নিজস্ব প্রতিবেদক, কাপাসিয়া (গাজীপুর):
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে গৃহীত ব্যবস্থার কারণে দেশের ক্ষতিগ্রস্থ ও অসহায় ৫০ লাখ পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত নগদ অর্থ সহায়তার তালিকায় নিজের স্বজনদের নাম ও ফোন নাম্বার অন্তর্ভুক্ত করার অপরাধে এক ইউপি সদস্যকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোসা: ইসমত আরা সোমবার বিকেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
দন্ডিত ইউপি সদস্যের নাম মোঃ আব্দুল বাতেন। তিনি কাপাসিয়া উপজেলার টোক ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার)।
জানা যায়, বিশ্ব মহামারি করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্থ ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবারকে এককালীন আড়াই হাজার টাকা করে ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা নগদ সহায়তা প্রদানের ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ টাকা পাওয়ার তালিকায় থাকার কথা রিকশা চালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, দোকানের কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায় কর্মরত শ্রমিক, পোলট্রি খামারের শ্রমিক, বাস-ট্রাকের পরিবহন শ্রমিক ও হকারসহ নিম্ন আয়ের নানা পেশার মানুষ।
এ তালিকা তৈরী করেছে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, সদস্য, শিক্ষক, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি। অনিয়ম রোধে বিকাশ, রকেট, নগদ ও সিওর ক্যাশের মতো মোবাইল আর্থিক সেবার মাধ্যমে ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে টাকা পৌছে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়।
এ ঘোষনা অনুযায়ী গত ১৪ মে গণভবন থেকে মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবার মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের হিসাবে সরাসরি নগদ অর্থ পাঠানোর এ উদ্যোগের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ঈদুল ফিতরের আগেই এ নগদ সহায়তার টাকা তালিকাভুক্ত হতদরিদ্র পরিবারের পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরকারের এ মহৎ প্রকল্প থেকে অনৈতিক সুবিধা নিতে কিছু জন প্রতিনিধি নানাভাবে চেষ্টা করে। কিছু অনিয়মের অভিযোগের কারণে তালিকা যাচাই করতে গিয়ে কিছুটা বিলম্ব ঘটে।
এমনি অনৈতিক সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করেছেন কাপাসিয়ার টোক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোঃ আব্দুল বাতেন। তিনি তার ওয়ার্ডের নামের তালিকায় নিজের ৬ স্বজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। তারা প্রত্যেকেই প্রতি মাসে ২ হাজার ৫ শত টাকা ও ২০ কেজি চাল পাওয়ার কথা রয়েছে। তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা হলেন তার ছেলে মোঃ সাইফুল ইসলাম, ছেলের স্ত্রী মোছা. আনার কলি, সহোদর ভাই মোঃ সাহাবুদ্দিন, ভাইয়ের স্ত্রী রেনুজা খাতুন, ভাতিজা মোঃ কাউসার ও মোঃ ফারুক হোসেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোপন সূত্রে বিষয়টি জানতে পেরে সোমবার বিকেলে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় তিনি ঘটনার সত্যতা পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ইউপি সদস্য মোঃ আব্দুল বাতেনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসা. ইসমত আরা সাংবাদিকদের জানান, ‘প্রধানমন্ত্রীর নগদ অর্থ সহায়তা’ কর্মসূচির টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ইউপি সদস্য আব্দুল বাতেন তাঁর নিজ পরিবারের ৬ সদস্যের নাম ও মোবাইল নাম্বার অন্তর্ভুক্ত করে জমা দিয়েছিলেন। ইতোমধ্যে তিনি সেভাবেই নামগুলো আপলোড দিয়েছেন। এখন তাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হবে।। এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২’ এর ৩৯ ধারা আনুযায়ী তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে তা আদায় করা হয়েছে।