গণবাণী ডট কম:
সংসদে বাজেট পেশের ইতিহাসে এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতিতে বর্তমান জাতীয় সংসদের অষ্টম অধিবেশন শুরু হচ্ছে আজ। বুধবার বিকেল ৫টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ অধিবেশন শুরু হবে।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রস্তাব পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। করোনা মহামারির বর্তমান পরিস্থিতিতে সংসদ সচিবালয় থেকে এবার সম্পূর্ণ নতুনভাবে এমনকি অনেক ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ ও কড়াকড়ি আরোপ করে বাজেট অধিবেশন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
গণমাধ্যমকর্মীদের সংসদে না গিয়ে সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে বাজেট অধবেশনের সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য আগেই পরামর্শ দেয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিবেচনায় বাজেট উত্থাপনের দিন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গকে বাজেট প্রত্যক্ষ করার আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার বাজেট অধিবেশনে সংসদ সদস্যদের উপস্থিতিও সীমিত করা হয়েছে। ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে তালিকা করে ৮০ থেকে ৯০ জনকে অধিবেশনে যোগদানের জন্য বলা হবে। এরই মধ্যে তালিকা করে হুইপদের পক্ষ থেকে ওই সব সংসদ সদস্যকে বৈঠকে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। যারা একটু বয়স্ক সংসদ সদস্য তাদের সংসদে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
অধিবেশন পরিচালনার জন্য সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসাও সীমিত করা হয়েছে। শুধুমাত্র যাদের প্রয়োজন হবে তারাই আসবেন। আর যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা পজিটিভ তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে।
করোনা সংক্রমণ রোধে সংসদে আসন বিন্যাসেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর আশপাশের বেশ কয়েকটি আসন ফাঁকা রাখা হবে।
একইভাবে অন্যদের আসনও ফাঁকা রেখে বিন্যাস করা হবে। সংসদে যোগদানকারী সংসদ সদস্যদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করতে হবে। প্রত্যেকের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। এছাড়া টানেলের ভিতর স্থাপন করা জীবাণুমক্তকরণ চেম্বারের ভেতর দিয়ে সব সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রবেশ করতে হবে।
এছাড়া করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার বাজেট অধিবেশন খুবই সংক্ষিপ্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। জানা গেছে ১২ কার্যদিবস চলবে এবারের অধিবেশন। এরইমধ্যে বাজেট অধিবেশন নিয়ে সংসদ সচিবালয় একটি সূচি তৈরি করা হয়েছে।
বুধবার সংসদের অধিবেশন শুরুর পরদিন ১১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিকেল ৩টায় ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বাজেট উত্থাপন করবেন। এবারের বাজেটের আকার হতে পারে ৫ লাখ ৬০ হাজায় কোটি টাকারও বেশি। বাজেট পেশের পর ১২ ও ১৩ জুন সাপ্তাহিক ছুটি অধিবেশনের মুলতবি থাকবে। ১৪ ও ১৫ জুন ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা এবং সম্পূরক বাজেট পাস করা হতে পারে।
এর পরদিন ১৬ জুন প্রস্তাবিত (২০২০-২০২১ অর্থ বছরের) সাধারণ বাজেটের ওপর আলোচনা শুরু হবে। ২৯ জুন সোমবার বাজেটের ওপর সমাপনী আলোচনা হবে। এদিনই পাস হবে অর্থবিল। ৩০ জুন মূল বাজেট ও নির্দিষ্টকরণ বিল পাস করা হবে। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, অধিবেশন শুরু ও বাজেট পেশের দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদের বৈঠক শুরু করে একটানা দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চালানোর কথা রয়েছে।
আজ অধিবেশন শুরুর দিন অধ্যাদেশ উত্থাপন এবং শোক প্রস্তাব উত্থাপন ও গ্রহণের মধ্য দিয়ে দিনের কার্যক্রম শেষ করা হবে। চলতি সংসদের সদস্য ও ঢাকা-৫ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লা গত ৬ মে ঢাকায় চিকিত্সাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। রেওয়াজ অনুযায়ী তার মৃত্যুতে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনার পর আজকের বৈঠক মুলতবি করবেন স্পিকার।
আগামীকাল বিকাল ৩টায় অধিবেশন শুরু হবে। বাজেট পেশ ও অর্থ বিল উত্থাপনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এদিনের কার্যক্রম। এরপর ১২ ও ১৩ জুন বৈঠক মুলতবি রাখা হবে। ১৪ এবং ১৫ জুন সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা ও সম্পূরক বাজেট পাশ করা হবে। এরপর শুরু হবে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা। ১৬ জুন মঙ্গলবার ও ১৭ জুন বুধবার দুই দিন আলোচনা শেষে ১৮ থেকে ২১ জুন পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি থাকতে পারে। এরপর ২২ থেকে ২৪ জুন আরো তিন দিন বাজেটের ওপর আলোচনা করে ২৫ থেকে ২৮ জুন চার দিনের বিরতি দেওয়া হতে পারে। ২৯ জুন সোমবার বাজেটের ওপর সমাপনী আলোচনা হবে। ঐদিনই পাশ হবে অর্থবিল। পরদিন ৩০ জুন মূল বাজেট ও নির্দিষ্টকরণ বিল পাশ হবে। এরপর আরেকটি বিরতি দিয়ে ৪ বা ৯ জুলাই একদিনের জন্য অধিবেশন বসে ঐ দিনই সমাপ্তি টানা হতে পারে।
আগামীকাল বাজেট পেশের পর ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে আলোচনা হবে ছয় দিন। আর চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট নিয়ে আলোচনা হবে দুই দিন। সব মিলিয়ে বাজেটের ওপর ২০ থেকে ২২ ঘণ্টা আলোচনা হবে এবার। অধিবেশন শুরু ও বাজেট পেশের দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদের বৈঠক বসবে। চলবে দেড়টা পর্যন্ত।