড়া মহল্লায় দোকান পাটের আড্ডা বন্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। অপরদিকে ঘরে থাকা কর্মহীন, বেকার অসহায় গরীব মানুষের জন্য সরকারি খাদ্য সহায়তা সঠিকভাবে মানুষের ঘরে পৌছানোর জন্য কাজ করছেন। খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর ভিজিডি-ভিজিএফ সঠিকভাবে চলমান রেখেছেন। এসব কর্মসূচীতে অসদুপায় অবলম্বনকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে শাস্তি দিয়েছেন। এছাড়া বিদেশ ফেরতদের হোম কোয়ারেন্টাইন বাস্তবায়নে প্রশাসনের পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, কাপাসিয়া থানা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়া সাধারণ ব্যক্তি যারা পজিটিভ হয়েছেন তাদের একটি বেসরকারী হাসপাতালে আইসোলেশন সেন্টার করে সেখানে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব কারণে উপজেলায় করোনা পজিটিভ শনাক্ত অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। এসব কারণে উপজেলায় করোনা পজিটিভ শনাক্ত অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যানবিদ বায়েজিদ মোল্লা জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ৩০ জন কর্মকর্তা কর্মচারী করোনা পজিটিভ হবার পর কয়েকদিন নমুনা সংগ্রহে সমস্যা হলেও পরে গাজীপুর থেকে স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন এসে নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকা পাঠানো অব্যাহত রাখা হয়। ১৭ এপ্রিল থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত কাপাসিয়া উপজেলা থেকে নতুন ১২৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে। সকলের নমুনা ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। সর্বশেষ ২৭ এপ্রিল একদিনে ৩৯ জনের নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে সকলের নেগেটিভ এসেছে। অর্থাৎ গত ৯ দিনে কাপাসিয়া উপজেলায় নতুন কোন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়নি।
এসব বিষয়ে কাপাসিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে আমরা কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন মানুষের ঘরে থাকা ও সামাজিক দুরত্ব বঝায় রাখার জন্য শুরু থেকেই কাজ করছি। হাট বাজার বন্ধ করাসহ বিভিন্ন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিকল্প উপায়ে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এই সময়ে কর্মহীন, ঘরবন্দী অসহায় ও অসচ্চল পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য সহায়তা আমরা তালিকা করে ঘরে ঘরে পৌছে দিয়েছি। তিনি জানান, ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত আমরা উপজেলা ১১টি ইউনিয়নের প্রতি ইউনিয়েন তিন ধাপে ৩৯০টি করে সর্বমোট প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগ ৩ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছে। কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ব্যক্তিগত তহবিল থেকে প্রায় দেড় হাজার পরিবারকে খ্যাদ্য সহায়তা প্রদান করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক-স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আলাদাভাবে অসহায় মানুষকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছে।
এ বিষয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, গাজীপুরের মধ্যে কাপাসিয়া উপজেলায় একটি কারথানায় বেশ কিছু শ্রমিক করোনা পজিটিভ হবার পর আমরা কাপাসিয়ার প্রতি বিশেষ নজর দেই। সেখানে সাধারণ ছুটি কালীন সময়ে ঘরে থাকা ও সামাজিক দুরত্ব বঝার রাখা, বিদেশ ফেরতদের হোম কোয়ারেন্টাইনসহ বিভিন্ন দিকে উপজেলা প্রশাসনের নজরদারী বাড়ানো হয়। সরকারের খাদ্য সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি হাট বাজার বন্ধ করে ভ্যানগাড়ীতে নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য সরবরাহ ব্যবস্থা চালু, আভ্যন্তরীণ যোগাযোগ সিমীত করাসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মানুষ আরেকটু শহনশীল হয়ে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে থাকলে সকলেই করোনা থেকে মুক্ত থাকতে পারবে।