গণবাণী ডট কম:
রাজধানীর অতি নিকটে হওয়ার কারণে শিল্প নগরী গাজীপুর দেশের মধ্যে করোনা সংক্রমণের দিক দিয়ে তৃতীয় হটস্পট হিসাবে অনেক আগেই চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু এখানেই এখনো স্থাপন করা হয়নি করোনাভাইরাস পরীক্ষার কোন ল্যাব। যদিও নানা কারণে গাজীপুর করোনা সংক্রমণের প্রবল ঝুকির মধ্যে রয়েছে। তবে, আশার কথা যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এবং গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের প্রচেষ্টায় জেলাবাসীর এ অভাব পুরণ হতে চলেছে। আগামী ৩/৪ দিনের মধ্যেই গাজীপুরে স্থাপিত হবে করোনা পরীক্ষার পিসিআর ল্যাব।
গাজীপুরে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের বাস। এখানে এ পর্যন্ত মাত্র ৩ হাজার ৫৩০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে থেকে ৩৩৬ জনের করোনা পজিটিভ ফলাফল পাওয়া গেছে। নানা জটিলতায় নমুনা সংগ্রহ, ঢাকায় প্রেরণ ও ফলাফল প্রাপ্তীতে বিলম্ব হচ্ছে। অনেকে নমুনা পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করতে করতে হতাশ হয়ে ঢাকা চলে যান। আবার অনেকে নমুনা দিয়ে ৩/৪ দিনের ফলাফল জানতে পারেন না। এসব কারণে গাজীপুরে করোনা পরীক্ষার জন্য একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী।
গাজীপুর জেলায় রয়েছে, কয়েক হাজার তৈরী পোশাক শিল্প, কল কারখানা। এসব কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে ছুটি দিলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের গ্রামের বাড়ী চলে যান। সম্প্রতি কারখানা গুলো পুনরায় খুলে দিলে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লাখ লাখ পোশাক শ্রমিক ঝুকি নিয়ে আবার গাজীপুরে প্রবেশ করেছে। সরকারের নির্দেশনা ছিল, কোন নাগরিক এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গেলে তাকেও ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। গাজীপুরে আগত এসব শ্রমিক এ নির্দেশনা না মেনে অধিকাংশ স্বাস্থ্য বিধি না মেনে কাজে যোগ দিয়েছে। শপিংমল ও মার্কেট সীমিতভাবে খুলে দেয়া হচ্ছে। ফলে জেলায় করোনা সংক্রমণের ঝুকি অস্বাভাবিক রকম বেশী।
অপরদিকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটিকে কোভিড ১৯ চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু গাজীপুরে করোনা পরীক্ষার কোন ল্যাবরেটরী না থাকায় জেলাবাসীকে করোনা পরীক্ষার জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আর এসব কারণে গাজীপুরে এখন অন্তত একটি করোনা পরীক্ষার পিসিআর ল্যাব স্থাপন অত্যন্ত জরুরী এবং বাস্তবতা।
এরকম পরিস্থিতিতে গাজীপুরে একটি করোনা পরীক্ষার পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তার আন্তরিক প্রচেষ্টায় গাজীপুরে করোনা পরীক্ষার পিসিআর ল্যাব স্থাপনের কাজ অনেকদুর এগিয়ে গিয়েছে।
এ বিষয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, জেলাবাসীর এ প্রত্যাশা ও বাস্তবতার নিরিখে বিষয়টির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ইতিমধ্যে চিঠি পাঠিয়েছি। গাজীপুরের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে পিসিআর ল্যাব রয়েছে। আমরা চাচ্ছি সেই ল্যাবটি শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে স্থাপন করতে। এ বিষয়ে বিষয়ে শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও মাননীয় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব জাহিদ আহসান রাসেল এমপি মহোদয় সার্বিক সহযোগিতা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কথা বলেছেন। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে পিসিআর ল্যাব ব্যবহারের জন্য অনুমতির নিতে মাননীয় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ইতিমধ্যেই মাননীয় কৃষিমন্ত্রী মহোদয়ের সাথে কথা বলে সম্মতি নিয়েছেন। এছাড়া যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কথা বলেছেন। এখন ল্যাব স্থাপনের জন্য আমাদের ক্যাবিনেট প্রয়োজন। এজন্য আমি ও মাননীয় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মহোদয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছি। এছাড়া ঢাকার তেজগাঁওয়ের কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (Medical Store Depot -CMSD) থেকে কেবিনেট এনে তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজে একটি করোনা পরীক্ষার পিসিআর ল্যাব করার বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের সহযোগিতায় গাজীপুরবাসীর প্রত্যাশা পূরণ হতে চলেছে। আগামী ৩/৪ দিনের মধ্যেই গাজীপুরবাসী করোনা পরীক্ষার পিসিআর ল্যাব পাবেন। গাজীপুরবাসীকে আর করোনা পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা বা ভোগান্তি পোহাতে হবে না।
তিনি আরো জানান, পোশাক শিল্প মালিকদের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের করোনা পরীক্ষার জন্য গাজীপুরে কয়েকটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য গাজীপুরের তেতুইবাড়ীতে অবস্থিত শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিকেল কলেজ স্পেশালিস্ট হসপিটালে একটি স্থাপন করা। যাতে সেই এলাকার শিল্প কারখানার শ্রমিকরা সহজে করোনা পরীক্ষা করতে পারে।