গণবাণী ডট কম:
প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত নতুন মন্ত্রিসভায় এবারেও সিনিয়র মন্ত্রী হিসাবে ঠাঁই পেয়েছেন বর্ষিয়ান আওয়ামী লীগ নেতা আ ক ম মোজাম্মেল হক। নবগঠিত মন্ত্রিসভায় তার অন্তর্ভূক্তি বিগত সময়ের কাজের স্বীকৃতি হিসাবেই দেখছেন সকলে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোজাম্মেল হকের উপর আস্থা রাখায় আনন্দিত গাজীপুরের আপামর মানুষ।
আ ক ম মোজাম্মেল হক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-১ আসনে টানা ৪র্থবারের মতো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও তিনি বর্তমান সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী।
আ ক ম মোজাম্মেল হক জনপ্রতিনিধি হিসাবে ৫০ বছর যাবত জনগণের সেবক হিসেবে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বর্ষিয়ান এ রাজনীতিক গাজীপুর জেলা আওয়ামী পরিবারের অভিভাবক। তিনি গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি গাজীপুরের সবচেয়ে অভিজ্ঞ, বায়োজৈষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য আওয়ামী লীগ নেতা।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি সকল নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এসব নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্ধী ছিলো বিরোধী রাজনৈতিক আদর্শের নেতারা। কিন্তু এবারই প্রথম তিনি নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্ধীতা করে বিজয়ী হয়েছেন।
তাঁর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে মৃদুভাষী বর্ষিয়ান এ আওয়ামী লীগ নেতাকে অনেক মনোকষ্টের ভিতর দিয়ে যেতে হয়েছে। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি যাদের সাথে রাজনীতি করেছেন, একান্ত আপনজন ভেবে কাছে টেনে রেখেছেন, বিভিন্ন সময়ে তিনি যাদের সন্তান স্নেহে আগলে রেখেছেন-এমন কয়েকজন নেতা শুধুমাত্র ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করার জন্য জঘন্য মিথ্যাচার করেছেন। তাঁর চরিত্রে কালিপা লেপনের জন্য সবরকম চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ভদ্র ও সজ্জন এ রাজনীতিবিদ সবকিছু সহ্য করেছেন। কোন কথার উত্তর দেননি।
তাঁর ঘনিষ্ঠরা আরো বলছেন, গাজীপুরের যে সকল আবাল আ ক ম মোজাম্মেল হককে নিয়ে উদ্ধত্য দেখিয়েছে, তার সম্মানহানির চেষ্টা করেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত তাদের জন্য উপযুক্ত জবাব হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, বলুন, ‘হে আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান করো এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করো আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত করো। তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাশালী।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে গাজীপুরে কখনোই কোন আসনে নৌকার প্রার্থীরা পরাজিত হয়নি। কিন্তু এবার গাজীপুরের পাঁচটি আসনের মধ্যে গাজীপুর-১, গাজীপুর-২ ও গাজীপুর-৫ এ তিনটি আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার বিপক্ষে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র তিন প্রার্থীকে নিয়ে নৌকা বিরোধী শক্তিশালী জোট গঠন করেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নিয়ে নৌকা বিরোধী প্রচার-প্রচারণাকালে জাহাঙ্গীর আলম ও তার মনোনীত তি প্রার্থী বর্তমান মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন। একই সাথে ভোটারদের খুশি করতে সরকারের সমালোচনা করতেও ছাড়ছেন না তিনি। তিনি এর আগে গত সিটি নির্বাচনে তার মায়ের পক্ষে প্রচারণার সময় করেছিলেন। জাহাঙ্গীর আলম এসব করছেন, তার ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে প্রতিশোধ নিতে।
মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে গোপনে ধারণ করা জাহাঙ্গীর আলমের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা ও গাজীপুর জেলার কয়েকজন নেতা সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেন। তখন মহানগরীতে তাঁর বিচার দাবীতে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। পরে গত বছরের ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে কটুক্তির অপরাধে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ ও দলের প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করা হয়। পরে তিনি গাজীপুর সিটির মেয়র পদও হারান।
এসব ঘটনার জন্য জাহাঙ্গীর আলম মুলত মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. আজমত উল্লাহ খানসহ স্থানীয় সিনিয়র নেতাদের দায়ী করেন। এ ঘটনার পর থেকে তাদের সাথে জাহাঙ্গীরের বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। জাহাঙ্গীর আলম নৌকা বিরোধী অবস্থান নেন।
কিন্তু গাজীপুরবাসী জাহাঙ্গীরের পক্ষ নেয়নি। তারা সত্য ও ন্যায়ের, আদের্শের পক্ষে রায় দিয়েছেন। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের সেই রায়কে স্বীকৃতি দিয়েছেন। গাজীপুরে একজন মন্ত্রী ও দুইজন প্রতিমন্ত্রী দিয়েছেন।
এসব বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে জানতে চাইলে নির্বাচনের আগে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আমার কাছে তার (জাহাঙ্গীরের) কথার কোন মূল্য নেই। আমি আশা করি জনগণ ব্যালটের মাধ্যেমে সকল মিথ্যাচারের জবাব দেবে। এলাকার মানুষ নৌকায় ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবে।
তিনি আরো বলেছিলেন, ‘জাহাঙ্গীরের কার্যকলাপ আমাদের কেন্দ্রের নেতৃবৃন্দ পর্যবেক্ষণ করছেন। সে এখন যা করছে, তার জন্য ভবিষ্যতে তাকে ফল ভোগ করতে হবে।’
নির্বাচনের ফলাফলে আ ক ম মোজাম্মেল হকের কথাই সত্যি হয়েছে। জনগণ ব্যালটের মাধ্যেমে সকল মিথ্যাচারের জবাব দিয়েছে। এখন দেখার পালা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ গাজীপুর আওয়ামী লীগ বিষয়ে কি ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের সংক্ষিপ্ত জীবনী:
আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের রাজনৈতিক সহকর্মীদের কাছ থেকে জানা যায়, বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। তিনি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান থেকে মন্ত্রী হয়েছেন। তিনি মাত্র ২৭ বছর বয়সে ১৯৭৩ সালে জয়দেবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সেই থেকে দীর্ঘ ক্লান্তিহীন ও নিরলস যাত্রা। টানা ৫০ বছর যাবত তিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত জন প্রতিনিধি। এরমধ্যে ৩৫ বছর স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি ও ১৫ বছর জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রের আইন প্রণেতা। প্রথমবার সংসদ সদস্য হয়ে তিনি ভূমি মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরে গত ২০১৪ ও ২০১৮ সালে টানা দুই সরকারের তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. ক. ম মোজাম্মেল হক ছাত্র জীবন থেকেই তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ৩ বার জয়দেবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ১৯৮৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৪ বার গাজীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৮৩ সালে শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ১৯৯৫ সালে ও ২০০৩ সালে শ্রেষ্ঠ পৌর চেয়ারম্যান হিসেবে বিদেশে শিক্ষা সফর করেন।
এছাড়াও আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রয়েছে। গাজীপুরে ১৯৭১ সালে ১৯ মার্চ প্রথম সশস্র প্রতিরোধ যুদ্ধের নায়ক হিসেবে কৃতিত্বের অধিকারী। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি গকুলনগর যমুনা ইয়ুথ ট্রেনিং ক্যাম্পের ডেপুটি চীফ ও পরে ক্যাম্প চীফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের জন্য আ. ক. ম মোজাম্মেল হক ২০১৯ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ লাভ করেন।