গণবণী ডট কম:
চলতি বাংলাদেশ সফরে জয়হীনই থাকতে হলো সফরকারী জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলকে। টেস্ট-ওয়ানডের মত টি-২০ সিরিজেও জিম্বাবুয়েকে বিধ্বস্ত করলো স্বাগতিক বাংলাদেশ। লিটন দাসের ব্যাটিংয়ের দাপুটে দুই ম্যাচ সিরিজের টি টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়েকে ধবল ধোলাই করলো টাইগার বাহিনী। আজ সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি-২০ ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ৯ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। ফলে দুই ম্যাচের টি-২০ সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতলো মাহমুদুল্লাহর দল। টি-২০র আগে এক ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-০ ব্যবধানে ও তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে জিতেছিলো বাংলাদেশ। ফলে জয় ছাড়াই এবারের বাংলাদেশ সফর শেষ করলো জিম্বাবুয়ে। টি টোয়েন্টিতে ধবল ধোলাইয়ের মাধ্যমে নতুন এক রেকর্ড স্পর্শ করলো বাংলাদেশ। এর ফলে কোন সিরিজে তিন ফরম্যাটেই প্রতিপক্ষকে ধবল ধোলাইয়ের স্বাদ পেলো বাংলাদেশ।
দুই ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে টসে জিতে
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে সফরকারি জিম্বাবুয়েকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রথমে বোলিং করার সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। শুরুতে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশের বোলারদের সামনে ধুকতে থাকে শন উইলিয়ামসের নেতৃত্বাধীন জিম্বাবুয়ে।
নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে টাইগারদের সামনে লক্ষ্য দেয় ১২০ রানের। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা টাইগাররা এই লক্ষ্যকে মামুলি বানিয়ে ২৫ বল হাতে থাকতেই ৯ উইকেটে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
জয়ের ধারা অব্যহত রেখে ৪৫ বলে ৮টি চারের মাধ্যমে ৬০ রান করেন লিটন। এদিকে ৩৪ বলে ৩৩ রান করে সাজঘরে ফেরেন নাঈম শেখ। এরপর ওয়ান ডাউনে নামা সৌম্য সরকার ম্যাচটাকে সহজ করতে ১৬ বলে ২ ছক্কায় ২০ রান করলে জয় পায় বাংলাদেশ। ম্যাচ ও সিরিজ সেরার পুরষ্কার জেতেন লিটন দাস।
প্রথম ম্যাচের দল থেকে চারটি পরিবর্তন এনে সেরা একাদশ সাজায় বাংলাদেশ। বিশ্রাম দেয়া হয় তামিম ইকবাল, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব ও শফিউল ইসলামকে। তাদের পরিবর্তে দলে সুযোগ হয় মোহাম্মদ নাইম, হাসান মাহমুদ ও আল-আমিন হোসেনের। এরমধ্যে প্রথমবারের মত আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামনে পেসার হাসান।
সফরে প্রথম জয়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশের বিপক্ষে বড় স্কোর গড়ার স্বপ্ন ছিলো জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের। প্রথম দুই ওভারে দু’টি চার মেরেছিলেন ওপেনার তিনাসি কামুনহুকামবে। তবে তৃতীয় ওভারে থামতে হয় তাকে। পেসার আল-আমিনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ১০ রান করা কামুনহুকামবে।
এরপর বড় জুটি গড়ার চেস্টা করেন আরেক ওপেনার ব্রেন্ডন টেইলর ও ক্রেইগ আরভিন। চতুর্থ ওভারেই বল হাতে আক্রমনে আসেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা হাসান। প্রথম পাঁচ ডেলিভারিতে মাত্র ১ রান দেন তিনি। ষষ্ঠ বলে স্কুপ করেছিলেন টেইলর। শর্ট ফাইন লেগে থাকা আল-আমিন পেছনে দৌঁড়ে গিয়ে হাত থেকে ক্যাচ ফেলেন। ফলে ৩ রানে জীবন পান টেইলর।
জীবন পেয়ে আরভিনকে নিয়ে বড় জুটির চেষ্টা করেন পুরো সিরিজে সুপার ফ্লপ টেইলর। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ছয় ইনিংসে তার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান ছিলো ১৭। তাই আজ দেখেশুনেই এগোচ্ছিলেন তিনি। তাই পাওয়ার প্লে শেষে মাত্র ৩১ রান পায় জিম্বাবুয়ে।
তবে পাওয়ার প্লের পর রান তোলার গতি বাড়িয়েছেন টেইলর-আরভিন। তাই ১০ ওভার শেষে জিম্বাবুয়ের রান গিয়ে দাড়ায় ৬২তে। দশম ওভারের শেষ বলে জুটিতে হাফ-সেঞ্চুরিও পূর্ণ করেন টেইলর-আরভিন।
তবে ১২তম ওভারের প্রথম বলে টেইলর-আরভিনের জুটি ভাঙ্গেন আফিফ হোসেন। প্রথমবারের মত আক্রমনে এসেই উইকেট শিকার করেন তিনি। ৩টি চারে ৩৩ বলে ২৯ রান করা আরভিনকে শিকার করেন আফিফ। দ্বিতীয় উইকেটে ৫২ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়েন তারা।
আরভিনের পর উইকেটে গিয়ে বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হয়েছেন অধিনায়ক সিন উইলিয়ামস। স্পিনার মেহেদি হাসানের প্রথম শিকার হয়ে ব্যক্তিগত ৩ রানে আউট হন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক।
১৪ দশমিক ২ ওভারে উইলিয়ামস ফিরলে ব্যাট হাতে নামেন সিকান্দার রাজা। ওভারের চতুর্থ বলে জীবন পান তিনি। মিড-অনে রাজার সহজ ক্যাচ ছাড়েন সৌম্য।
জীবন পেয়েও নিজের ইনিংসটি বড় করতে পারেননি রাজা। ২টি চারে ব্যক্তিগত ১২ রান করে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে আউট হন রাজা। দলীয় ৯৬ রানে আউট হন রাজা।
এরপর এক প্রান্ত আগলে রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন টেইলর। দলকে সম্মানজনক স্কোরে পৌঁছে দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেন টেইলর। ৪২তম বলে টি-২০ ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ হাফ-সেঞ্চুরি তুলেন তিনি।
রাজার পর পরের দিকের তিন ব্যাটসম্যান দ্রুত ফিরলেও, দলকে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১১৯ রানের মামুলি সংগ্রহ এনে দেন টেইলর। ৪৮ বলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় অপরাজিত ৫৯ রান করেন টেইলর।
বাংলাদেশের মুস্তাফিজ-আল আমিন ২টি করে এবং সাইফউদ্দিন-মেহেদি-আফিফ ১টি করে উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১২০ রানের সহজ টার্গেটে বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও মোহাম্মদ নাইম। প্রথম তিন ওভার দেখেশুনেই খেলেন তারা। তাই কোন উইকেট না হারিয়ে ১৯ রান পায় বাংলাদেশ। পাওয়া প্লের শেষ ৩ ওভারে ২৫ রান তুলে তারা। তাই ৬ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৪৪ রাসন।
এরপর রানের গতি ধরে রেখেছেন লিটন ও নাইম। তাই ১০ ওভার শেষে বিনা উইকেটে ৭৩ রান পায় বাংলাদেশ। কিন্তু ১১তম ওভারে থেমে যান লিটন-নাইমের একত্রে পথচলা। ওয়ানডে মেজাজে খেলা নাইম ৩৪ বলে ৩৪ রান করে আউট হন। ৫টি চার হাকানো ইনিংসের পথে জিম্বাবুয়ের পেসার ক্রিস এমপফুর শিকার হন নাইম। ৬৪ বলে ৭৭ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন লিটন-নাইম।
নাইমের বিদায়ের পর মারমুখী হয়ে উঠেন ইনফর্ম লিটন। ৩৫তম বলে টি-২০ ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। লিটনের হাফ-সেঞ্চুরির পর ব্যাট হাতে নিজের ব্যাটিং শৈলি দেখান আগের ম্যাচের হিরো সৌম্য সরকার। ২টি ছক্কাও মারেন তিনি। তাই দ্বিতীয় উইকেটে লিটন-সৌম্যর ৩১ বলে অবিচ্ছিন্ন ৪৩ রানের জুটিতে ২৫ বাকী রেখেই জয়ের স্বাদ নেয় বাংলাদেশ।
স্যাচ ও সিরিজ সেরা নির্বাচিত হওয়া লিটন ৪৫ বলে ৮টি চারে ৬০ রানে অপরাজিত থাকেন। পাশাপাশি সৌম্য ১৬ বলে ২টি ছক্কায় ২০ রানে অপরাজিত থেকে জিম্বাবুয়েকে পুরো সফরেই জয় হীন থাকতে বাধ্য করে।
স্কোর কার্ড (টস-বাংলাদেশ) :
জিম্বাবুয়ে ব্যাটিং ইনিংস :
তিনাসি কামুনহুকামবে ক মুশফিক ব আল-আমিন ১০
ব্রেন্ডন টেলর অপরাজিত ৫৯
ক্রেইগ আরভিন ক সৌম্য ব আফিফ ২৯
সিন উইলিয়ামস স্ট্যাম্প মুশফিক ব মেহেদি ৩
সিকান্দার রাজা ক আল-আমিন ব সাইফউদ্দিন ১২
রিচমন্ড মুতুম্বামি ক সৌম্য ব আল-আমিন ১
তিনোতেন্ডা মুতোমবদজি ক নাইম ব মুস্তাফিজ ৩
ওয়েসলি মাধভেরে ক নাইম ব মুস্তাফিজ ০
চার্ল মুম্বা অপরাজিত ১
অতিরিক্ত (লে বা-১) ১
মোট (৭ উইকেট, ২০ ওভার) ১১৯
উইকেট পতন : ১/১২ (কামুনহুকামবে), ২/৬৯ (আরভিন), ৩/৭৬ (উইলিয়ামস), ৪/৯৬ (রাজা), ৫/৯৭ (মুতুম্বামি), ৬/১০৮ (মুতোমবদজি), ৭/১১৩ (মাধভেরে)।
বাংলাদেশ বোলিং :
মুস্তাফিজুর রহমান : ৪-০-২৫-২,
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন : ৪-০-৩০-১,
আল-আমিন হোসেন : ৪-০-২২-২,
হাসান মাহমুদ : ৪-০-২৫-০,
মেহেদি হাসান : ৩-০-১৪-১,
আফিফ হোসেন : ১-০-২-১।
বাংলাদেশ ব্যাটিং ইনিংস :
লিটন দাস অপরাজিত ৬০
মোহাম্মদ নাইম ক কামুনহুকামবে ব এমপফু ৩৩
সৌম্য সরকার অপরাজিত ২০
অতিরিক্ত (বা-১, লে বা-২, ও-৪) ৭
মোট (১৫.৫ ওভার, ১ উইকেট) ১২০
উইকেট পতন : ১/৭৭ (নাইম)।
জিম্বাবুয়ে বোলিং :
ওয়েসলি মাধভেরে : ৩-০-২০-০,
ক্রিস এমপফু : ৩.৫-০-২৭-১ (ও-১),
চার্ল মুম্বা : ৩-০-২৬-০,
চার্লটন টিসুমা : ১-০-১০-০ (ও-১),
সিন উইলিয়ামস : ৩-০-১৬-০ (ও-১),
সিকান্দার রাজা : ২-০-১৮-০ (ও-১)।
ফল : বাংলাদেশ ৯ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : লিটন দাস(বাংলাদেশ)।
সিরিজ সেরা : লিটসন দাস (বাংলাদেশ।
সিরিজ : দুই ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতলো বাংলাদেশ। খবর : বাসস।