গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (অঞ্চল-৭) নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন (৫০) হত্যা মামলায় পুলিশ বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সহকারী প্রকৌশলীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- সহকারী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান সেলিম, মাইক্রোবাস চালক হাবিব মিয়া এবং ভাড়াটে খুনি হেলাল হাওলাদার শাহিন।
তুরাগ থানার পুলিশ পরিদর্শক শেখ মফিজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, তাদের মধ্যে হাবিব ও শাহিন বৃহস্পতিবার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে। একই সঙ্গে নিহত প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের সহকর্মী সহকারী প্রকৌশলী আনিছুর রহমান সেলিমের ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা চেয়ে তাকে হাজির করার পর আদালত তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
অপরদিকে মামলার সাক্ষী হিসাবে রিকশাচালক রফিকুল ইসলাম ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন। তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন ঢাকা মহানগর হাকিম শহিদুল ইসলাম।
গত ১১ মে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মিরপুরের বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশে বের হন প্রকৌশলী দেলোয়ার। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ পাচ্ছিল না পরিবার। ওই দিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর ব্রিজের পশ্চিম দিকের একটি জঙ্গল থেকে দেলোয়ারের লাশ উদ্ধার করা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ১১ মে বিকাল ৪টায় অজ্ঞাতনামা হিসাবে লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে জানা যায় নিহত ব্যক্তি দেলোয়ার হোসেন (৫০)। তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (অঞ্চল-৭)। পরে পরিবারের সদস্যরা ১২ মে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে লাশটি সনাক্ত করেন। এ বিষয়ে নিহতের স্ত্রী মোছা: খোতেজা আক্তার (৪২) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে তুরাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদশর্ক মফিজুল জানান, এটি পূর্ব পরিকল্পিত হত্যা ছিল। তিনি বলেন, “গ্রেফতারকৃত হাবিব ও শাহিন সহকারী প্রকৌশলী সেলিমকে হত্যার পরিকল্পনার জন্য দোষী বলে দাবী করেছে,”।
বৃহস্পতিবার (২১ মে) তুরাগ থানার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা তাদের তিনজনকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করেন। আদালতে আসামি হাবিব ও শাহিন হাওলাদারকে ১৬৪ ধারায় স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে সম্মত হয়। পরে তদন্ত জবানবন্দী রেকর্ডের জন্য আদালতে আবেদন করেন। তার অবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় ঢাকা মহানগর হাকিম শহিদুল ইসলাম আসামি হাবিবের ও ঢাকা মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমান আসামি শাহিনের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। আদালত তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এসময় মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তার সহকর্মী সহকারী প্রকৌশলী সেলিম হোসেনকে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তুরাগ থানার পুলিশ পরিদর্শক (অভিযান) শেখ মফিজুল ইসলাম। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম শহিদুল ইসলাম পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার কামরুজ্জামান সরদার গণমাধ্যমকে জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেনেছি পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনকে হত্যা করা হয়। গাজীপুর সিটির সহকারী প্রকৌশলী সেলিম স্বীকার করেছেন যে, তিনি প্রকৌশলী দেলোয়ারকে গাড়িতে তুলে নেন। পরে তিনি পাশে বসেন এবং ভাড়াটে খুনি শাহিন দেলোয়ার হোসেনের ঠিক পেছনের সিটে বসে আকস্মিকভাবে ভিকটিমের গলায় রশি জড়িয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার পর ১৭ নম্বর সেক্টরের খালি প্লটে রাস্তার পাশে লাশ ফেলে দিয়ে ভিকটিমের ফোনটি লেকে ফেলে দেয় তারা। ঘটনার আগের দিন সেলিম ও শাহিন পল্লবীর লালমাটিয়া এলাকার একটি দোকান থেকে ১০০ টাকা দিয়ে রশিটি কেনে।
পুলিশ ভুক্তভোগীর বাসভবন এবং আশেপাশের অঞ্চলগুলির সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছে এবং বাসার সামনে একটি মাইক্রোবাসে দু’জনকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ফুটেজে দেখা গেছে যে, তারা একটি রিকশা চালককে থামিয়েছে এবং কাউকে ফোন করার জন্য তার মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করেছে। এর কয়েক মুহূর্ত পরে, কেউ ফোনে আবার কল দেয় এবং মাইক্রোবাস নিয়ে অপেক্ষা করা ব্যক্তিরা দেলোয়ারের বাসার সামনে গিয়ে তাকে অপহরণ করে, পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ ১৭ মে প্রথমে রিকশাচালক রফিকুল ইসলামকে সনাক্ত করে। পরে পুলিশ বুধবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রফিকুলের তথ্যের ভিত্তিতে এবং কিছু প্রযুক্তিগত সহায়তায় তিনজনকে গ্রেফতার করে, পরিদর্শক মফিজুল জানান।
তদন্ত কর্মকর্তা মফিজুল বলেন, রিকশা চালক রফিকুল, যিনি আদালতে ১৪৪ ধারায় সাক্ষী হিসাবে তার বক্তব্যও রেকর্ড করেছেন, তিনি জানান, তারা (গ্রেফতারকৃতরা) তাকে তার ফোন ব্যবহারের জন্য একশ টাকা দিয়েছিলেন।
গ্রেফতারকৃতরা পরে বেড়িবাগের কাছে দেলোয়ারকে নিয়ে যায় এবং সেলিমের নির্দেশে শাহিন তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বলে পুলিশ জানিয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা দেলোয়ারের লাশ ফেলে দিয়ে তার মোবাইল ফোনটি দিয়াবাড়ি হ্রদে ফেলে দেয়, পরে পুলিশ ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সের সাহায্যে উদ্ধার করে।
পরিদর্শক মফিজুল আরো বলেন, “আমরা সহকারী প্রকৌশলী সেলিমকে হত্যার পেছনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করব এবং হত্যার পিছনে আর কেউ জড়িত ছিল কিনা তা জানার চেষ্টা করব,”।
সূত্র : ডেইলি স্টার, বাংলা ট্রিবিউন ও জাগো নিউজ২৪ডটকম।