গণবাণী ডট কম:
দেশের কয়েক কোটি মানুষ প্রতি বছর এক কোটিরও বেশি পশু কোরবানির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ায়, আসন্ন কোরবানির ঈদের পর কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার তীব্রতর হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
এমন অবস্তায় বিশ্ব মহামারি করোনা ভাইরাস বা কোভিড ১৯ এর সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় গাজীপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ও চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর হাট স্থাপন না করার সুপারিশ করেছে করোনার মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
উল্লেখিত এলাকায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে পশু কেনাবেচার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে তারা পরামর্শ দিয়ে বলেন, সরকার এমন একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে যেখানে একই স্থানে পশু ক্রয়-বিক্রয় ও জবাই করা হবে এবং সেখান থেকেই ইউনিয়ন, গ্রাম বা ওয়ার্ডের মতো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে মাংস বিতরণ করা হবে।
অনলাইনে গবাদি পশু ক্রয়-বিক্রয়ের প্রচারণার পাশাপাশি, প্রচলিত পশুর হাটগুলোতে পশু কেনা-বেচা, সেগুলো জবাই ও মাংস বিতরণকালে স্বাস্থ্য নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন বিশেষজ্ঞরা।
আর অন্যান্য জায়গায় সংক্রমণ প্রতিরোধ নীতিমালা পালন করে পশুর হাট বসানো পক্ষে মত দিয়েছে কমিটি। তবে শহরের ভেতরে হাট স্থাপন করা করা যাবে না।
অনলাইনে এক সভায় কমিটি মোট আটটি সুপারিশ করেছে বলে আজ শুক্রবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা এবং সদস্যসচিব মীরজাদী সেব্রিনার সইয়ে গণমাধ্যমে এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।
কোরবানির হাটের বিষয়ে কমিটি আরও বলেছে, পশুর হাট খোলা ময়দানে হতে হবে, যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব। ৫০ উর্ধ্ব ও অসুস্থ ব্যক্তিদের পশুর হাটে যাওয়া থেকে বিরত থাকা, পশুর হাটে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য পৃথক রাস্তা রাখা, হাটে আসা সব ব্যক্তিকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করা, কোরবানির পশু জবাই বাড়িতে না করে শহরের বাইরে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে করা এবং অনলাইনে অর্ডারের মাধ্যমে বাড়ির বাইরে কোরবানি দেওয়া সম্ভব হলে তাতে উৎসাহিত করা।
এ ছাড়া করোনা সংক্রমণ বিস্তার রোধে আসন্ন ঈদের ছুটিতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম থেকে অন্যান্য স্থানে যাতায়াত বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি।
কমিটির অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে কোভিড-১৯ পরীক্ষার সংখ্যা ও মানোন্নয়নের জন্য পরীক্ষাগারের সংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে পরীক্ষাগারের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। অটো-এক্সট্র্যাকশন মেশিনের সহযোগিতায় পরীক্ষাগারে পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধি করা সম্ভব। এ জন্য বিভিন্ন পর্যায় থেকে দক্ষ জনশক্তিকে পরীক্ষাগারে নিয়োগ দিতে হবে। পরে কোনো স্থানে পরীক্ষার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা থাকলে সেসব স্থান ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে শনাক্ত করে সমস্যা সমাধান করতে হবে। নমুনা দেওয়া থেকে পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া পর্যন্ত সময় কমাতে বলেছে কমিটি। কারণ পরীক্ষার তথ্য দেরিতে পৌঁছালে আইসোলেশন ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভবপর হয় না।
অ্যান্টিজেনভিত্তিক পরীক্ষার অনুমতির জন্য ওষুধ প্রশাসনকে পরামর্শ দিয়ে কমিটি বলেছে এতে অতি সত্ত্বর কোভিড-১৯ পরীক্ষার সুযোগ প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়। সেরোসার্ভিলেন্স কার্যক্রম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে করার পরামর্শ দিলেও বেসরকারিভাবে এই কার্যক্রম না করার জন্য মতামত দিয়েছে কমিটি।